নিজস্ব প্রতিবেদক
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিরোধ দীর্ঘকাল গড়িয়ে পড়ছে। দু’পক্ষের অভ্যন্তরীণ বিরোধের শিকার হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এতে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশেও বিঘ্নতা ঘটছে। যার ধরূন ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার বাইরে কোন্দল ছড়িয়ে পড়লে অভ্যন্তরীন প্রভাব পড়ে নেতিবাচক। শিক্ষার স্বাভাবিক গতিও ব্যহত হয়। আর প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে অভিভাবক সহ সচেতন মহলে বিরুপ ধারণা সৃষ্টি হয়। এতে প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্তের পাশাপাশি মারাত্নকভাবে ক্ষতি হয় শিক্ষার্থীদেরও।
আর এমন প্রভাব পড়েছে বরিশালের কারিগরি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইনফ্রা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে। মালিকপক্ষের অভ্যন্তরীণ বিরোধের প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। আবার স্বার্থ হাসিলে ব্যবহার করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদেরও বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাব্যবস্থায় সুফল বয়ে আনছে না। দীর্ঘ বিরোধের জেরে প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায়সই লেগে আছে বিশৃঙ্খলা। দেশের উন্নয়নে ভুমিকা রাখছে এ কারিগরি শিক্ষা । আর এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলার বিপরীতে শিক্ষায় নেতিবাচক প্রভাব বিস্তারে কোন্দল-বিরোধ মোটেও সমীচীন নয় বলে মন্তব্য করেছেন সচেতন মহলের একাধিক নাগরিক।
সম্প্রতি ইনফ্রার দু’মালিক পক্ষের বিরোধ সড়ক অবরোধ অবধি গড়ায়। যদিও অভিযোগ রয়েছে স্বার্থ হাসিলে ব্যবহৃত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা সর্বাত্নক। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিরোধ মেটাতে এখন ব্যবহার করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এমন অভিযোগ ওঠেছে এ প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়ে।
যার ধরূন প্রতিষ্ঠানটির এক মালিক-কে অপসারণে অপর মালিকপক্ষ শিক্ষার্থীদের সড়কে আন্দোলনে নামিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ইনফ্রার অপর পরিচালক ইমরান চৌধুরী। সম্প্রতি একই প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষ মোঃ আমির হোসেন-কে অপসারণে শিক্ষার্থীদের দিয়ে আন্দোলন করিয়েছেন তিনি বলে অভযোগ রয়েছে। যদিও পুলিশ-সেনাবাহিনী সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেন।
এদিকে ওই আন্দোলন ক্ষোভ ও প্রতিবাদে রুপ নেয় প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে। তারা জানান, ইনফ্রা পলিটেনিক ইন্সটিটিউট এর মালিক পক্ষ দুইজন। যার মধ্যে একজন হচ্ছেন, প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ইমরান চৌধুরী অপরজন হচ্ছেন পরিচালক প্রকৌশলী মো: আমীর হোসাইন।
অভিযোগে জানা যায় , এই প্রতিষ্ঠানটি যৌথভাবে প্রতিষ্ঠা করেন ইমরান ও আমির। সেক্ষেত্রে অংশিদারিত্ব দু’জনের সমান। উভয়ের সু-সম্পর্ক সর্বদা বজায় ছিল। কিন্ত অভ্যন্তরীন সিস্টেম পরিচালনায় নেকপর্যায়ে সু-সম্পর্ক বিরোধে রুপ নেয়।
এর-ই ধারাবাহিকতায় আমির-কে অপসারণে তৎপর হয়ে পড়েন ইমরান চৌধুরি। যার ফলস্বরুপ একাধিকবার নানা অভিযোগ এনে তার বিরুদ্বে নানা অপচেষ্টা অব্যাহত রাখেন তিনি। ক্রমেই উভয়ের দ্বন্ধ যত বৃদ্ধি পেতে থাকে ঠক ততই ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রতিষ্ঠানটি। শিক্ষার্থী হ্রাসের পাশাপাশি নিম্নমুখী হয় প্রতিষ্ঠানের অর্জিত সুনামও। বরিশাল তথা দক্ষিণের মধ্যে বেসরকারি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম প্রতিষ্ঠান এটি বলে ফলাফল সহ সর্বদিকের ইতিবাচক ধারায় স্বীকৃতি প্রাপ্ত হয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি ।
কিন্ত অর্জিত সুনাম অক্ষুন্নের বিপরীতে অভ্যন্তরীণ দ্বন্ধে তা ক্রমেই ক্ষুন্নে রুপ নিতে থাকে। আর বিরোধ চলমান থাকায় কোন সুরাহা না হওয়ায় নেতিবাচক সেই ধারাই অব্যাহত রয়েছে। এমন ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের উন্নয়নের স্বার্থ জড়িত গুরুত্বপুর্ণ এ প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌছাবে। সচেতন মহল, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের দাবি, অবিলম্বে চলমান সংকট নিরসনে সংশ্লিস্ট মহলের সুষ্ঠু নজরদারি বৃদ্ধি করা।
এদিকে আমির অভিযোগ করে বলেন, আমাকে প্রতিষ্ঠান থেকে বাদ দিতে নানা ষড়যন্ত্র করছে ইমরা চৌধুরী। ছাত্রজনতা দিয়ে আমার বিরুদ্ধে ইমরান ষরযন্ত্র করে আমাকে উৎখাত করতে নানান অপকৌশল হাতে নিয়েছে। ইমরান দীর্ঘদিন আ’লীগের সাথে রাজনীতি করে আমাকে ইনফ্রা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কোন কার্যক্রম চালাতে দেয়নি। আমাকে আমার প্রতিষ্ঠানের কাছে যেতে দেয়নি। ছাত্র বৈষম্য আন্দোলনের মূখে ইনফ্রা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ পদত্যাগ করে। আমির আরও জানান, ইমরান এতদিন আ’লীগের রাজনৈতিক প্রভাবে ইনফ্রা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট দখল করে এখন সে জামাতের ব্যানারে চলছে। সে ফায়দা লুটার জন্য এসব করছে।
এদিকে ইমরান চৌধুরী আলীগ সরকার সরকারের সময় একটি বই রচিত করেন। যার নাম বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিকল্পনা ২০৫০। আর ওই বইটি শেখ হাসিনার পুত্র জয় কে উৎসর্গ করেন।
ইমরান চৌধুরী জানান, অভিযোগের সত্যতা নেই। আমার বিরুদ্বে মিথ্যা সব অভিযোগ দেয়া হচ্ছে।
এদিকে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ এমএ রহিম বিভাগীয় কমিশনারের কাছে একটি অভিযোগ দিয়েছেন- তিনি বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নতুন নিয়মে এখন থেকে বিভাগীয় কমিশনার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। তাই তার কাছে বিষয়গুলো তুলে সমাধান চেয়েছি।
আমির আরও জানান, সম্প্রতি বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানের সভাপতি অপসারণ করে পরিপত্র জারি হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি মহানগর পর্যায়ে হওয়ায় দেখভালের দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার।
যেহেতু ইনফ্রা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট-টি স্ব-অর্থায়নে পরিচালিত প্রতিষ্ঠান সেক্ষেত্রে ঐ পরিপত্রের আওতায় এই প্রতিষ্ঠান ভুক্ত হয়নি। ধারা ও প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ি- প্রবিধানমালা ২০০৯ এর এসআর নং-২৬৭ এর ৫১ এর ১ ধারায় স্ব-অর্থায়নে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা কমিটি হবে নিন্মরুপ- স্ব-অর্থায়নে কোন ব্যক্তি বা সংস্থা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য নিম্নরূণে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করিয়া বোর্ডের অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করিতে হইবে, যথা- (ক) সভাপতি, প্রতিষ্ঠাতা সংস্থা প্রধান বা তদকর্তৃক মনোনীত ব্যক্তি। (খ) সদস্য-সচিব, প্রতিষ্ঠান প্রধান। (গ) অভিভাবক সদস্য, সভাপতি কর্তৃক মনোনীত ২ (দুই) জন সদস্য যাহাদের মধ্যে অন্ততঃ ১ (এক) জন মহিলাঃ (খ) শিক্ষক প্রতিনিধি, প্রতিষ্ঠান প্রধান কর্তৃক মনোনীত ২ (দুই) জন শিক্ষক। এবং (৪) কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক মনোনীত ১ (এক) জন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি। ২ ধারায় উল্লেখ রয়েছে- বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রবিধান ৩৬ এর লংঘন, বোর্ড বা সরকার কর্তৃক জারীকৃত নির্দেশনা অমান্যকরণ, অদক্ষতা, আর্থিক অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা বা অনুরূপ অন্য কোন কারণে বোর্ড যে কোন সময় ব্যবস্থাপনা কমিটি ভাঙ্গিয়া দিয়া বোর্ড বা সরকার সভাপতি মনোনয়ন দিতে পারিবে। আর মহানগর পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানে বিভাগীয় কমিশনারের দায়িত্বের আওতা জানান দিচ্ছে এই ধারা। ধারায় উল্লেখ রয়েছে- প্রবিধানমালা ২০০৯ এর ধারা ৬ ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ঢাকা গভর্নিং বডি প্রবিধানমালা ২০০৯ (২০১২ পর্যন্ত সংশোধিত) এর ধারা ৬ ও ৮ ধারা অনুযায়ী নিন্মরুপ নির্দেশনা প্রদান করা হইল। তা হচ্ছে,
বেসরকারি মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি/ ম্যানেজিং কমিটি/ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি পদে—
(ক) জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক/ জেলা প্রশাসকের মনোনীত প্রতিনিধি , উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার
(খ) মহানগর এলাকায় বিভাগীয় কমিশনার/ বিভাগীয় কমিশনারের মনোনীত প্রতিনিধি-কে সভাপতির দায়িত্ব প্রদান করা হলো। পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত তারা সংশ্লিস্ট দায়িত্ব প্রদান করবেন।
অর্থাৎ দু’টি ধারা বিবেচনায় স্পস্ট রয়েছে, বেসরকারি মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি/ ম্যানেজিং কমিটি/ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি পদে মহানগর এলাকায় বিভাগীয় কমিশনার অথবা বিভাগীয় কমিশনারের মনোনীত প্রতিনিধি-কে সভাপতির হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এদিকে যেহেতু ইনফ্রা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্ব-অর্থায়নে পরিচালিত প্রতিষ্ঠান সেক্ষেত্রে প্রবিধানমালা ২০০৯ এর এসআর নং-২৬৭ এর ৫১ এর ১ ধারায় উল্লেখিত নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চলবে বলে ধারা সেটিই জানান দিচ্ছে।
Leave a Reply