নিজস্ব প্রতিবেদক // ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। দলের সভাপতি ও সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ওই দিনই ভারতে পালিয়ে যান। এরপর দ্রুত আত্মগোপনে চলে যান দেশে থাকা আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতা-কর্মী ও চার মেয়াদের বিভিন্ন সময় দায়িত্বে থাকা সরকারের এমপি-মন্ত্রীরা। তবে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সাবেক সরকারের অনেক এমপি-মন্ত্রীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী অনেক নেতাই এরই মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন।
কিন্তু এখন পর্যন্ত ধরাছোঁয়ার বাইরে গত সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা বৃহত্তর শেখ পরিবারের সদস্যরা। এদিকে বরিশাল আওয়ামী লীগ সাড়ে চার দশক ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর নিয়ন্ত্রণে। হাসানাত আবদুল্লাহর ছেলে বরিশাল সিটির সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এবং আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ছোট ভাই সিটির বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ দেশেই আত্মগোপনে আছেন।
এই সাদিক আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে মানুষের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। তিনি মানুষের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক ছিলেন। দুর্নীতিগ্রস্ত, মাদকাসক্ত সাদিক আব্দুল্লাহ টর্চার চেম্বার তৈরি করেছিলেন বলেও জানা গেছে। স্থানীয়রা জানায়, মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর নকশাবহির্ভূত নির্মাণের কারণ দেখিয়ে বাড়ি ভেঙে দেওয়া, জরিমানার নামে টাকা আদায়, ব্যবসায়ীদের কাছে কমিশন দাবি, ভবন নির্মাতাদের কাছে ফ্ল্যাট দাবি, রাজনৈতিক বিরোধীদের মারধর সহ বহু অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে সাদিকের বিরুদ্ধে। তার নির্দেশে না চললে হয়রানি ও মিথ্যা মামলায় জেল পর্যন্ত খাটাতে হয়েছে অনেককে। পূজা উদযাপন পরিষদের কমিটি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি, বরিশাল ক্লাবও দখল করেছেন তিনি। কিন্তু এত কিছুর পরেও কেউ টুঁ শব্দ করতে পারেনি তার বিরুদ্ধে। তবে তিনি ক্ষমতা হারানোর পর তার বিরুদ্ধে প্রকাশিত হতে শুরু করেছে বরিশালবাসী দীর্ঘদিন ধরে চাপা ক্ষোভ। স্থানীয় এক ব্যবসায়ী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, ‘যদি তার নির্দেশ অনুযায়ী না চলা হতো, তাহলে বুলডোজার দিয়ে আমাদের ভবন ভেঙে দেওয়া হতো।
বরিশালে তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলার সাহস পেত না। সাদিক আব্দুল্লাহ নগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ছয়জন অনুসারী দিয়ে পুরো নগরী পরিচালনা করতেন। নগরের সব হাটবাজার, লঞ্চঘাট, খেয়াঘাট নিয়ন্ত্রণ করতেন তার অন্যতম অনুসারী নগর আওয়ামী লীগের শিল্পবিষয়ক সম্পাদক নীরব হোসেন টুটুল। তিনি সাদিকের চাঁদাবাজির টাকা তুলতেন। বর্তমানে টুটুল ভারতে অবস্থান করছেন। শ্রমিক লীগ নেতা রঈজ আহমেদ মান্না বাস টার্মিনালে চাঁদাবাজি করতেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, চাঁদা না দিলে কাউন্টার বন্ধ করে দেওয়া হতো। এ ছাড়া ছাত্রলীগ নেতা সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত সিটি করপোরেশনের প্ল্যান পাস করানোর বিনিময়ে ঘুষ নিতেন।
তার অনুসারী সংখ্যা ছিল সর্ব মহলে বাদ ছিলোনা বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও সেখানেও ছিলো সক্রিয় কর্মী লিংকন দত্ত । তবে তারা এখন রয়েছে অন্য পরিচয়ে। করছেন আসন্ন বাংলাদেশ নার্সেস এসোসিয়েশন (বিএনএ) বরিশাল জেলা শাখায় সাধারণ সম্পাদক পদে করছেন নির্বাচন ২০২৫। অথচ তিনি ছিলেন অনিয়ম ও দুর্নীতির বরপুত্র বরিশাল সিটির সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ অনুসারী। দেখা গেছে বিভিন্ন সময় সাদিক আব্দুল্লাহ সাথে। তাকে দিতেন ফুলেল শুভচ্ছো। ছিলেন জামায়াত-বিএনপির বিরুদ্ধে। তাদের সন্ত্রাসী আঙ্কা দিয়ে ছিলেন বিভিন্ন ব্যানারে। চাইতেন বিচার। সাদিক আব্দুল্লাহ ছত্রছায়ায় শেবাচিমে ঘরে তুলেছিলো এক নৈরাজ্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, তার অত্যাচারে স্টাফ, রোগী ছিল বোতলবন্দী, তার উপর কখা বলার সাহস করতেন না কেউ। শঙ্কায় রয়েছে ভোটারা। তিনিই কিনা এখন ঘুরে ভেড়ায় সকলের সাথে। তার নামে রয়েছে আরও নানান অভিযোগ। শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাদিকের নাম ভাঙ্গিয়ে করতেন সব অপকর্ম। ভোটারদের মধ্যে চলছে ভয়। কেউ কেউ বলেন, সে আবারও আগের রূপে ফিরতে চালাচ্ছে বিভিন্ন তাল বাহানা। তার থেকে মুক্তি চায়। ভোটার ও রোগীরা। এ ব্যাপারে জানতে তাকে একাদিক ভার তার মুঠো ফোনে ফোন দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের প্রাচীন দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করেছেন ৮৪ বছর বয়সী শান্তিতে নোবেলজয়ী অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. ইউনূস।
Leave a Reply