এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে স্বাধীনতা অর্জনের ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ। ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ, ৫৬-এর সংবিধান প্রণয়নের আন্দোলন, ৫৮-এর মার্শাল ’ল বিরোধী আন্দোলন, ৬২-এর শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন, ৬৬-এর বাঙালির মুক্তির সনদ ৬-দফার আন্দোলন, ৬৯-এর রক্তঝরা গণঅভ্যুত্থানের পথ পেরিয়ে ৭০-এর ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন সবই বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামের একেকটি গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের মাইলফলক।
এরপর ৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ এবং ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর পাক-হানাদার বাহিনী নির্বিচারে গণহত্যা চালানোর পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেপ্তারের পূর্ব মুহূর্তে বাঙালি জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার মাধ্যমে বাঙালির চূড়ান্ত মুক্তির সংগ্রাম শুরু হয়।
১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ৷ ২৫শে মার্চের মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া হত্যাযজ্ঞের ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশিরা এই দিন থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও দেশ স্বাধীন করার শপথ গ্রহণ করে৷ ঐ রাতেই তৎকালীন পূর্ব বাংলার পুলিশ, ইপিআর ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা শুরু করে প্রতিরোধ যুদ্ধ, সঙ্গে যোগ দেয় সাধারণ মানুষ৷ ৯ মাসের যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ১৬ই ডিসেম্বর অর্জিত হয় স্বাধীনতা৷ জন্ম হয় বাংলাদেশের৷
ইতিহাসের দায় শোধ :
যারা একসময় মন্ত্রী হয়ে গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছেন, যারা অনেক বছর বাংলাদেশের ক্ষমতার কেন্দ্রেবিন্দুতে ছিলেন, সেইসব যুদ্ধাপরাধীদের কারোর বিচার হয়েছে, কারও কারও বিচার চলছে৷ এ পর্যন্ত ছ’জন যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে৷
এরা হলেন, কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মতিউর রহমান নিজামী এবং মীর কাসেম আলী৷ কারাভোগ করার সময় মৃত্যু হয়েছে দু’জনের৷
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৩৯ বছর পর যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫শে মার্চ ট্রাইব্যুনাল, আইনজীবী প্যানেল এবং তদন্ত সংস্থা গঠন করা হয়৷ মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়৷
আব্দুল কাদের মোল্লা
কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড :
২০১৩ সালের ১২ই ডিসেম্বর রাতে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷ মানবতাবিরোধী অপরাধে কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডই বাংলাদেশে প্রথম কার্যকর হওয়া যুদ্ধাপরাধীর শাস্তি৷
মুহাম্মদ কামারুজ্জামান
কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড :
সোহাগপুর হত্যাকাণ্ডের দায়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের মত অনুযায়ী, কামারুজ্জামানের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখে আপিল বিভাগ৷ ২০১৫ সালের ১১ই এপ্রিল কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলি আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলি আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড :
মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলি আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এই দু’জনকে ২২শে নভেম্বর ২০১৫ শনিবার রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে পাশাপাশি দু’টি মঞ্চে ফাঁসি কার্যকর করা হয়৷
মতিউর রহমান নিজামী
মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ড :
মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের আমির ও একাত্তরের বদর বাহিনীর প্রধান মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় ২০১৬ সালের ১১ই মে রাত ১২টা ১ মিনিটে৷
মীর কাসেম আলী
মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ড :
২০১৬ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর রাতে কার্যকর হয় চট্টগ্রামের মীর কাসেম আলীর ফাঁসি৷ জামায়াতের প্রধান অর্থ যোগানদাতা মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, অপহরণ, নির্যাতনের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৪টি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছিল৷
সূত্র: ইন্টারনেট।
Leave a Reply