বুধবার বিষয়টি নিশ্চিত করে সিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের উপ-কমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ আলী হোসেন। এরআগে মঙ্গলবার রাতের দিকে সীতাকুণ্ড থানাধীন ভাটিয়ারি এলাকায় ঢাকামুখী একটি বাস থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ওসি মাঈনুর রহমান চৌধুরী বলেন, গত শনিবার রাতে গ্রেপ্তারের পর পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে হানিফকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় তার সহযোগী ও তৃতীয় লিঙ্গের লোকজন। তাদের ধরতে পুলিশ বিভিন্নভাবে তৎপরতা চালায়। পরে মঙ্গলবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সীতাকুণ্ডে ঢাকাগামী একটি বাস থেকে হানিফ ও তার ভাই ইয়াসিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। হানিফের বিরুদ্ধে থানায় পাঁচটি মামলা রয়েছে।
এর আগে গতকাল সোমবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মৌলভীবাজার রেললাইন সংলগ্ন এলাকা থেকে ফাড়ির ইনচার্জ এসআই শরীফ রোকনুজ্জামানের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া ওয়ারলেস সেটটি পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশের ওপর হামলা, ফাঁড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় একটি এবং ইয়াবাসহ আটকের ঘটনায় আরেকটিসহ মোট দুটি মামলা করে পুলিশ। হামলা মামলায় এজহার নামীয় ১৪ জন ও অজ্ঞাত ২১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মাদক মামলায় হানিফ ও শরীফকে আসামি করা হয়েছে। আটক আটজনকে হামলা ও ভাঙচুর মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গতকাল মঙ্গলবার গ্রেপ্তার আট আসামির তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা হলেন— রাব্বি ইসলাম রবিন প্রকাশ মনি হিজড়া (২২), ফরিদুল ইসলাম প্রকাশ সুন্দরী হিজড়া (২০), বাদশা প্রকাশ ববিতা হিজড়া (১৮), আব্দুল জলিল (২০), দিল মোহাম্মদ (১৮), আব্দুর রহমান (১৮), আকলিমা আক্তার আঁখি (৩৫) ও মো. ইব্রাহিম (২৮)।
উল্লেখ্য, গত শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে চান্দগাঁও থানার মোহরার রেললাইন কেন্দ্রিক মাদক সম্রাট হানিফের আস্তানায় অভিযান চালিয়ে ইয়াবাসহ আটক করে পুলিশ। যদিও হানিফকে ডেরা থেকে আটকের ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়ি থেকে ছিনিয়ে নেয় তার সহযোগীরা।
এসময় পুলিশের সঙ্গে হানিফের হিজড়াবাহিনীরও সংঘর্ষ হয়। ভাইকে ছিনিয়ে নিতে বিশাল হিজড়া বাহিনী নিয়ে কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালায় বোন নাজমা আক্তার নাজু (২২)।
ফাঁড়ি ভাঙচুর করে মাদককারবারি হানিফ ও সহযোগী শরীফকে পুলিশ হেফাজত থেকে ছিনিয়ে নিতে পারলেও দিতে হয়েছে নিজের জীবন। আসামি ছিনিয়ে নেয়ার সময় পুলিশের সঙ্গে হানিফ বাহিনীর সংঘর্ষে গুলিতে গুরুতর আহত হন নাজমা আক্তার নাজু। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে এবং পরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত ৮টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্পর্কে নাজমা চিহ্নিত মাদক কারবারি হানিফের বোন। পটুয়াখালীর মীর্জাগঞ্জের বাসিন্দা হানিফ মোহরার ৯ নম্বর ও ৮ নম্বর রেললাইনকেন্দ্রিক ইয়াবা-মদসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে। এসব কাজে হিজড়া নামধারী (তৃতীয় লিঙ্গের) একটি বাহিনীও রয়েছে তার। সরকারদলীয় কতিপয় নেতাকে ভাগ-বাটোয়ারা দিয়ে অনেকটা নির্বিঘ্নে মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছিল হানিফ। মাদক ও খুনসহ একাধিক মামলা থাকার পরও হানিফ থেকে যায় পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে।
গতকাল সন্ধ্যায় ৯ নম্বর পুলের গোড়ায় হানিফের বাসা থেকে চান্দগাঁও থানার কালুরঘাট ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই রোকনুজ্জামান মাদক কারবারি হানিফ ও শরীফকে ৫ হাজার পিস ইয়াবাসহ আটক করে ফাঁড়িতে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় ‘হিজড়া বাহিনী’সহ সহযোগীরা হামলা চালিয়ে হানিফ ও শরীফকে ছিনিয়ে নেয়।
পরে তারা পুলিশ ফাঁড়িতেও হামলা করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে হানিফ বাহিনীর সংঘর্ষ হলে হানিফের বোন নাজমা গুলিবিদ্ধ হন এবং দুই পুলিশ সদস্যও আহত হন। পরে অতিরিক্ত দাঙ্গা পুলিশ গেলেও হানিফকে আর নিজেদের হেফাজতে নিতে পারেনি পুলিশ।
স্থানীয়রা জানান, ২০২০ সালের অক্টোবরে মৌলভী বাজারের ৯ নম্বর পোল এলাকায় মাদক ব্যবসার অভিযোগে আগেও একবার হানিফকে আটক করেছিল র্যাব সদস্যরা। তবে সেবারও সড়ক অবরোধ ও হামলার মাধ্যমে তাকে ছিনিয়ে নেয় তৃতীয় লিঙ্গের দলসহ তার সহযোগীরা। হানিফের বাবা, ভাই-বোন মাদক কারবারে জড়িত বলে পুলিশ ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
Leave a Reply