অনলাইন ডেস্ক
বরিশাল মহানগর বিএনপি। সাংগঠনিক কার্যক্রম চাঙ্গায় চলতি বছরে প্রাথমিক পর্যায় গঠিত হয় আহবায়ক কমিটি। পর্যায়ক্রমে গতি ফেরাতে সেই কমিটি সক্রিয় ও ত্যাগীদের সমন্বয়ে রুপ নেয় পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে। কেন্দ্র যোগ্যদের স্থান দেয় কমিটিতে। সাহসীকতার সাথে যারা দলের দুঃসময়ে অগ্রভাগ থেকে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের হামলা-মামলা ও নানা ধরণের হয়রানী উপেক্ষা করেও নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদেরকেই মুল্যায়ন করেছে দলের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারনী পর্যায়। সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীলতায় সক্রিয়দের ওপরই নগর বিএনপি’র দায়িত্বভার তুলে দেয়া হয়। দলের ভাবমুর্তি বজায়ে ও সাধারণ মানুষের আস্থা ফেরাতে নানাবিধ নির্দেশনাও দেয়া হয়। নগর বিএনপিতে ত্যাগী ও যোগ্যদের মুল্যায়ন করায় জাতীয়তাবাদী দলের মহানগর শাখা যেন নব-উদ্যোগে প্রাণ-সঞ্চারিত হয়। সেই সাথে উজ্জীবিত হয় কর্মীরাও। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ধীরে ধীরে ফিরে আসে দলের চাঙ্গাভাব।
এ সক্রিয়তার পিছনে রয়েছে দুঃসময়ে কারাবরণ, জীবন ঝুঁকি নিয়ে রাজপথে কর্মসুচী বাস্তবায়নকারী , নানাধরণের হয়রানী ও নিষ্পেষিত নেতাদের অবদান। এক্ষেত্রে দলের কেন্দ্রবিন্দুর পদে দায়িত্ব পান এসব নেতারা। আর ছিটকে পড়েন যারা নিস্ক্রিয় থেকে দলের ক্রান্তিলগ্নে বিমুখ হয়ে পড়েছিলেন। এর মধ্যে অধিকাংশকেই দলের সাংগঠনিক নীতি পরিপহ্নি কার্যক্রমের অভিযোগে বহিস্কারও করেছে দল।
৫ আগস্ট সরকার পতনের পর দীর্ঘ কোণঠাসা থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয় জাতীয়বাদী জনমুখী এ দলটি। সেই সাথে সাংগঠনিক কার্যক্রমেও গতি ফেরে। আর এ সুযোগে পদবঞ্চিত ও নিস্ক্রিয়রাও হঠাতকরে দলে নিজের অবস্থান জানান দিতে সক্রিয়তা প্রমাণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। বিষয়টি নিয়ে নগরজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে, তেমনি নেতিবাচক ধারায় দলের অন্যান্য কর্মীরা মন্তব্য ছুড়েছেন। তাদের দাবি, দলের ক্রান্তিলগ্নে এরা নিস্ক্রিয় ছিলেন। নিজেদের নিরাপত্তায় রেখে মাঠ থেকে সরে গিয়েছিলেন। যারা সক্রিয়ভাবে জীবন ঝুঁকি নিয়ে দলের সাংগঠনিক সক্রিয়তায় কেন্দ্র ঘোষিত নির্দেশ অনুযায়ী রাজনীতির মাঠে সক্রিয় ছিলেন তাদের নিয়ে নগর কমিটি গঠন করা হয়েছে। আর নিস্ক্রিয়রা সুযোগ বুঝে অবস্থান ফেরাতে নগর কমিটির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দলের ভাবমুর্তি বারংবার নেতিবাচক পর্যায়ে ফেলছেন।
যার ফলস্বরুপ সম্প্রতি দুই নিস্ক্রিয় ও পদবঞ্চিত নেতার উদ্যোগে বহিষ্কৃতদের নিয়ে নৈশভোজের আয়োজন করে সেটি স্পস্ট করেছে। মুলত নিজেদের পাল্লা ভারী এমনটাই জানান দিতে এমন কর্মযজ্ঞের আয়োজন করেন তারা বলে জানিয়েছেন নগর বিএনপি’র একাধিক ত্যাগী কর্মী।
তারা জানান, বরিশাল নগর কমিটির সরাসরি বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন তারা। একইসাথে দলের নির্দেশে বহিষ্কৃতদের নিয়ে নৈশভোজে দলের নির্দেশনা অমান্য ও স্বার্থ স্বিদ্ধিতে পায়তারা চালাচ্ছেন। সম্প্রতি বরিশাল ক্লাবের নৈশ ভোজের মাধ্যমে সেটি প্রতীয়মান হয়েছে।
অভিযোগ করে একাধিক কর্মী জানিয়েছেন, ঐ ক্লাবে রাতে নৈশভোজের আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন বরিশালে বিএনপি দুঃসময়ের আ’লীগের সাথে থাকা নেতা কর্মীরা। তার এখন নিজেদেরকে নতুন করে বিএনপির ব্যানারে পরিচিত হতে এই নৈশ ভোজের আয়োজন করেন।
কর্মীদের অভিযোগ করে জানান, বরিশাল মহানগরের সাবেক যুগ্ন আহ্বায়ক একে এম শহীদুল্লাহ ও সাবেক সদস্য সচিব মীর জাহিদ এর উদ্যোক্তা। তবে কে এম শহীদুল্লাহ আগামীতে সাধারণ সম্পাদক হবেন বলে জানান বেশ কয়েকজন।
এদিকে ঐ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথীরা জানিয়েছেন, তারা একে এম শহীদুল্লার নিমন্ত্রনে এখানে এসছেন। তবে কি কারনে এই আয়োজন তা বলতে পারছেন না তারা।
বিষয়টিকে হাস্যকর দাবি করে বরিশাল মহানগর বিএনপির নেতা কর্মীরা জানান, বিগত দিন আ’লীগের সময় আমরা যখন রাস্তায় মিছিল করেছি হামলা মামলার শিকার হয়েছি তখন তারা কোথায় ছিল? এখন তারা নিজেদেরকে প্রকাশ করতে পদ বঞ্চিতদের নিয়ে নৈশভোজের আয়োজন করে।
তারা আরও বলেন, যারা আ’লীগের সময় আতাত করে চলা আ’লীগের দোষর হিসাবে ব্যবসা বানিজ্য করেছেন তারা এখন দলের সু-সময়ে এসে নিজেকে বিএনপি নেতা পরিচয় করিয়ে দিতে মুরগী পোলাও গরুর গোস্তের আয়োজন করেছেন।
আবার তাদের মনোরঞ্জন করার জন্য সাংস্কৃতিক আয়োজনও করেছেন।
সেখানে উপস্থিত ছিলেন বরিশালের বহিষ্কৃত নেতা মীর জাহিদ,সৈয়দ আকবর,আসাদুজ্জামান খসরু,আলতাফ মাহামুদ সিকদার,আনোয়ারুল হক তারিন, হাবিবুর রহমান টিপুসহ বেশ কয়েকজন বহিষ্কৃত নেতা।সেখানে আরো উপস্থিত ছিলেন বরিশাল ১নং যুগ্ন আহ্বায়ক নাসরিন আক্তারের অনুসারীরাও।তবে সেখানে বরিশাল মহানগরের আহবায়ক ও সদস্য সচিব কারও উপস্থিত ছিল না। যাদের নিয়ে নৈশ ভোজের আয়োজন করেছেন তারা বর্তমানে বরিশাল মহানগর ও জেলার কমিটিতে কেউ নেই বলে জানান নগর বিএনপির শীর্ষ দুই নেতা।
তারা আরও জানান, একে এম শহীদুল্লাহ বিগত আ’লীগের সময় কাউন্সিলর ছিলেন। দলের নির্দেশনা উপেক্ষা করে করেছেন নির্বাচন। আর জুলাইয়ের গন-অভ্যুথানের পর আ’লীগ সরকারের পতন হলে বরিশালে দল ত্যাগ ও দলের বহিষ্কৃত নেতারা বিভিন্ন আন্দোলনের মাধ্যমে দলের দিকে ভীড়তে থাকে।
২রা নভেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ২১ আগস্টের মামলা থেকে অব্যহতি পাওয়ায় বরিশালে বহিষ্কৃত নেতারা আলাদাভাবে আনন্দ মিছিল করলে বরিশালে বিএনপির মাঝে দন্ধ প্রকাশ্যে রুপ নেয়। তারপর একে এম শহীদুল্লাহ ও সাবেক সদস্য সচিব মীর জাহিদের পরামর্শে বরিশালে বহিষ্কৃত নেতাদের ও তাদের অনুসারীদের নিয়ে বরিশাল ক্লাবে নৈশভোজের আয়োজন করে ঐ দুইজন।
নগর বিএনপির এক নেতা জানান, ২০১৮ সালে সাবেক বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ইসরাত আক্তার রূপাকে নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি তখন বরিশালে আলোচনা সমালোচনা হয়েছে রুপাকে নিয়ে। ।তাকে বিয়ে করেতে একের পর এক নাটক করে গেছেন তখন তিনি বরিশাল মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি ও প্যানেল মেয়র ছিলেন যার প্রভাবে কে এম শহিদুল্লাহ সাবেক বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ইসরাত আক্তার রূপার ভাইকে মামলা দিয়ে জেলেও পাঠিয়েছেন। এই লেটকু শহীদ। তখন র্যাবের হাতে অস্ত্রসহ আটকও হয়েছিলেন তিনি । রুপার বিরুদ্ধে মনগড়া নিউজ করে একঘরে করে রাখেন শহীদুল্লাহ। এক সময় শহীদুল্লার হুমকি ও বিয়ে করা জন্য চাপ দিলে বিষপান করেন আত্নহত্যার চেষ্টা চালান রুপা। বহিস্কৃত নেতাদের নিয়ে নিস্ক্রিয় নেতার নৈশভোজ বিষয়ে জানতে চাইলে কে এম শহীদুল্লাহ বলেন, আমি ব্যস্ত আছি। পরে কথা বলবো এ বলে ফোন কেটে দেন।
এ-বিষয়ে মীর জাহিদ বলেন, বিগত দিন আমাদের নেতা কর্মীরা মামলা-হামলার শিকার হয়েছেন। আমাদের নেতা কর্মীদের যারা মামলা চালিয়েছেন তাদেরকে দাওয়াত করা হয়েছে। কারন আইনজীবীরা বিনা টাকায় মামলা চালিয়েছেন। তাই তাদের জন্য এ আয়োজন মাত্র। তবে বরিশাল মহানগরের কোন নেতা থাকার বিষয়ে বলেন, দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। তবে কেন আসেনি তা বলতে পারি না।
এ বিষয়ে বরিশাল বিএনপি নেতা ও বরিশাল চীফমেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের সরকারি কৌশলি হাফিজ খান বাবলু জানান, আমাকে যেভাবে জানিয়েছে আমাদের সবাই সেখানে উপস্থিত থাকবেন। সেখানে গিয়ে দেখি তার বিপরীত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল মহানগর সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার জানান, তারা বিগত দিন কোথায় ছিল ? আজ তারা আনন্দ মিছিল করে নৈশভোজ করে কাদের নিয়ে? আমাদের বোধগাম্য নয়। তবে যেদিন রাস্তায় আমি মিছিল করেছি, মাত্র ২৫জন লোক ছিল। আর দলের সুবাদে তারা আলাদাভাবে মিছিল করে নিজদেরকে নতুন করে প্রকাশ করতে চায়। দলের নামে বিতর্কিত কিছু করতে চাইলে তা আমরা হতে দিব না।
তবে এ বিষয়ে বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জান খান ফারুক জানান, আমাদেরকে দাওয়াত দিয়েছে কিন্তু আমাদের সাথে পরামর্শ নিয়ে করে সময় নির্ধারন করতো। আর যেখানে বহিষ্কৃত নেতাদেরও দাওয়াত দেয়া হয়েছে সেখানে আমরা যেতে পারি না। যারা নৈশভোজের আয়োজন করেছে তাদেকে দল থেকে বহিষ্কার করেনি। তারা আমাদের প্রোগ্রামে আসবে তাতে কোন বাঁধা নেই। কিন্তু আলাদাভাবে প্রোগ্রাম করবে কেন তা আমার জানা নেই।
Leave a Reply