বরিশালের উজিরপুর উপজেলায় বিএনপি’র নাম ভাঙ্গিয়ে সংখ্যালঘু ৬ পরিবারের জমি দখলের পায়তারা ও মাছ লুটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার জল্লা ইউনিয়নের এঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগীরা হলেন ইউনিয়নে হিরোলাল বাড়ৈ, শুকলাল বাড়ৈ, প্রিয়লাল বাড়ৈ, সবুজ বাড়ৈ, রিপন বাড়ৈ ও পংকজ বাড়ৈ। এ ঘটনায় আদালত ও থানায় পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আসামীরা হলো, জল্লা ইউনিয়নের নিরঞ্জন মল্লিক, নিখিল মল্লিক, সুকুমার বাড়ৈ, সুরেশ হালদার, উজ্জ্বল বাড়ৈ, কালু হাওলাদার ও আনিসসহ অজ্ঞাত আরও ১৫/২০ জন।
ভুক্তভোগীদের মধ্যে হিরোলাল অভিযোগে জানান, দীর্ঘ দেড়’শ বছর যাবত আমাদের পুর্বপুরুষ থেকে ২ একর ২১ শতাংশ জমি ক্রয় ও পৈত্রিক সুত্রে বৈধভাবে ভোগদখলে রয়েছি।
আমাদের সম্পত্তি দখলে ২০০৪ সালে একই গ্রামের ভোলা নাথ মল্লিকের ছেলে নিরাঞ্জন মল্লিক, আমাদের বিরুদ্ধে উজিরপুর সহকারী জজ কোর্টে একটি দেওয়ানি মামলা করেন । যার নং ৫৬/২০০৪ । এরই প্রেক্ষিতে ২৪/০৩/২০১৫ সালে বিজ্ঞ আদালত আমাদের পক্ষে রায় প্রদান করেন।
এদিকে ২০১৬ সালে পুনরায় নিরাঞ্জন মল্লিক উজিরপুর সহকারী জজ কোর্টে মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং ১৫৩/২০১৬ । ঐ মামলার কোন নোটিশ আমার প্রাপ্ত হইনি।
অভিযোগে তিনি আরও জানান,
নোটিশ গায়েব করে মামলা চলমান রাখে নিরঞ্জন মল্লিক। এরই ধারাবাহিকতায় ০৭/০৯/২০২২ তারিখে তারা রায় পেলেও কপিতে স্পষ্ট একতরফা রায় বলে উল্লেখ রয়েছে। পরবর্তীতে একতরফা রায়ের প্রেক্ষিতে ডিগ্রি দিয়ে ভূমি অফিস থেকেও মিউটিশন করে। সেখান থেকেও কোন নোটিশ আমাদের প্রদান করা হয়নি।
এদিকে মিউটেশন করানোর ফলে নিরাঞ্জন মল্লিক একই ইউনিয়নের বাহেরঘাট গ্রামের মো: শহিদুল ইসলামের কাছে ঐ জমি বিক্রি করে দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় মো: শহিদুল ইসলামের স্ত্রী বুলু বেগম, স্থানীয় প্রভাবশালী মো: অনিস ও মো: কালু, শুকুমার বাড়ৈ, শুরেশ হালদার , কালু মল্লিক, নিখিল মল্লিকসহ অজ্ঞাত আরও ৪০/ ৫০ জন মিলে আমাদের ঐ জমি দখলের পায়তারা চালায়।
হিরোলাল আরও জানান, অবৈধভাবে দখলের ঘটনায় আমরা আদালতে সানি মামলা দায়ের করি। যার নং ২০/২০২৪। এছাড়া বিজ্ঞ আদালতের কাছে যে মামলায় নিরাঞ্জন মল্লিক ডিগ্রি নিয়ে মিউটিশন করে জায়গা বিক্রি করে দেয় সেই ডিগ্রি আদালত সাময়িক স্থগিত করেন। নিরঞ্জন মল্লিককে যথাযথ ব্যাখা দেয়ার শর্তে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়।
এদিকে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিএনপি নেতা পরিচয়ে অভিযুক্তদের মধ্যে আরশাদের ছেলে আনিস ও মৃত মোতাহের ছেলে কালু দেশীয় অস্ত্রেসজ্জিত হয়ে আমাদের বিরোধীয় জমির পুকুর থেকে মাছ লুট করে ও বাধা দিতে বেধরক মারধর করে ।
এঘটনায় আমি উজিরপুর থানায় গত ২ ফেব্রুয়ারী ৭ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করি।
এদিকে হিরোলাল আরও জানান, যে দলিল দিয়ে নিরাঞ্জন মল্লিক মামলা করেন তার নং ৯১২, সাল ১৯৪৯ রাজাপুর, ঝালকাঠি সাব-রেজি: অফিস। কিন্ত ঐ নম্বর দাতা ও গ্রহীতা ভিন্ন নামে বলে জানান হিরোলাল। অর্থাৎ একটি ভুয়া মামলা দায়ের করেন তিনি।
তিনি জানান, আমাদের জমি দখলে বিভিন্নভাবে হয়রানী করে আসছে অভিযুক্তদের মধ্যে আনিস ও কালু। তারা বিএনপি নেতা পরিচয়ে আমাদের ওপর পুনরায় হামলা ও প্রাণনাশের হুমকি প্রদর্শন করছে। এ ঘটনায় আমরা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
এদিকে স্থানীয়রা জানান, আনিস ও কালু বিভিন্নসময়ে বিএনপি পরিচয়ে ইউনিয়নজুড়ে দখলসহ অবৈধসব বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে। এদের অবৈধ এসব কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মানও ক্ষুন্ন হচ্ছে। এ বিষয়ে বিএনপি নেতাদের সুদৃষ্টি কামনা করেন তারা।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আনিস ও কালুর সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা ব্যর্থ হয়।
এ বিষয়ে বরিশাল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহিন জানান, কোন দখলবাজদের প্রশ্রয় দেয়া হবে না। যারা দলের নাম ভাঙ্গিয়ে
অবৈধ কর্মকান্ড পরিচালিত করবে তাদের ধরে থানায় দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। একইসাথে আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে আমরাও সেটি যাচাই-বাছাই পুর্বক যথাযথ সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
Leave a Reply