
অনলাইন ডেস্ক
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের উন্নীতের নেপথ্যে বড় ভুমিকা পালন করে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। দায়িত্বপ্রাপ্তদের অগ্রসর ভুমিকা পালনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠান সমাদৃতের পাশাপাশি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ অর্জনের দ্বারপ্রান্তে পৌছায় অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীরাও। যার প্রভাব দেশের উন্নয়নে সম্মুখভাবে সহায়তা করে। আর এমনি এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বরিশালের বেগম তফাজ্জেল হোসেন মানিক মিয়া মহিলা কলেজ। প্রতিষ্ঠানটি শুরু থেকে শিক্ষা কার্যক্রমে ইতিবাচক ধারায় উন্নীতের দিকে ধাবিত হচ্ছিল। কিন্ত সম্প্রতি একটি রাজনৈতিক মহলের প্রভাবে ক্রমেই সেই পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। একটি মহলে নানাবিধ অপ-তৎপরতায় ইতিবাচক সব কার্যক্রম ম্লান হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যেও। কলেজের গভর্নিং বডি গঠন নিয়ে মুলত এ জটিলতার শুরু হয়। যা নিয়ে রীতিমত এখন প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ক্ষুন্নে নানা মাধ্যমে অপ-প্রচারও চালানো হচ্ছে।
কলেজ সুত্র জানায়, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ছিলেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক এমপি শিরিন। জুলাই বিপ্লবে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর একটি অভিযোগে তার দলীয় পদ স্থগিত হয়। এরই মধ্যে গত বছরের জুন মাসে নগরীতে থাকা বেগম তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মহিলা কলেজের আহ্বায়ক কমিটির সভাপতি হন শিরিন। প্রায় ৯ মাস ওই পদে দায়িত্ব পালনের পর পূর্ণাঙ্গ গভর্নিং বডি নির্বাচন প্রশ্নে তাকে সভাপতি পদে না রাখার সিদ্ধান্ত নেয় কলেজের শিক্ষক-অভিভাবকসহ গভর্নিং বডির সদস্যরা। সেই অনুযায়ী ঢাকায় পাঠানো প্রস্তাবনায় তার নামও পাঠানো হয়নি কলেজ থেকে। তবু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে তাকেই করা হয়েছে কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি। এ নিয়ে এখন ক্ষুব্ধ কলেজটির শিক্ষক শিক্ষার্থী অভিভাবকরা। আর এনিয়েই প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়ে এখন নানান অপ-তৎপরতা চালানো হচ্ছে। যার দরুন মিথ্যা তথ্য দিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয় বলেও জানায় কলেজ সংশ্লিষ্টরা।
বিষয়টি নিয়ে বিবৃতিতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোকলেচুর রহমান জানান, গত ০৬/০৯/২০২৫ তারিখ কিশোর মজলিশ কমপ্লেক্সের, সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, কার্যনির্বাহী সদস্যবৃন্দ, অভিভাবকবৃন্দ, কলেজ প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য, গণ্যমান্য ব্যক্তিবৃন্দ, কলেজ গভর্ণিং বডির সদস্যবৃন্দ ও শিক্ষকদের নিয়ে পূর্বে ০৫/০৮/২০২৫ খ্রিঃ তারিখে শিক্ষকবৃন্দ সহ অন্যান্য সকলকে নিয়ে যে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল সে বিষয়ে সকলকে ঐক্যবদ্ধ এবং সিদ্ধান্তে অটল থাকার বিষয়ে সজাগ থাকার জন্য একটি অনির্ধারিত আলোচনা হয়। সে আলোচনায় সকল শিক্ষকবৃন্দ বলেন, আমরা কলেজের স্বার্থে বিগত দিনের ধারাবাহিকতায় কলেজে কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিকে সভাপতি পদে না নিয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে কলেজের সভাপতি করার জন্য পুনরায় ঐক্যমত পোষণ করেন।
এখানে কাউকে উপস্থিতি স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করা হয়নি বা জোর খাটানো ও ভয়ভীতি দেখানো হয়নি। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে গভর্ণিং বডি গঠন অনুমোদনের জন্য যে আবেদন পাঠানো হয় সেখানে সভাপতির প্রতিস্বাক্ষর না থাকলে নিয়মমাফিক তা ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তা না করে যার নাম সভাপতি পদে প্রস্তাব করা হয়নি তাকে সভাপতি পদে মনোনয়ন দিয়ে পত্রাদেশ প্রেরণ করে।
তিনি আরও জানান, এ কলেজটি সর্বোচ্চ আর্থিক স্বচ্ছতার সাথে পরিচালিত হচ্ছে। কলেজে একটি টাকা উত্তোলন করতে হলেও সেখানে ব্যয় ভাউচার, নথি, নোট শীট, চেক রেজিষ্টার, চেক বই এবং অধ্যক্ষ ও সভাপতির প্রতিস্বাক্ষরের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করা হয়। সুতরাং সংবাদে কলেজের টাকা তছরুপের যে তথ্য উপস্থাপিত হয়েছে তা সম্পূর্ণ সত্যের অপলাপ মাত্র।
এছাড়া অধ্যক্ষ চাপের মুখে কমিটিতে কাউকে অর্ন্তভুক্ত করেছেন বাস্তবে তা সত্য নয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কলেজটি অত্যন্ত সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও সৎ, যোগ্য সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও প্রাক্তন অধ্যক্ষ দ্বারা বেশিরভাগ সময় পরিচালিত হয়ে আসছে। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় এ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান শিরিন বিভিন্ন মাধ্যমের সুপারিশে এডহক কমিটির সভাপতি হওয়ার পর থেকে দীর্ঘদিনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্ট ও কলেজের মধ্যে বিশৃঙ্খলা ও শিক্ষকদের মধ্যে দলাদলি শুরু হয়।
এদিকে গত ৩১ আগস্ট জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠানো এক চিঠিতে দেখা যায়, তাকেই (শিরিন) সভাপতি করে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। কলেজ পরিদর্শক মো. আব্দুল হাই সিদ্দিক সরদার স্বাক্ষর করেছেন ওই চিঠিতে। যার স্মারক নং ৮৯০১।
প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে কলেজের উন্নয়নসহ সব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকা কমিটির হিতৈষী সদস্য লুৎফর রহমান খান বলেন, ‘জন্মলগ্ন থেকে এই কলেজে গভর্নিং বডির সভাপতি পদে সিংহভাগ সময় দায়িত্ব পালন করেছেন সরকারের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। ৫ আগস্টের পর সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কমিটি বাতিল করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করতে বলা হয়। সে সময় সভাপতি হতে নানাভাবে লবিং করেন বিলকিস জাহান শিরিন। বহু লোকজন দিয়ে আমাদের বলান তিনি। তদবিরে অতিষ্ঠ হয়ে তখন তাকে সভাপতি করা হয়। সেই পদে ৯ মাস পালন করেন দায়িত্ব। এরপর পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার সময় এলে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেই পূর্বের রীতি অনুযায়ী সরকারি কোনো কর্মকর্তাকে সভাপতি করার। গভর্নিং বডির সর্বসম্মতি এবং শিক্ষক-অভিভাবকরাও একমত হন এতে। যদিও শিরিন তাকেই সভাপতি করার আবদার করেছিলেন। কিন্তু অন্য সবাই রাজি হননি। পরে বরিশালের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মো. আহসান হাবিবকে (যুগ্ম সচিব) তালিকার ১ নম্বরে রেখে সভাপতি পদে ৩ জনের নাম প্রস্তাব করি এবং সে ব্যাপারে সবাই একমত হন।’
কলেজ অধ্যক্ষ মো. মোকলেচুর রহমান আরও বলেন, ‘গভর্নিং বডির সভাপতি পদে ৩ জনের নাম প্রস্তাব করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাই আমরা। তালিকার এক নম্বরে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের (সার্বিক) নাম রাখা হয়। জানতে পেরে সভাপতি পদে তার নাম পাঠানোর জন্য চাপ দিয়েছিলেন শিরিন। আমি আমার অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে দেই তাকে। পরে গত ৪ আগস্ট কলেজে এসে বিল ফরম, ব্যয় ফরম, চেকবই, চেক রেজিস্টার এবং কলেজের প্যাড থেকে ৬টি সাদা পাতা ছিঁড়ে নিয়ে যান শিরিন। পরে অন্যান্য কাগজপত্র ফেরত দিলেও কলেজ প্যাডের সাদা পৃষ্ঠাগুলো তিনি আর ফেরত দেননি। এরপর তো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে সভাপতি করে চিঠি পাঠানো হয়।
কলেজের দাতা প্রতিনিধি বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র কেএম শহিদুল্লাহ বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা গভর্নিং বডির সদস্যরা সবাই বসেছিলাম। সদস্যদের কেউ সভাপতি পদে শিরিনকে মানতে রাজি নন। বিষয়টি আমরা একাধিক মাধ্যমে উপচার্যকে জানিয়েছি। এছাড়া কলেজ ও আমাদের নিয়ে মিথ্যা সংবাদে যে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে তার কোন সত্যতা নেই।
এদিকে বিলকিস জাহান শিরিন জানান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এএসএম আমানউল্লাহ বলেন, ‘প্রতিদিন এরকম অসংখ্য কাজ করতে হয়। কিভাবে কি হয়েছে তা তো কাগজপত্র না দেখে বলতে পারব না। আরও কয়েকটি মাধ্যম থেকে এই বিষয়ে অভিযোগ এসেছে। আমি বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে যাচাই-বাছাই করে দেখব। নিয়মের কোনো ব্যত্যয় ঘটলে কলেজের চাওয়া অনুযায়ী সমস্যার সমাধান করা হবে।
Leave a Reply