উত্তর আফগানিস্তানের সাবেক রেডিও উপস্থাপক ২৪ বছরের এ তরুণী আল জাজিরাকে বলেন, ‘প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে আমরা কোনোভাবে (খাবারের) ব্যবস্থা করে ফেলতে পারি। কিন্তু যখন শিশুরা খাবারের জন্য বায়না ধরে, তখন আমাদের মুখে ভাষা থাকে না তাদের কিছু বলার।’
ফারাহানাজ তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। গত বছরের আগস্টে আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর তিনি চাকরি হারিয়েছিলেন। দরিদ্রতার কারণে তিনি তার পরিবারের ভরণপোষণ নিয়ে চরম সমস্যায় পড়েছেন বলে উল্লেখ করেন।
ফারাহানাজ বলেন, ‘তালেবান যখন কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছিল, তখন আমার বোন সার্জারি থেকে মাত্র সেরে উঠছে। তখনই আমাদের জীবন পাল্টা যায়। সে অনেকটাই ওজন হারায় এবং খাদ্যাভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে।’
তিনি জানান, এ পরিস্থিতিতে তার পরিবার বোনের চিকিৎসার খরচ চালিয়ে নিতে পারছে না।
জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেসের উপ-বিশেষ প্রতিনিধি ড. রমিজ আলাকবারভ বলেন, ‘আফগানিস্তানে অনাহার-অর্ধাহারে থাকা ২ কোটি ৩০ লাখ পরিবারের একটি ফারাহানাজের পরিবার।’
মার্চের শুরুতে এক বিবৃতিতে ড. আলাকবারভ বলেন, ‘আফগানিস্তানে ৯৫ শতাংশ জনগণ পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছে না। এ সংখ্যাটি এতোটাই বেশি যে তা অকল্পনীয়। তথাপি, দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটাই কঠিন বাস্তবতা।’
তিনি জানান, প্রায় শতভাগ গৃহিনী খাদ্যাভাবের সমস্যার মধ্যে রয়েছেন।
ড. আলাকবারভের এসব বর্ণনা যেন ফারাহানাজের পরিস্থিতিকেই প্রতিফলিত করছে।
ফারাহানাজ বলেন, ‘সুদিনে আমি রেডিও উপস্থাপক হিসেবে কাজ করেছি; সেইসঙ্গে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবেও কাজ করতাম। আমার এক ভাই আফগান নিরাপত্তা বাহিনীতে কাজ করতো। আমরা আমাদের পরিবারের আট সদস্যের ভরণপোষণ করতে পারতাম।’
আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর ফারাহানাজের ভাই প্রাণভয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। এতে ফারাহানাজ হয়ে পড়েন পরিবারের একমাত্র উপর্জনকারী।
আফগানিস্তানের পাবলিক হেলথ মন্ত্রণালয় চলতি মাসের শুরুতে জানিয়েছে, দেশটিতে ২০২২ সালে প্রায় ১৩ হাজার ৭০০ নবাগত শিশু ও ২৬ জন মায়ের মৃত্যু হয়েছে।
Leave a Reply