স্টাফ রিপোর্টার
হাফ ভাড়া নিয়ে ঝলকাঠি বাস মিনিবাস মালিক সমিতির একটি পরিবহনে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীকে লাঞ্চিতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এঘটনা জিজ্ঞাসাবাদে গেলে আরও কিছু শিক্ষার্থীকে মারধর করেছে ঐ পরিবহনের হেলপার ও ড্রাইবার বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এঘটনায় গতকাল তওহীদ পরিবহন নামের ঐ গাড়িটি আটকে বিকেল থেকে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। একইসাথে গাড়িটিও ভাংচুর করা হয়। এছাড়া বিচারের দাবি জানিয়ে সুষ্ঠু বিচারসহ ৪ দফা দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত তারা সড়কে অবস্থান করবে বলেও জানান শিক্ষার্থীরা।
এদিকে এঘটনার জের ধরে বরিশালে রুপাতলী শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয় ভাঙ্গচুরের অভিযোগ ওঠে। গতকাল মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ৬ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ইউনিয়নের ব্যাপক ক্ষতিসাধণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, শিক্ষার্থীদের সাথে দ্বন্ধ ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতির তওহীদ নামের একটি পরিবহনের ড্রাইবার ও হেলপারের সাথে। এখানে রুপাতলী শ্রমিক ইউনিয়নের কোন সংশ্লিস্টতা কিংবা ইন্ধন ছিল না। অহেতুক আমাদের কার্যালয় ভাংচুর করে ক্ষতিসাধন করা হয়েছে। অভিযোগে জানা গেছে, ঝালকাঠি বাস মিনিবাস মালিক সমিতির তাওহীদ নামের একটি পরিবহনে বরিশালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন বরিশাল বিএম কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী লিপি আক্তার। পথিমধ্যে ভাড়া চাইলে তিনি আইডি কার্ডসহ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র দেখালেও তর্কে জড়ান বাসের হেলপার ও ড্রাইবার। শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নেয়ার বিধান থাকলেও সেটি না নিয়ে একপর্যায়ে ছাত্রীকে লাঞ্চিত করা হয়েছে বলে জানান সহপাঠীরা। এতে তিনি অন্যান্য শিক্ষার্থীদের বিষয়টি জানালে বরিশালস্থ রুপাতলীতে বাসটি পৌছালে ঐ পরিবহনের ড্রাইবার ও হেলপারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে লিপির সহপাঠীরা। কিন্ত এসময় অন্যান্য শিক্ষার্থীদেরও বাসের হেলপার ও ড্রাইবার মিলে লাঞ্চিত করেন বলে অভিযোগ করেন তারা।
এতে বিকালে সাড়ে ৪ টা থেকে রাত ৮ টা অবধি রুপাতলী গোল চত্বরে বাসটি রেখে ভাংচুর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে এ ঘটনার জের ধরে রুপাতলী শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়ের কয়েকটি কক্ষের আসবাবপত্র ও স্ট্যান্ডে থাকা ৮/১০ ট বাস ভাংচুর করা হয় বলে জানান ইউনিয়ন সংশ্লিষ্টরা। শ্রমিক ইউনিয়নের সচিব বাবলু জানান, আমারা জেনেছি ঝালকাঠি সমিতি’র তওহীদ নামের একটি গাড়ির সাথে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীদের ভাড়া নিয়ে দ্বন্ধ হয়েছে। বিকেল থেকেই তারা ঐ গাড়িটি আটকে ভাংচুর করেছে। কিন্ত সন্ধ্যা গড়াতেই তারা আমাদের অফিসে হকিস্টিকসহ শতাধিক ছাত্রও স্থানীয় আরও কিছু লোক এসে আসবাবপত্র , টিভি ও জানালার গ্লাস ভাংচুর করে। এছাড়া নিচে রাখা মোটরসাইকেল ও স্ট্যান্ডে রাখা ৮/১০টি বাস পিটিয়ে ভাংচুর করেন শিক্ষার্থীরা। যেহেতু বাসটি ঝালকাঠি সমিতি’র। কিন্ত বিনা অপরাধে আমাদের কার্যালয়ে কেন ভাংচুর করা হলো। এ ঘটনায় আমাদের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন। শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক কালাম চৌধুরী জানান, শিক্ষার্থীদের সাথে দ্বন্ধ হয়েছে ঝালকাঠির সমিতি’র গাড়ির সাথে। এখানে আমাদেরতো কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। কেন আমাদের কার্যালয় ও স্ট্যান্ডের অন্যান্য বাস ভাংচুর করা হলো ? এ বিষয়ে আমাদের জানা নেই। শৃঙ্খলা অনুযায়ী চলছে শ্রমিক ইউনিয়ন। এজন্য স্থানীয় কিছু অসাধু ইন্ধনদাতা রয়েছে বলে জেনেছি। প্রশাসনের বাধা উপেক্ষা করে এই হামলা চালায় তারা। আমরা আইনের দ্বারস্থ হব।
বরিশাল বিএম কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ইমাম হাসান জানান, বিকেলে কলেজে অধ্যায়নরত লিপি আক্তার ঝালকাঠি থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে তওহীদ নামের একটি পরিবহনে ওঠেন। এসময় তিনি শিক্ষার্থী আইডি কার্ড দেখালেও হাফ ভাড়া নেয়ার কথা থাকলেও হেলপার ও ড্রাইবার মিলে তাকে লাঞ্চিত করেন। বিষয়টি তিনি আমাদেরকে জানান। গাড়িটি রুপাতলী পৌছালে আমরা নিয়মানুযায়ী ড্রাইবার ও হেলপারকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। কিন্ত তারা আমাদেরকেও লাঞ্চিত করেন। আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়। রিয়াজ নামের একজন শিক্ষার্থীর মাথাও ফেটে যায়। একপর্যায়ে বিচারের দাবিতে বাসটি ভাংচুর ও সড়ক অবরোধ করেন অন্যান্য শিক্ষার্থীরা। কিন্ত শ্রমিক ইউনিয়ন কারা ভেঙ্গেছে এর সাথে আমাদের সংশ্লিষ্টটা নেই। কোন প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় শিক্ষার্থীরা ভাংচুর করেনি। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে আমাদের হাফ ভাড়া ও সদ্বব্যবহার নিশ্চিতকরণসহ যৌক্তিক একাধিক দাবি উপস্থাপন করবো। এদিকে বিকেল ৪টা থেকে রুপাতলী ও আশপাশ এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন পথচারী ও যাত্রীরা। ঘটনার পরপরই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মেট্রোপলিটন পুলিশের বিপুল সংখ্যক সদস্য ও সেনাসদস্য মোতায়েন করা হয়।
এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সাথে বাস স্টাফদের নিয়ে বৈঠকের মধ্য দিয়ে সমঝোতার প্রচেস্টা অব্যাহত রয়েছে।
Leave a Reply