এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক মো. হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, টানেলটি দুটি শহরের একটি নগরীতে পরিণত হবে এবং কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মীয়মান প্যাসেজওয়েটি খুব শিগগিরই যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
টানেল নির্মাণের ৯৬ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি কাজ শেষ হয়েছে জানিয়ে হারুনুর রশীদ বলেন, ইতোমধ্যে অ্যাপ্রোচ রোডের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। আমরা আগামী ৫ এপ্রিলের মধ্যে এই টানেলের উল্লেখযোগ্য অংশের নির্মাণকাজ শেষ করার চেষ্টা চালাচ্ছি। তারপরও এটি আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেয়ার জন্য বেশকিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। কারণ টানেল চালুর পূর্ব-প্রস্তুতি হিসেবে আমাদেরকে প্রি-কমিশনিং, কমিশনিং এবং বেশকিছু পর্যায়ের ট্রায়াল সম্পাদন করতে হবে।
প্রকল্প সূত্র জানিয়েছে, ২০২২ সালের ২৬ নভেম্বর প্রথম টিউবের সিভিল কাজ শেষ হয়েছিল এবং ওই দিনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই টিউবের এই টানেলের প্রথম টিউবের পূর্ত কাজ সমাপ্তি উদযাপন উদ্বোধন করেছিলেন।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, দেশের প্রথম টানেলটি এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করবে। একবার টানেলটি চালু হলে, এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের জন্য গেম চেঞ্জার হবে, যা দেশের বাকি অংশের সঙ্গে সংযোগ সমস্যার সমাধান করবে।
প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, ১১ মিটার ব্যবধানে ৩৫ ফুট চওড়া এবং ১৬ ফুট উঁচু দুটি টিউব নির্মাণ করা হয়েছে— যাতে ভারী যানবাহন সহজে টানেল দিয়ে যেতে পারে। নির্মাণাধীন টানেলের দৈর্ঘ্য হবে ৩ দশমিক ৪০ কিলোমিটার এবং ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটারের একটি অ্যাপ্রোচ রোডের পাশাপাশি একটি ৭৪০ মিটার সেতুর সঙ্গে মূল শহর, বন্দর এবং নদীর পশ্চিম দিককে এর পূর্ব দিকের সঙ্গে সংযুক্ত করবে। প্রকল্পের অংশ হিসেবে প্রধান বন্দরনগরী এবং কর্ণফুলী নদীর পশ্চিম পাশকে নদীর পূর্ব দিকে এবং আনোয়ারা উপজেলার সঙ্গে যুক্ত করে মোট ৭৪০ মিটার দৈর্ঘের সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালে প্রথম টানেল টিউবের খনন কাজের উদ্বোধন করেন। তার আগে ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড।
টানেলটি প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়কে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করবে এবং চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার কমিয়ে দেবে।
প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, এই টানেলের যানবাহন ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে চলবে। ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু টানেল। বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ অর্থায়নে টানেল প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। চীনের এক্সিম ব্যাংক দুই শতাংশ সুদে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে এবং বাকি অংশের অর্থায়ন করছে বাংলাদেশ সরকার।
Leave a Reply