নিজস্ব প্রতিবেদক
জমির মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বে গত রোববার বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির বরিশাল জেলা কার্যালয় ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ ওঠে । এ ঘটনায় সমিতির সদস্যরা ক্ষুব্ধ হয়ে দোষীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করে কঠোর আন্দোলনের পাশাপাশি সারা বরিশালে ওষুধ বিক্রয় সেবা বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। এরই ফলশ্রুতিতে ঐদিন নগরের টাউন হলের সামনে বিক্ষোভ করে অনির্দিষ্টকালের জন্য এ ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। এর আগে বিকেল থেকেই নগরে ৬ সহস্রাধিক ফার্মেসি বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর এতে বিপাকে পড়েন রোগীরা। পুলিশ ও প্রশাসনের আশ্বাস ও ইতিবাচক পদক্ষেপে তারা কর্মসুচী থেকে সরে দাঁড়ান।
এদিকে সমিতি নিয়ে দ্বন্ধের জেরে দায়েরকৃত একটি মামলায় বিজ্ঞ আদালত কোতয়ালী মডেল থানাকে সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী থানার এসআই মাজেদ মামলাটির দায়িত্বভার প্রাপ্ত হন। এর আগে গত ১৬/১০/২৪ তারিখে নিজস্ব জমি দখল করে কেমিস্ট ও ড্রাগিস্ট সমিতি কার্যালয় স্থাপন করে দাবি জানিয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে মামলাটি দায়ের করেন ইকবাল আজম খান নামে একজন প্রিন্টিং ব্যবসায়ী।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঐ মামলায় উভয় পক্ষের সঠিকতা যাচাইয়ে গত এক মাস পুর্বে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন বিজ্ঞ আদালত। যথারীতি এসআই মাজেদ মামলাটির কার্যক্রম শুরু করেন। প্রাথমিক তদন্ত শেষে উভয়পক্ষের জমি’র কাগজপত্র ও দলিল সঠিক আছে কিনা জানতে প্রতিবেদন দাখিলের পুর্বে সাব রেজিস্ট্রি অফিসে চিঠি প্রদান করেন। প্রথমে একপক্ষ ও পরবর্তীতে অন্যপক্ষের দলিলের সঠিকতা যাচাইয়ে দুই দফায় রেজিস্ট্রি অফিসে চিঠি দেন তিনি।
জানা গেছে, সঠিক প্রতিবেদন দাখিলের পুর্বে অবশ্যই দলিল যাচাই জরুরী হওয়ায় পর্যায়ক্রমে এ কার্যক্রমের দিকে অগ্রসর হন মাজেদ। সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে দু’পক্ষের দলিল প্রদানে কালক্ষেপন করায় তদন্ত রিপোর্ট দিতে ধীরগতি হয়। আর এর মধ্যে বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির বরিশাল জেলা কার্যালয় ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ করেন ব্যবসায়ীরা।
একইসাথে তদন্ত রিপোর্টে ধীরগতির দ্বায়ে অহেতুক ব্যবসায়ীরা অভিযোগের তীর ছোঁড়েন এসআই মাজেদের দিকে। যদিও এ ঘটনায় তিনি পুরোটাই যথারীতি দ্রুত গতিতে এগোচ্ছিলেন। সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে দু’পক্ষের জমির দলিল দিতে দেরি করায় তদন্তকারী কর্মকর্তা মাজেদকেও বেঘ পেতে হয়। আর এতে তদন্ত রিপোর্ট দ্রুতগতিতে দাখিলেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।
এদিকে বিষয়টিকে সঠিকভাবে অনুধাবন না করে ব্যবসায়ীরা ও সমিতি তার বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলা ও আসামীদের সাথে যোগসাজসের অহেতুক অভিযোগ উথাপন করে প্রত্যাহারের দাবি জানান। যা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের প্রতিবেদনে উঠে আসে। যদিও অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এর ভিন্ন চিত্র। মুলত সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে যথারীতি দলিল প্রদানে ধীরগতিতেই কালক্ষেপন হয় তদন্ত রিপোর্ট প্রদানে। এক্ষেত্রে এসআই মাজেদের কার্যক্রমে অবহেলা কিংবা কোন যোগসাজশের প্রমাণ মিলছে না। প্রতিবেদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে এমন চিত্রই উঠে এসেছে।
বিষয়টি নিয়ে এসআই মাজেদ জানিয়েছেন, জমির মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বে বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির বিরুদ্ধে দায়ের করা একটি মামলায় তদন্তভার প্রাপ্ত হই। এরপর থেকেই সঠিক তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সব ডকুমেন্ট সংগ্রহ শুরু করি। উভয়পক্ষের মুল দলিলের সঠিকতা যাচাইয়ে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে পরপর দুটি দলিল প্রাপ্তিতে চিঠি প্রদানও করি। সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে এটি প্রাপ্ত হতে দেরী হওয়ায় তদন্ত রিপোর্ট দাখিলেও একটি বিলম্ব ঘটে। সঠিক ও যথাযথ প্রতিবেদন দাখিলে সক্রিয় রয়েছি। দায়িত্ব অবহেলা কিংবা কোন পক্ষের সাথে যোগসাজশ নেই। কারও দ্বারা প্রভাবিত না হয়েই মুল তথ্য উপস্থাপন করে সঠিক প্রতিবেদনে দাখিলের দিকেই লক্ষ্য রাখি। গত ৭ জানুয়ারি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে দুই পক্ষের দলিল ও কাগজপত্র প্রাপ্ত হই।
এদিকে জানা গেছে, কোতোয়ালী মডেল থানায় যোগদানের পর থেকেই এসআই মাজেদ তার ওপর আরোপিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে যাচ্ছেন। যেকোন মামলা কিংবা অভিযোগ প্রাপ্তি হলেই সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত তথ্য উপস্থাপন করে যাচ্ছেন। কোন অপরাধীকে বিচারের আওতার পাশাপাশি নির্দোস অথবা ভুক্তভোগী যাতে সঠিক বিচার পেতে পারেন সেদিকে সতর্ক অবস্থানে নজরদারি রেখেই আরোপিত সব কার্যাদি ইতিবাচক ধারায় সম্পন্ন করে যাচ্ছেন। আর তার সক্রিয় এসব কার্যে মেট্রোপলিটন এলাকায় গুরুত্বপুর্ণ কোতয়ালী মডেল থানায় একজন চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছেন তিনি। তার দুরদর্শীতায় শীগ্রই সন্মাননাও পাচ্ছেন তিনি বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির বরিশাল জেলা কার্যালয় সমিতির কম্পিউটার অপারেটর দেবাশীষ হালদার বলেন, ইকবাল আজম তাঁদের সমিতির ভবনের জমির মালিকানা দাবি করে পর্যায়ক্রমে ২১টি মামলা করেন। গত শনিবার (৪ জানুয়ারি) শেষ রাতে কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির অফিসে ওই হোটেল মালিকের লোকজন জমি দখলের জন্য ভাঙচুর করেন।
অভিযুক্ত প্রিন্টিং ব্যবসায়ী ইকবাল আজম খান জানান, আওয়ামী লীগের আমলে তৎকালীন কাউন্সিলর আক্তারুজ্জামান হিরু নগরের কালিবাড়ী রোডের মাথায় তাঁর ২ শতাংশ জমি দখল করে সেখানে সংগঠনের কার্যালয় বানিয়েছেন। এ নিয়ে তিনি পুলিশ কমিশনার, ডিসি, থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
ইকবাল আজম বলেন, ‘ওই জমি আমার, তাঁরা জোর করে দখল করে রেখেছেন। যে কারণে রোববার ভোররাতে আমার জায়গায় স্থাপন করা একতলা অবৈধ ভবন ভেঙে দখল করেছি। এখন তাঁরা যা করেন, করুন। তাঁদের ঠিকানা তো কাটপট্টি, আমার জমি কেন দখল করবেন?’
উল্লেখ্য, কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট অফিস ভাংচুর ও লুটপাট করায় ৪ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে মামলা দায়ের করেন সমিতি সংশ্লিষ্টরা।
Leave a Reply