নিজস্ব প্রতিবেদক // বরিশাল নগরীর রুপাতলী এলাকার ব্যবসায়ী শাহীন মোল্লার নিখোঁজ রহস্য উন্মোচন করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। ত্রিশোর্ধ্ব ব্যবসায়ীকে ডেকে নিয়ে হত্যা এবং লাশ গুমের ঘটনায় তিন যুবককে গ্রেপ্তার করেছে এলিট ফোর্স। সেই সাথে ব্যবসায়ী শাহীনের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধারে সক্ষম হয়েছে। ইউসুফ মোল্লা (২০), নাজমুল ইসলাম (১৯) এবং হামিম শিকদার (১৯) নামের এই তিন যুবককে গ্রেপ্তার পরবর্তী জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে শহরের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শাহীন মোল্লার নিখোঁজ রহস্য। গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালি থানাধীন শহরের রুপাতলী কাঁঠালতলা তালুকদার হাউজিং ফার্স্ট লেনের নাহার ভিলা থেকে ওই ব্যবসায়ীর বস্তাবন্দি লাশটি উদ্ধার করতে সক্ষম হয় র্যাব।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র ও র্যাব জানায়, নিহত ব্যবসায়ী শাহীন মোল্লার এলাকায় তালুকদার হাউজিং ফার্স্ট লেনের নাহার ভিলায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে আসছিলেন বরগুনার আমতলী উপজেলার কালিপোরা গ্রামের বাসিন্দা রুহুল আমিনের ছেলে মো. ইউসুফ মোল্লা। তার নববিবাহিতা স্ত্রী স্বর্ণা বিশ্বাসও (১৮) এখানে থাকতেন। একই এলাকায় বসবাসের সুবাদে ব্যবসায়ী শাহীনের সাথে ইউসুফ মোল্লা ও তার স্ত্রী স্বর্ণার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। এবং ২৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. এমদাদুল হক মোল্লার ছেলে ব্যবসায়ী শাহীন সম্প্রতি ইউসুফের স্ত্রী স্বর্ণাকে কুপ্রস্তাব দেন। এতে ইউসুফ ক্ষুব্ধ হয়ে দুই বন্ধু পটুয়াখালীর গন্দামারী গ্রামের মো. রকিবুল ইসলামের ছেলে নাজমুল ইসলাম এবং বরিশালের বানারীপাড়া পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মিজান শিকদারের ছেলে হামিম শিকদারকে নিয়ে শাহীনকে খুনের সংকল্প নেয়।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে এই তিনজন জানিয়েছে, ২৭ জানুয়ারি সকালে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী শাহীনকে ফোন করে তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে ইউসুফ ডেকে নাহার ভিলার ভাড়াটিয়া বাসায় নেয়। এবং সেখানে দুই বন্ধু নাজমুল ও হামিমের সহযোগিতায় রশি গিয়ে গলা শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরবর্তীতে লাশটি বস্তাবন্দি করে সেখানকার বাথরুমের ছাদে লুকিয়ে রাখে এবং ইউসুফ বাসাটি ছেড়ে স্ত্রীকে নিয়ে বিমানবন্দর থানাধীন কাশিপুরের ইছাকাঠিতে অবস্থান নেন।
র্যাব জানায়, ব্যবসায়ী নিখোঁজের ঘটনায় তার নিকট আত্মীয় খালেক হাওলাদার সংশ্লিষ্ট কোতয়ালি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এবং পুরো বিষয়টি উল্লেখ করে ব্যবসায়ী শাহীনের বোন মোসা: শিরিন আক্তার মুন্নি র্যাব বরাবর সাধারণ ডায়েরি সংবলিত একটি অভিযোগ করেন। র্যাব যখন অভিযোগটির তদন্ত করছিল, ঠিক তখনই এই তিন খুনি একত্রিত হয়ে শাহীনের পরিবারের কাছে ফোন করে ২ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
বরিশাল র্যাবের সহকারি পরিচালক (এডি) মো. রবিউল ইসলাম জানান, মোবাইলে ফোনে গত ২ ফেব্রুয়ারি মুক্তিপণ চাওয়ার বিষয়টি শাহীনের পরিবার তাদের অবহিত করে। এর পর র্যাবের টিম তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ফোন করা ব্যক্তির অবস্থান নিশ্চিত হয় এবং ওই দিনই অভিযান চালিয়ে কাশিপুর এলাকা থেকে ইউসুফকে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে জিজ্ঞাসাবাদের তার দেওয়া তথ্যমতে অভিযান চালিয়ে দুই সহযোগী নাজমুল ও হামিমকে গ্রেপ্তারে সফলতা পায় র্যাব।
গ্রেপ্তার তিন যুবক বরিশাল শহরের বিভিন্ন শিক্ষপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী জানিয়ে এই র্যাব কর্মকর্তা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে ইউসুফ, নাজমুল ও হামিম স্বীকার করেছে তারা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী শাহীনকে বাসায় ডেকে নিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে এবং পরবর্তীতে লাশ বস্তাবন্দি করে বাথরুমের ছাদে লুকিয়ে রাখে। ইউসুফের স্ত্রীকে কুপ্রস্তাব দেওয়ার কারণে তারা শাহীনকে খুন করে।
মি. রবিউল ইসলাম জানান, ব্যবসায়ীর নিখোঁজ রহস্য উন্মোচনে যখন কাজ করছিলেন, তখন মুক্তিপণ চেয়ে আসা কলটি অপরাধের গোমর খুলতে সহায়ক হয়েছে। যে কারণে ওই কলের একদিনের মধ্যেই খুনিদের গ্রেপ্তার এবং ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
এই ঘটনায় শনিবার সকালে বরিশাল র্যাব সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুরো ঘটনার আদ্যপান্ত মিডিয়াকর্মীদের কাছে তুলে ধরে র্যাব। এসময় গ্রেপ্তার তিন যুবককেও সাংবাদিকদের মুখোমুখি করা হয়। পরে তাদের সাধারণ ডায়েরিমূলে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সাধারণ ডায়েরিটি হত্যা মামলায় রুপ দেওয়া হয়েছে। এবং গ্রেপ্তার তিন যুবককে আদালতে সোপর্দ করলে তারা বিচারকের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। পরক্ষণে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠিয়ে দেন।
Leave a Reply