বরিশালে দায়িত্বপালনে ঘটনাস্থলে গিয়ে রোষানলে পড়েছেন এক পুলিশ কর্মকর্তা বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত বুধবার (৫ মার্চ) নগরীর ১০ নং ওয়ার্ডস্থ কেডিসি এলাকায় এঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী পুলিশ কর্মকর্তা কোতয়ালী মডেল থানার এসআই শিহাব উদ্দিন।
অভিযোগে জানা গেছে, নগরীর কেডিসি এলাকায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) বরিশাল অঞ্চলের অফিসে বীজ ও সার ক্যাম্পাসের সার গোডাউনের পূর্ব পাশ সংলগ্ন জায়গায় সীমানা প্রাচীর নির্মানের কাজ শুরু করা হয়। এতে বাধা প্রদান করেন স্থানীয় নুরুল হক নামের এক ব্যক্তি। এ ঘটনায় কোতয়ালী মডেল থানার একটি জিডি করেন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সহকারী পরিচালক (সার) সাঈদ হোসেন। তিনি সেখানে উল্লেখ করেন,
১০নং ওয়ার্ডের কেডিসি এলাকায় বীজ ও সার ক্যাম্পাসের সার গোডাউনের পূর্ব পাশ সংলগ্ন জায়গায় সীমানা প্রাচীর নির্মানের কাজ শুরু করা হয়েছে।
গত ০২/০২/২৫ তারিখ সকাল আনুমানিক সাড়ে ১০ টায় ঠিকাদার মোঃ আঃ হালিম মোল্লা নির্মান শ্রমিকদের নিয়ে কাজ শুরু করলে বাধা প্রদান করেন স্থানীয় নুরুল হক মৃধা। এছাড়া অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজসহ বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করে। এতে আমি থানায় দারস্থ হই।
তিনি আরও জানান, সম্প্রতি আমরা আমাদের জমিতে পুনরায় কাজ শুরু করলে বাধা প্রদান করেন নুরুল হকসহ চরকাউয়ার এক ইউপি সদস্য সোহাগ নামের এক ব্যক্তি ও স্থানীয় মহিলারা। তারা বাধা প্রদানের পর ঘটনা উত্তপ্তের দিকে ধাবিত করছিল। এমুহুর্তে আমি অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শিহাবকে ঘটনা অবহিত করি। তিনি তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে ছূটে আসেন। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সকলকে অনুরোধ জানান।
সাঈদ জানান, স্থানীয়রা পুলিশের অনুরোধে শান্ত না হয়ে উল্টো তদন্তকারী কর্মকর্তা শিহাবের ওপর ক্ষিপ্ত হন। তাকে কাপড় খুলে ফেলারও হুমকি প্রদর্শন করেন। তবে পুলিশ কর্মকর্তা শিহাব একাধিকবার তাদের শান্ত করতে চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়। কিন্ত কাউকে কোন হুমকি প্রদর্শন করেননি তিনি।
তিনি আরও জানান, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের সরকারি প্রতিষ্ঠানের জমির একপার্শ্ব দিয়ে চলাচলের জন্য একটি গেইটের দাবী করে আসছিলেন স্থানীয়রা। এনিয়ে তারা ঢাকায়ও আবেদন করেন। কিন্ত পর্যায়ক্রমে তদন্তে তাদের অন্যত্র চলাচলের পথ থাকায় কর্তৃপক্ষ সেটির অনুমোদন দেয়নি। কিন্ত এর মধ্যেও আমরা কিছু যায়গায় স্থানীয়দের জন্য রেখে কাজ শুরু করছিলাম। তাতেও বাধা প্রদান করেন স্থানীয়রা।
সাঈদ জানান, গত বুধবার ঠিকাদার নির্মাণ শ্রমিক দিয়ে কাজ শুরু করলে স্থানীয়রা ক্ষিপ্ত হয়ে সকলে জড়ো হন। এতে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আমি এসআই শিহাবকে জানালে তিনি শুধু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে আসেন। ১৪৪/১৪৫ ধারা জারি অনুযায়ী সকলকে শান্ত থাকারও পরামর্শ প্রদান করেন। আর এতে তার ওপর অহেতুক ক্ষিপ্ত হন স্থানীয়রা। একপর্যায়ে তারা পুলিশ কর্মকর্তা শিহাবের পরিহিত কাপড় ছিড়ে ফেলার হুমকি দিলে আমি তাকে সেখান থেকে নিয়ে আসি।
এদিকে এসআই শিহাব জানান, আমি ঐদিন অভিযানে ছিলাম। পোশাক পরিহিত ছিলাম না। বিএডিসি থেকে আমাকে উত্তপ্তকর পরিস্থিতি অবহিত করলে তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে ছূটে যাই। বারবার স্থানীয়দের শান্ত থাকার অনুরোধ জানাই। কিন্ত তারা ক্ষ্যন্ত না হয়ে উল্টো আমাকে ভুল বুঝে আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে বিভিন্ন হুমকি প্রদর্শন করে। অথচ তারাই আমাকে অহেতুক ফাঁসাতে বিভিন্ন মহলে মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে।
তিনি আরও জানান, উভয়পক্ষকে শান্তি শৃঙ্খলা বজায়ে বিজ্ঞ আদালত ১৪৪/১৪৫ ধারা জারি করেন। সে মোতাবেকই আমি সকলকে অনুরোধ করি। এছাড়া অভিযোগের সঠিক তদন্ত কার্যক্রমও পরিচালিত করছিলাম। একশ্রেণীর কুচক্রী মহলের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তারা আমাকে হেয় প্রতিপন্নে বিভিন্ন মাধ্যমে অহেতুক মিথ্যা অভিযোগ প্রদান করছে। আমি এর সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাই।
নুরুল হক জানান, আমরা একটু যাতায়াতের গেটে এর জন্য বিভিন্ন দপ্তরে গিয়েও কোন সুরাহা না পেয়ে সর্বশেষ আদালতের স্মরনাপন্ন হই। আদালত আমাদের আবেদন গ্রহণ করে তদন্তের নির্দেশ দেন ও ১৪৪/ ১৪৫ ধারা জারি করেন। কিন্ত পুলিশ একপক্ষ হয়ে কাজ করছে।
এদিকে বিএডিসি কর্মকর্তা সাঈদ আরও জানান, পরিস্থিতি শান্ত করতে এসে উল্টো এসআই শিহাবের ওপরই অহেতুক ক্ষিপ্ত হয় স্থানীয়রা। এছাড়া ঘটনাস্থলে তিনি কোন পক্ষ কিংবা কাউকেই হুমকি প্রদান করেননি। বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য, বরিশাল নগরীর ১০নং ওযার্ডস্থ কেডিসি এলাকাধীন বিএডিসি কর্তৃপক্ষ সীমানা প্রাচীর নির্মানের কাজ শুরু করলে ওই এলাকার মালিকানা ৫ পরিবারসহ প্রায় ২০০ পরিবারের যাতায়াত বন্ধ হওয়ার উপক্রমের অভিযোগ এনে অভিযোগকারীরা বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন চেয়ারম্যান ও জিএম বরাবর চলার একটি গেইট চেয়ে আবেদন করেন।
Leave a Reply