অনলাইন ডেস্ক
চলতি বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণভ্যুথানের মধ্য দিয়ে পতন ঘটে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের। এর মধ্য দিয়ে আরেকবার স্বাধীনতার স্বাদ পায় দেশবাসী। দীর্ঘ সময়ে দমন-পীড়ন ও নিপীড়নের অবসান ঘটে সাধারণ শিক্ষার্থী ও জনতার রক্ত ত্যাগে। আর এতে আওয়ামী লীগের বিপরীত দলগুলোও বাধাহীনভাবে রাজনীতি সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে পারছেন। বিশেষ করে বৃহৎ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি দীর্ঘ কোণঠাসার পর রাজনীতিতে সরব হচ্ছে। নেতাকর্মীরাও উজ্জীবিত হয়ে দলের ভাবমুর্তি রক্ষা ও পুন যৌবন ফেরাতে নিরলস কেন্দ্র ঘোষিত নানা জনকল্যাণমুখী কর্মসূচী পুঙ্খানুপুঙ্খ পালন করে যাচ্ছেন। দেশবাসীর আস্থা অর্জনে নানাবিধ উদ্যোগও গ্রহণ করেছেন। কিন্ত এ অর্জনে বাধা হয়ে দাড়াচ্ছেন গুটিকয়েক কর্মী। বিতর্কিত কর্মকান্ডে নিজেদের জড়িয়ে একদিকে যেমন ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে অন্যদিকে আস্থাও ম্লান হচ্ছে।
এমন এক কর্মকান্ডের সৃষ্টি হয়েছে বরিশাল বিএম কলেজের বনমালী গাঙ্গগুলি নামের একটি ছাত্রী নিবাসে। যা নিয়ে নগরজুড়ে তোলপাড় চলছে। নগর বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক আফরোজা খানম নাসরিন অনুমতি ছাড়া ছাত্রী নিবাসে প্রবেশে সাধারণ ছাত্রীদের তোপের মুখে পড়েন।
গত মঙ্গলবার (২৭ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬ টার দিকে এঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাকে দীর্ঘ সময়ে অবরুদ্ধও করে রাখেন। তবে নাসরিন জানিয়েছেন, অবরুদ্ধ নয় শিক্ষার্থীরা চেয়েছিল একটি বিষয় সমাধান করে যেতে এজন্য দীর্ঘ সময়ে অবস্থান নিতে হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের দাবি, তিনি অভ্যন্তরীন বিষয় নিয়ে এখানে হস্তক্ষেপ করতে চাচ্ছেন। একইসাথে নিজের দলীয় প্রভাব খাটিয়ে হেনস্থা করছেন।
ঘটনার পর বিষয়টি শুধু অভ্যন্তরে সীমাবদ্ধ থাকেনি। গতকাল বুধবার (২৮ নভেম্বর) বিচার চেয়ে সেটি গড়িয়েছে সেনাবাহীনি ক্যাম্প পর্যন্ত। ঐ হলের ছাত্রীরা বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে সেনাবাহিনীর সদর কমান্ডারের দ্বারস্থ হয়েছে।
অভিযোগে তারা জানিয়েছেন- আমরা বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন কলেজ, এর শিক্ষার্থী ও কলেজের বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রীনিবাসের আবাসিক ছাত্রীবৃন্দ। দীর্ঘ ৭ (সাত) বছর যাবত এই ছাত্রীনিবাসে বসবাসরত ২০১৭- ২০১৮ শিক্ষাবর্ষের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী সুমনা পারভীন অন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর শারীরিক নির্যাতন ও যৌন নিপীড়নতা এবং একসাথে মোট দুইজনে মিলে বিভিন্ন ভবনের রুম দখল করে থাকতেছে। যেখানে প্রতি রুমে আটজন শিক্ষার্থী রুম শেয়ার করে থাকে।
গত ২৪ নভেম্বর সাধারণ শিক্ষার্থীরা হল তত্ত্ববধায়ককে বিষয়টি অবহিত করে। এর আগেও অসংখ্য বার তাকে হল ত্যাগের জন্য তত্ত্বাবধায়কের কাছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে। কিন্তু কোন এক অজানা কারণে তাকে এখনও হল ত্যাগ করাতে পারেনি।
অভিযোগে শিক্ষার্থীরা আরও জানান- বিভিন্ন সময়ে তার অভিভাবক পরিচয়ে জামান সেলিম জামান নামে এক ব্যক্তি হল সুপার মহোদয়কে বিভিন্ন প্রকার হুমকি প্রদান ও অশ্লীল ভাষায় গাল মন্দ করে ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের অপমান, অপদস্ত করে এবং শ্লীলতাহানির হুমকি প্রদান করে।
সর্বশেষ গত ২০ ও ২৪ নভেম্বর হল কর্তৃপক্ষ তাকে হল ত্যাগের নোটিশ প্রদান করেন। নোটিশ পাওয়া সত্ত্বেও অভিযুক্ত শিক্ষার্থী হল ত্যাগ করেনি।
এমতাবস্থায় ২৬ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬ টায় অভিযুক্তকে হল ত্যাগের জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে। এসময় বরিশাল মহানগর বিএনপি’র ১নং যুগ্ম আহবায়ক আফরোজা খানম নাসরিন বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রীনিবাসে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে ও আমাদের মেয়েদেকে বিভিন্ন প্রকার হুমকি প্রদান করে। যাতে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে হল ত্যাগ না করে। পরবর্তীতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে।
পরবর্তীতে কলেজ কর্তৃপক্ষ গিয়ে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করে। পরবর্তীতে অভিযুক্তকে হল ত্যাগের নির্দেশ প্রদান করেন। নির্দেশ প্রদান করা সত্ত্বেও অভিযুক্ত শিক্ষার্থী এখন পর্যন্ত হল ত্যাগ করেনি। এছাড়াও সে হল ত্যাগ করবে না এই বলেও হুমকি প্রদান করছে। যদি তাকে হল ত্যাগে বাধ্য করা হয় সে তাহলে আত্মহত্যা করবে বলেও জানিয়েছে।
অভিযোগে শিক্ষার্থীরা হলের শান্তি বজায় রাখতে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে হল ত্যাগ না করানোর কোন বিকল্প নেই বলে জানান। উদ্ভূত সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের হুমকি প্রদানকারী অভিযুক্ত ও অভিযুক্তের পক্ষে অবস্থান নেয়ার বিএনপি নেত্রী নাসরিন এবং অভিভাবক পরিচয়দানকারী হুমকি দাতার হাত থেকে রক্ষায় সেনাবাহীনির কমান্ডারের সুদৃষ্টি কামনা করেন তারা।
এদিকে ঘটনা পরবর্তী এক শিক্ষার্থীদের দেয়া অভিযোগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। একটি অনলাইন আইপি টিভিতে দেয়া সাক্ষাৎকারে ঐ শিক্ষার্থী জানান- বিএনপি’র যুগ্ন আহবায়ক এক সপ্তাহ আগে ছাত্রী নিবাসে নেত্রীদল গঠন করতে চান বলে জানান। ঐ সময়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের সমর্থন না পাওয়ায় চলে যান। কারণ বনমালীর কোন শিক্ষার্থীই চায়না কোন রাজনীতি এখানে না থাকুক। যে মেয়েটিকে নিয়ে সমস্যা চলমান রয়েছে, তাকে আমরা সকলেই বলেছি তুমি এখান থেকে চলে যাও।
এ নিয়ে আমাদের অভ্যন্তরে সমস্যা প্রকট হচ্ছিল । এ মুহুর্তে ছাত্রী নিবাসে অনুমতি ছাড়াই নাসরিন ঢুকে পড়েন। কলেজ কর্তৃপক্ষকে আমরা জানালে তারা কাউকে ভিতরে যেতে অনুমতি দেননি বলে জানিয়েছেন। অনুমতি ছাড়া প্রবেশে তোপের মুখে পড়েন তিনি। এতে তার বহিরাগত লোকজন আমাদের দেখে নেয়ারও হুমকি প্রদান করেন।
ঐ ছাত্রী জানান- বিষয়টি আমাদের অভ্যন্তরীন। কলেজ প্রশাসন আছে। সেখানে ওনি আসার কে? বিএনপি’র পরিচয় দিয়ে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। নইলে অনুমতি ছাড়া কেন প্রবেশ করবেন। আমরা তাকে আটকে রেখেছি। ওনি কেন আসবেন? রাজনীতি ছাত্রী নিবাসে আমরা চাইনা। আমরা ঐক্যবদ্ধ রয়েছি, কেউ অবৈধভাবে প্রভাব খাটালে সব শিক্ষার্থীরা আমাদের পাশে আছে।
এ বিষয়ে বরিশাল মহানগর বিএনপি’র যুগ্ন আহবায়ক আফরোজা খানম নাসরিন জানান- আমি শুনেছি, সহকারী হল সুপার জহিরুল ইসলাম নামের একজন শিক্ষক কলেজের অন্ত নামের এক শিক্ষার্থীকে হল ছাড়ার জন্য বিভিন্ন সময়ে চাপ প্রয়োগ করেন। হল না ছাড়ায় তাকে দু’নার মারধর করতেও উদ্যত হন তিনি। আমাকে ওখান থেকে ফোন দিয়ে নানাবিধ সমস্যার কথা জানান সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এতে আমি ওখানে ছুটে যাই। অন্ত নামের ঐ মেয়েটি অসুস্থ্য।
নাসরিন জানান, আমি ওখানের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ছিলাম। সকলের খোঁজখবর নেই। অবরুদ্ধের কোন ঘটনা নেই। শিক্ষার্থীরা বলেছেন, যেহেতু এসেছে সমাধান করে যেতে হবে। অন্ত নামের ঐ মেয়েটি চলে যাবে শেষে এ সিদ্ধান্ত হয়।
তিনি আরও বলেন, শুনেছি সেনাবাহীনির কাছে অভিযোগ দিয়েছে। যেহেতু বিষয়টি কালকে সমাধান হয়েছে। এখানে আবার অভিযোগ কেন দিচ্ছে আমি জানিনা। যারা অভিযোগ দিয়েছে তারা আওয়ামী লীগের মইন তুষারের গ্রুপে রয়েছে। তারা ছাত্রলীগের মেয়ে। সুপর্ণা , আয়শার কল রেকর্ড ছাড়ছে ঐ গ্রুপে। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে।
এ বিষয়ে জানতে বনমালী হলের ছাত্রীনিবাসের তত্ত্বাবধায়ক ড. তাহেরাকে একাধিকবার সংযোগের চেষ্টা করা হলেও তা ব্যর্থ হয়।
এ বিষয়ে বরিশাল বিএম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. তাজুল ইসলাম জানান, পরীক্ষা শেষ হওয়ার অন্ত নামের ঐ শিক্ষার্থীকে চলে যেতে বলা হয়। কিন্ত রুম ছাড়তে না চাওয়ায় শিক্ষক ও অন্যান্য ছাত্রীদের সাথে অন্ত্র উচ্চবাচ্য হয়। এসব শিক্ষার্থীরা মিলে তাকে বহিস্কারের জন্য বলে। এ নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। অনুমতি নিয়ে বিএনপি’র নাসরিন কিভাবে গেলেন ছাত্রী নিবাসে এ প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি দূরে ছিলাম। তিনি অনুমতি নিয়েছেন কি নেন নি, সেটি জানা নেই।
এদিকে সেনাবাহীনির কাছে অভিযোগের বিষয়ে তিনি জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি। এছাড়া আগের দিন অন্ত নামের ঐ মেয়েটি চলে যাবে বলে বিষয়টি সমাধান হয়েছিল বলেও জানান অধ্যক্ষ।
বরিশাল মহানগর বিএনপি’র আহবায়ক মোঃ মনিরুজ্জামান ফারুক জানান, অনুমতি ছাড়া তার (নাসরিন) যাওয়া উচিত হয়নি। যেহেতু কলেজ প্রশাসন রয়েছে। বিষয়টি দলের জন্য বিব্রতকর। আমরা তাকে (সতর্ক) করেছি। তিনি ( নাসরিন) বলেছেন, আর যাবেন না। তিনি (নাসরিন) এটি ঠিক করেননি। শুনেছি সেনাবাহীনির কাছেও অভিযোগ দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
Leave a Reply