সূত্রটি আরও জানায়, ব্রয়লার মুরগির বর্তমান দাম অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়তে বাড়তে এখন প্রতি কেজি প্রায় স্বাভাবিক দামের থেকে ১৪০-১৩৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এত বাড়তি দামে ব্রয়লার মুরগি কখনো বিক্রি হয়নি। ব্রয়লারের দাম বাড়ার কারণে এখন বেড়েছে সোনালি ও ককসহ দেশি মুরগির দামও। দেশি মুরগির দাম সাধারণের নাগালের বাইরে গেছে অনেক আগেই।
এদিকে আগামীকাল শুক্রবার থেকে পবিত্র মাহে রমজান শুরু হলেও স্থিতিশীলতা ফেরেনি বাজারে। পণ্যের লাগামহীন দাম বাড়ায় চরম সংকটে পড়েছে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার। রোজগার না বাড়ায় পরিবার নিয়ে শহরে টিকে থাকাটাই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের। পরিবারে একাধিক লোক আয় করেও খরচ মিটাতে সম্ভব হচ্ছে না।
সাধারণ ব্যবসায়ীরা মনে করেন, একশ্রেণির অসাধু চক্র বা বাজার সিন্ডিকেটের জন্য অনেকাংশে দায়ী। তবে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বারবারই বলছে, রমজানে সব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে। দেশে খাদ্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হবে। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন।
তবে দাম কমার সম্ভবনা দেখছেন না বিক্রেতারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মুরগি বিক্রেতা জানান, ‘রোজা এলেই সবকিছুর দাম বাড়ে, এটাই আমাদের দেশের নিয়ম। তবে সেটা কেন বাড়ছে সেটা আমরাও জানি না। আমাদের বাড়তি দাম দিয়ে কিনতে, বাড়তি দাম দিয়ে বেচতে হয়। সবকিছুর দাম বাড়ার সম্ভবনা আছে, কিন্তু কমার কোনো সম্ভবনা নেই।’
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায়। ছাড়া সোনালি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ দাম। গত শুক্রবারও প্রতি কেজি বয়লার বিক্রি হয়েছে ২৫০ টাকা।
ক্রমাগত পণ্যের এ মূল্যবৃদ্ধি বাজারে অস্থিরতা তৈরি করছে। দোকানে দোকানে দাম নিয়ে চলছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের বাগবিতণ্ডা। বিশেষ করে ব্রয়লার মুরগি ও ফার্মের ডিমের দাম বাড়ায় নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত ক্রেতারা কষ্টে পড়ে গেছেন। বেশকিছু ক্রেতা দাম শুনে খালি হাতে ফিরে গেছেন।
ওবায়েদুল্লা প্রথম শ্রেণির অবসরপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা। থাকেন রাজধানীর তিনি আগে এক সঙ্গে পাঁচটি মুরগি কিনলেনও এখন কেনেন দুটি। তিনি বলেন, ‘আমাদের মতো লোক যদি বাজার করতে গিয়ে হিমশিম খায় তাহলে যারা দিন আনে দিন খাই তাদের কী অবস্থা। এটা তো সরকার চিন্তা করে না। তারপরও বলে আমরা উন্নত দেশ, আমরা ভালো আছি, সুখে আছি। সুখে আসলে কারা আছে সেটা আমরা জানিনা। আমাদের মতো লোক প্রথম শ্রেণির ইনকাম হয়েও লবন আনতে পান্তা ফুরাইতেছে।’
আল-আমিন ও হোসেন আলী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। মেসে এক সঙ্গে থাকেন। তারা দৈনিক আমাদের সময়কে বলেন, ‘এখন সপ্তাহে মুরগি নিই দুইদিন। আগে সপ্তাহে ৪-৫ দিনও মুরগি নিতাম। কিন্তু বর্তমানে এতো দাম বেড়েছে, যা আমরা খাইতেই পারিনা। আমাদের মতো ব্যচেলরদের জন্য খুবই সমস্যা হয়ে যাচ্ছে।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিসি) সভাপতি সুমন হালদার বলেন, ‘গুটি কয়েক কর্মকর্তা প্রাণিসম্পদের ইচ্ছাকৃতভাবে করপোরেটের হাতে তুলে দিয়েছে এই পোল্ট্রি শিল্প। যদি প্রান্তিক খামারি, বাজার প্রতিযোগিতা থাকতো তাহলে কখনই ব্রয়ালার মুরগি ৩০০ টাকা দামে খাওয়া লাগতো না। এখনে করপোরেট কোম্পানিগুলো পোল্টি বাচ্চার উৎপাদন কমিয়ে দিয়ে বাজারে সংঙ্কট সৃষ্টি করছে।’
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার মুরগির অযৌক্তিক দাম বাড়ানোর কারণ ব্যাখ্যা দিতে চার প্রতিষ্ঠানকে তলব করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। প্রতিষ্ঠান চারটি হলো_কাজী ফার্মস লিমিটেড, আফতাব বহুমুখী ফার্মস লিমিটেড, সিপি বাংলাদেশ ও প্যারাগণ পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি লিমিটেড।
Leave a Reply