অনলাইন ডেস্ক
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যথাযথ পরিচালনায় অভ্যন্তরীন প্রশাসন ও তাদের সহযোগীতাকারীদের সমন্বয় অতীব গুরুত্ব বহন করে। এতে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা বজায়ের পাশাপাশি সাফল্যের শীর্ষ চুড়ায় পৌছায় প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে দেশ গড়ার কারিগর হিসেবে যারা নিয়োজিত রয়েছেন তাদেরকেও হতে হয় দক্ষ ও দুরদর্শী। প্রতিষ্ঠান যথা পরিচালনায় অভ্যন্তরীণ কমিটিকেও হতে হয় সক্রিয় ও সমন্বয়ের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ধারার। তবে এর ব্যত্যয় ঘটলে শুধু শৃঙ্খলাতেই বিঘ্ন ঘটেনা ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিক্ষার্থীরাও। শিক্ষক ও কমিটির মধ্যে এ বিবেধ বাধলে এমনটাই প্রতিলক্ষিত হয়। আর কমিটির দিকে যদি অসাধু রাজনৈতিক চক্রের ছোবল লিপ্ত হয় তবে সেই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা যথাযথের বিপরীতে ঘটে অপ্রিতিকর সব নেতিবাচক কার্যধারা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিক্ষকরাও।
আর এমন ঘটনা ঘটেছে বরিশালের আছমত আলী খান (এ.কে) ইনস্টিটিউশনে। স্বৈরাচারী সরকার আওয়ামী লীগের শাসনামলে প্রতিষ্ঠানটিতে অবৈধ ক্ষমতাবলে ছোবল দেয় সিটির সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। তার অনুসারী মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক পদধারী হাসান মাহমুদ বাবুকে অবৈধভাবে সভাপতি পদ প্রদানের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির অপুরণীয় ক্ষতিসাধন করেন সিটির সাবেক ঐ মেয়র।
আর এতে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষাব্যবস্থা পিছিয়ে পড়ার পাশাপাশি প্রধান শিক্ষককে অবৈধভাবে বহিস্কারে চরম জুলুমের দৃষ্টান্ত স্থাপিত করেছে ঐ চক্র। ভুক্তভোগী ঐ স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক জসিম উদ্দিন। ফায়দা লুটতে শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে হাসিল করা হয়েছে ব্যক্তি স্বার্থ। আর এতে প্রধান শিক্ষক জসিমের ক্ষতিসাধন হয় অপূরণীয়। দীর্ঘ ৪ বছর পুর্বে অবৈধপহ্নায় বহিস্কার করে মিথ্যা মামলায় কারাভোগও করানো হয় এ শিক্ষককে। যার পিছনে প্রত্যক্ষ মদদ দেন সিটি সাবেক মেয়র সাদিক বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী।
অভিযোগে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক দায়িত্ব পালনে ছিলেন ইতিবাচক ধারার। একইসাথে প্রতিষ্ঠানকে রেখেছিলেন দুর্নীতি ও অনিয়মমুক্ত। আর এতেই যেন বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায় তার। শিক্ষক জসিমকে নানাভাবে হয়রানীর মধ্য দিয়ে অবৈধভাবে সরিয়ে আধিপত্য বিস্তার করেন মেয়র সাদিক। তার অনুসারীকে দিয়ে নির্বিঘ্ন ও স্বচ্ছ্ব প্রতিষ্ঠানটিকে আখড়ায় পরিণত করেন দুর্ণীতি ও লুটপাটের। যার ধরূন চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ঐ প্রতিষ্ঠানটি ও কর্মরত প্রধান শিক্ষক।
অভিযোগে জানা গেছে, ২০২০ সালের ২৭ জুলাই সাদিকের হস্তক্ষেপে এ,কে ইনস্টিটিউশনের এডহক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন সাবেক আস্থাভাজন মহানগর আ’লীগের যুগ্ম সম্পাদক হাসান মাহমুদ বাবু ওরফে গ্যাস্ট্রিক বাবু।
নির্বাচিত হওয়ার পর ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর পরিকল্পিতভাবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ জসীম উদ্দীনকে মিথ্যা অপবাদে নাটকীয় মামলা সাজিয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। যা ছিলো সম্পূর্ণ বে-আইনি। কারণ প্রধান শিক্ষক এইচ. এম. জসীম উদ্দিন কে বেসরকারি শিক্ষক চাকুরিবিধি ১৯৭৯ এর ১২ ও ১৩ ধারা উপেক্ষা করে সম্পূর্ণ আইন বর্হিভূক্ত ভাবে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের উদ্দ্যেশে সাময়িক বহিষ্কার করা হয় । পরবর্তীতে তাকে স্কুুল ও বাসভবন থেকে জোরপূর্বক বের করে দেয়া হয়।
বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন সংখ্যা: শিম/মা: ১১/১০-১১/২০০৯/১৭১ এ বলা আছে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ম্যানেজিং কমিটির, এ ব্যাপারে এডহক কমিটির সভাপতি আইনী কোনো তোয়াক্কাই করেনি। এখানেই তিনি ক্ষ্যান্ত হননি, রাজনৈতিক প্রভাববিস্তার করে প্রধান শিক্ষক এইচ.এম. জসীম উদ্দিনের নামে বিধিবর্হিভূত একটি অর্থ তছরুপ ফৌজদারি মামলা দায়ের করে।
সরকারি ভাতা গ্রহণভুক্ত কোনো কর্মচারির বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা করতে হলে ওই প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রাধীন অধিদপ্তরের অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু কোনো অনুমতি না নিয়ে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রভাবে শুধু অর্থ আত্মসাৎ এর ফন্দি ফিকির করতেই প্রধান শিক্ষক জসীম উদ্দীনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তাকে কয়েক বছর ধরে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য করে।
এ সবকিছুর পিছন থেকে পরিকল্পনাকারীর ভুমিকায় ছিলেন সাবেক মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ বলে অভিযোগে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক জসিম ।
অভিযোগে আরও জানা গেছে, জসীম উদ্দিনকে স্কুল থেকে বের করে সহকারী শিক্ষক মোসা. আইরীন পারভিনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের আসনে বসানো হয়।
সেই আইরিন পারভিনের বাবা বিএম স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান বামঘরানার রাজনীতির সাথে যুক্ত হওয়ায় সুবাদে সাবেক এমপি বরিশাল জেলা আ’লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ’র ঘনিষ্ঠজন। সেই সুবাদে আইরিনের সাথে কালিবাড়ী রোডের সেরনিয়াবাত ভবনে ছিলো যাতায়াত-নিবিড় সম্পর্ক।
একদিকে তৎকালীন মেয়র সাদিক অপর দিকে এডহক কমিটির সভাপতিতে কখনও হাসান মাহমুদ বাবু আবার কখনও বাবুর স্ত্রী নুপুর নাহার এ যেন আইরিনের কাছে আলাদিনের চেরাগ।
একজন প্রাক্তন ছাত্র অভিভাবক ও স্থানীয় বাসিন্দা প্রতিবেদককে বলেন, সাবেক মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ ও বিদ্যালয়ের সাবেক এডহক কমিটির সভাপতি গ্যাস্ট্রিক বাবু বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আইরিন পারভিনের যোগসাজশে বিদ্যালয়ের ছাত্রদের পড়াশুনা বাদ দিয়ে বিদ্যালয়ের নানা উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডের নামে প্রায় ১ কোটি টাকা আত্মসাত করেছে। আইরিন নিজে বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে শ্রেনীকক্ষের আলো-বাতাস বন্ধ করে ১০-১২ টি স্টল নির্মাণ করে গ্রহীতাদের কাছ থেকে প্রয় ১২ লাখ টাকা উৎকোচ নেয়া, বঙ্গবন্ধুর মুুর্যাল নির্মানের ৩ লাখ, শিক্ষক মিলায়তনের শৌচাগার নির্মাণে ২ লাখ, শিক্ষক মিলনায়তন আধুনিকরণের নামে ৫ লাখ, বঙ্গবন্ধু কর্নার নির্মানে ৩ লাখ, প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষ সুু-সজ্জিত ও বর্ধিতকরণে ৫ লাখ, শিক্ষার্থীদের সাইকেল স্টান্ড নির্মানে ১ লাখ, বিদ্যালয়ের মার্কেটের দোতালার ২টি ব্যাংক ও ১টি রেষ্টুরেন্ট ভাড়া দিয়ে উৎকোচ নিয়েছে ৭ লাখ, বিদ্যালয়ের শতবর্ষী পুরান আসবাবপত্র বিক্রি করে ৫ লাখ, সহকারি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে সাবেক সহকারি প্রধান শিক্ষককে উপদেষ্টা নিয়োগ করে ৭ লাখ টাকা অপচয় করেছে। মোট হিসেব করলে দেখা যায় ২৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আইরিন। এছাড়াও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গেলেও ১৭-১৮ জন নিজের পছন্দসই খন্ডকালীন শিক্ষক ও কর্মচারি নিয়োগের নামে ৭৭ লাখ ৭৬ হাজার টাকার খরচ ভাউচার করেছেন। বিদ্যালয়ে তহবিল থেকে নির্মানকাজসহ বিভিন্ন উন্নয়নের নামে ১ কোটি ৪ লাখ ৯৬ হাজার টাকা ব্যয় করেছে । যা অনেকটাই কাগজে কলমে অপ্রয়োজনীয় বিল ভাউচার। এর সঠিক তদন্ত হলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।
খোঁজখবর নিয়ে দেখা গেছে সাদিকের নির্দেশে স্কুল সংলগ্ন ১১টি স্টল নামমাত্র অ্যাডভান্সে সাদিক ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের লোকজনের মধ্যে ভাগাভাগি হয়।এর মধ্যে এডহক কমিটির সভাপতি হাসান মাহমুদ বাবুর নামে ৩টি, বাবুর শালার নামে ১টি, সাবেক মেয়র সাদেক আব্দুল্লাহর এপিএস সুমন সেরনিয়াবাত এর নামে ৩টি, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এর নামে ১টি, সাবেক সহকারী প্রধান শিক্ষক বশির আহমেদ এর নামে ১টি, অফিস সহকারী জামাল হোসেন এর নামে ১টি বরাদ্দ দেয়া হয়।
এছাড়াও সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ নগরীর কেন্দ্রীয় ঈদগা সংলগ্ন এ কে ইনস্টিটিউশনের সম্পত্তিতিতে তার মায়ের নামে সাহানারা আব্দুল্লাহ ইমাম ভবন নির্মানের জন্য স্কুলের সম্পত্তি রেজিস্ট্রি করে দিতে প্রধান শিক্ষক জসীম উদ্দীনকে ততকালীন সময় চাপপ্রয়োগ করে। কিন্তু জসীম উদ্দীন এতে অপারগতা প্রকাশ করলে সেই থেকেই প্রধান শিক্ষক জসীম উদ্দীনের উপর বেকে বসে সাদিক।
সাদিকের জোরপূর্বক দখল করা প্রায় ২৫ শতাংশ স্কুলের সম্পত্তির উপর ইমাম ভবন নামের ভবনটি নির্মাণাধীন। যা নিয়ে ইতিমধ্যে জট খুলতে শুরু করেছে।
এ বিষয়ে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আইরিন পারভিনের জানান, আমি আত্মসাৎ করিনি। যা কিছু হয়েছে সভাপতির নির্দেশেই হয়েছে। সবকিছুর বিল ভাউচার আছে। সভাপতির বাহিরে আমাদের কিছু করার ছিলনা।
বরিশাল মহানগর ইমাম সমিতির সাধারন সম্পাদক মাওঃ শামসুল আলম বলেন, আমাদেরকে সাবেক মেয়রের মায়ের নামে ইমাম ভবন করে দিতে আগ্রহ প্রকাশ করছে এজন্য আমরা ইমামরা সম্মিতি জানিয়েছি। জবর দখল করে সম্পত্তির উপর ইমামদের জন্য এভাবে ভবন করবে তা কিছুটা সন্দেহ হলেও তখন বিশ্বাস করতে পারিনি। এখন আমরা ওই ভবনের কাছেও কেউ যাইনা। সবমিলিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এটি রক্ষাকরে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে দিতে দরকার দ্রুত সংশ্লিষ্ট সকলের সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করা।
এদিকে প্রতিষ্ঠানটির অন্যান্য শিক্ষকরা জানিয়েছেন, দীর্গজদিন ধরে এ.কে স্কুলে এমন স্বেচ্ছাচারিতা ও দক্ষ প্রধান শিক্ষক জসীম উদ্দিন বিহীন প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। লুটপাট ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়ায় শিক্ষা কার্যক্রমেও বিঘ্নিতা ঘটেছে। আমরা অবিলম্বে সাবেক প্রধান শিক্ষককে বহালের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিতে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসবে এজন্য সংশ্লিস্ট প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
Leave a Reply