অনলাইন ডেস্ক
বরিশালে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু ভরাট ও উত্তোলনের প্রতিবাদ করায় এক সংখ্যালঘু যুবককে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল সাড়ে ১১ টায় নগরীর ১২ নং ওয়ার্ডস্থ খ্রিষ্টান কলোনী এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।
এঘটনায় ভুক্তভোগী ঐ যুবকসহ পুরো পরিবার ভীতসন্তন্ত্র হয়ে পড়েছে। আহত যুবক ডমেনিক ডন মিস্ত্রি (৩৪) । তিনি ঐ এলাকার জন মিস্ত্রির ছেলে ও ওয়ার্ড ছাত্রদলের যুগ্ন আহবায়ক।
ভুক্তভোগী যুবক ডমেনিক অভিযোগে জানান, ১২ নং ওয়ার্ডে রাতের আধারে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু ভরাট ও নদী থেকে উত্তোলনের কাজ পরিচালিত্ হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ড্রেজার নিষিদ্ধ থাকায় আমি এর প্রতিবাদ করতাম। বিএনপি নেতা পরিচয়ে কে এম শহিদুল কবির শহীদ ও তার অনুসারীরা এই ড্রেজার পরিচালনা করছে। প্রতিবাদ করায় তারা বিভিন্ন সময়ে আমাকে হুমকি প্রদর্শন করে আসছিল। এরই ধারবাহিকতায় আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে খ্রিষ্টান কলোনীর সামনে দিয়ে আমি বের হলে সাড়ে ১১ টার দিকে আমার পথরুদ্ধ করে শহিদের অনুসারী ওয়ার্ড ছাত্রদলের আহবায়ক শাহাদাতের নেতৃত্বে সাব্বির, সাদ্দাম, রাকিব, ফেরদৌসসহ আরও কয়েকজন মিলে আমাকে চর-থাপড় মারে। এছাড়া আমার শরীরের বিভিন্ন অংশে পেটায়। এছাড়া তারা আমার কানে জোরে থাপ্পর দিলে আমি গুরুত্বর আঘাত প্রাপ্ত হই। এঘটনায় আমি আমার পরিবারসহ পুরো খ্রিষ্টান কলোনীর বাসিন্দারা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রাত ১০ টার পরই ১২ নং ওয়ার্ডের আমবাঘান এলাকায় ড্রেজার রেখে বালু ভরাট করছে ঐ চক্রটি। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের এ ঘটনায় ইতিপুর্বের শহিদের বিরুদ্ধে একাধিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। তথাপি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ না থাকায় অবৈধ এ কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়িত হচ্ছে ওয়ার্ডজুড়ে। একদিকে সরকারের নির্দেশনা যেমন ব্যহত হচ্ছে তেমনি পরিবেশেরও মারাত্নক ক্ষতিসাধণ হচ্ছে। অবিলম্বে এ ড্রেজার বন্ধে আমরা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
এ বিষয়ে জানতে কে এম শহীদুল কবির শহিদের মুঠোফোনে একাধিকবার সংযোগের চেষ্টা করা হলেও তা ব্যর্থ হয়।
এ বিষয়ে শাহাদাত জানান- কোন পুকুর কিংবা জলাশয় ভরাট করা হচ্ছেনা । তবে একটি ড্রেজার চলছে। ব্যক্তি জমিতে কাজ করার জন্য সেটি ভরাট চলছে। এছাড়া কাউকে কোন মারধর করা হয়নি।
বরিশাল মহানগর বিএনপি’র সদস্য সচিব মোঃ জিয়াউদ্দিন সিকদার বলেন, আমাদের নেতা জনাব তারেক রহমানের স্পষ্ট নির্দেশ দলের নাম ভাঙ্গিয়ে ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হোক এমন অপচেষ্টায় কেউ লিপ্ত থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি প্রশাসনিক ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মোঃ শওকত আলী জানান, সিটি কর্পোরেশন কিংবা পৌরসভা এলাকায় কোন ড্রেজার কিংবা অন্য কোন উপায়ে জলাশয় ভরাট করা যাবেনা । এটি সরকারের নির্দেশ। এটির প্রতিফলন ও অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে আমরা বদ্ধপরিকর। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে বিদ্যমান পরিবেশ আইন- ১৯৯৫ এবং জলাধার সংরক্ষণ আইন- ২০০০ এর বিধান অনুসারে যে কোনো জলাশয় ভরাট নিষিদ্ধ এবং ব্যক্তিগত পুকুর হলেও তা জলাধারের সংজ্ঞাভুক্ত হওয়ায় তা ভরাট করা যাবে না। ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর মহামান্য হাইকোর্ট জলাধার সংরক্ষণ আইন- ২০০০ এর ২ (চ) ধারায় প্রাকৃতিক জলাধারের সংজ্ঞাভুক্ত করে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেন। তার প্রেক্ষিতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বিদ্যমান আইন ও হাইকোর্টের নির্দেশে গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে সব ধরণের পুকুর/জলায়শয় ভরাট বন্ধে গ্যাজেট প্রকাশ করে।
Leave a Reply