নিজস্ব প্রতিবেদক // ‘দেশ বাঁচাতে তারুণ্যের সমাবেশ’ কর্মসূচিকে ঘিরে বরিশালে বড় ধরনের শো-ডাউনসহ বিপুল লোকসমাগম ঘটিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার কঠোর বার্তা দিতে চাইছে বিএনপি। বৃহৎ এই রাজনৈতিক দলটির সহযোগী তিনটি সংগঠন ছাত্র-যুব ও স্বেচ্ছাসেবক দল চট্টগ্রাম-বগুড়ার পরে এবার বরিশাল বিভাগীয় শহরে এ কর্মসূচি আয়োজন করেছে। শনিবার (২৪ জুন) বরিশাল শহরের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে (বেলস পার্ক) আয়োজিত সমাবেশ সফল করতে তিনটি সংগঠনের শীর্ষ নেতারা বরিশালে অবস্থান নিয়ে আছেন এবং তারা গত কয়েকদিন ধরে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। অভিযোগ আছে, তারুণ্যের এই সমাবেশ কর্মসূচির স্বপক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালাতে গিয়ে বরিশাল জেলার হিজলাসহ একাধিক স্থানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হামলার শিকারও হয়েছেন। কিন্তু তারপরেও দেশ বাঁচাতে তরুণদের অর্থাৎ নতুন ভোটারদের ঐক্যবদ্ধ করতে ছাত্র-যুব ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সকল বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা নিরালস পরিশ্রুম করে যাচ্ছেন।
এদিকে বিএনপির সহযোগী তিন সংগঠনের সমাবেশ আয়োজনের দিন বরিশালের রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তারা বলছে, এদিন ছাত্র-যুব এবং আ’লীগের নেতাকর্মীরা শহরে শান্তি সমাবেশ করবে।
যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বৃহস্পতিবার বরিশালে অবস্থানকালে আ’লীগ-যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ২৪ জুন মাঠে থাকার নির্দেশ দেন এবং বিএনপি জামায়েতের বিরুদ্ধে সতর্ক থেকে শান্তি সমাবেশ করতে বলেছেন। ফলশ্রুতিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও একই দিনে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিয়ে আছেন।
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, যুবলীগের চেয়ারম্যান স্থানীয় যুবলীগকে ২৪ জুন শান্তি সমাবেশ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। এখানে আওয়ামী লীগ যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবলীগ ও ছাত্রলীগ থাকবে। সেক্ষেত্রে বিএনপি এবং তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা যদি কোনোরুপ সহিংস কর্মকান্ড করে তার কড়া জবাব দেওয়া হবে। তবে বিএনপি যদি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চায় তাতে কোনো বাধা দেওয়া হবে না, জানান স্থানীয় আ’লীগের এই শীর্ষ নেতা।
এক্ষেত্রে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের ভাষ্য হচ্ছে, চট্টগ্রাম ও বগুড়াতে অনুরুপ সমাবেশ করা হয়েছে, সেখানেও কিন্তু আ’লীগ তাদের অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে ঝামেলা করেছে। মূলত আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী কোনো আয়োজন করলেই দলটির নেতাকর্মীরা গায়ে পড়ে গন্ডগোল করছে, যেমনটি বরিশালের ক্ষেত্রে হতে যাচ্ছে।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহীর সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল বলেন, দেশ বাঁচাতে তাদের যে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ তা তরুণ ভোটারদের ঐক্যবদ্ধ করার একটি প্রক্রিয়া। চট্টগ্রাম ও বগুড়াতে অনুরুপ সমাবেশ করে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে, আশা করি বরিশালে বিপরিত কিছু ঘটবে না।
জুয়েল বলেন, দেশে সাড়ে ৪ কোটি ভোটার বেড়েছে, তরুণ এ ভোটাররা গত ১৫ বছরে ভোট দিতে পারেনি। এই সমাবেশের মধ্যদিয়ে তরুণেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন।
এর আগে শুক্রবার সকালে বরিশাল প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেছেন, মানুষের গণতন্ত্র হরণ করা হয়েছে। আমাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। গণতন্ত্র ও দেশের কথা চিন্তা করে যুব ও তরুণরা এগিয়ে এগিয়ে আসছে।
এতে উপস্থিত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম নয়ন, কেন্দ্রীয় ছাত্র দলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল এবং যুবদলের সহ-সভাপতি জাকির হোসেন।
শনিবার বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠনের সমাবেশ এবং একই সময়ে আ’লীগের শান্তি সমাবেশকে কেন্দ্র উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে বরিশাল নগর। যদিও উভয় দলের কর্মসূচিকে ঘিরে নগরীতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্যসহ অপরাপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত থাকছে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম জানান, দুটি রাজনৈতিক দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে ৮০০ পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবে, যাতে করে কোনোরুপ সহিংসতা সৃষ্টি না হয়। এছাড়া উভয় দলের পক্ষ থেকে শান্তি বজায় রাখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে এই রাজনৈতিক কর্মসূচিকে ঘিরে সংঘাত-সহিংসতা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’
Leave a Reply