ঘটনা ধামাচাপা দিতে ভুক্তভোগী ও স্বজনদের ফোন দিয়ে আকুতি
অনলাইন ডেস্ক
বরিশালে প্রতারণার শিকার হয়ে দায়ের করা মামলায় নানা অপকর্মের অভিযোগে মুলহোতা সেই বশির নানা মহলে দৌরঝাপ শুরু করেছেন। প্রকৃতঘটনা কাউকে না বলাসহ ভুক্তভোগীকে একাধিকবার ফোন ও তাদের বাড়িতে স্বজনদের পাঠিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি অর্থের প্রলোভন দেখিয়েও ঘটনার স্বাক্ষীদের সত্য ঘটনা প্রকাশে মুখ না খুলতে অনুরোধ করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এ অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে। মুলত মুল ঘটনা প্রকাশ্যে চলে আসায় ও সেটি সচেতন মহল সহ আইন শৃঙ্খলা বাহীনির কাছেও স্পস্ট হওয়ায় এমন অপ-তৎপরতা চালাচ্ছেন অভিযুক্ত বশির বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীসহ স্বজন ও এলাকাবাসী।
এদিকে এর আগে প্রতারণার শিকার হয়ে বরিশাল বিজ্ঞ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালতে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও কোটি টাকা আত্নসাতে মামলাটি দায়ের করেন ভুক্তভোগীর ভাই সাইদুল ইসলাম সায়েম। মামলা নং- ১৫৫১/২৪। ভুক্তভোগী হলেন, বরিশাল নগরীর ২৫ নং ওয়ার্ডের মৃত ইছাহাক চৌধুরীর ছেলে মুরাদুল ইসলাম। মুরাদুল ইসলাম অষ্ট্রিয়ায় পাড়ি জমায় দীর্ঘ ১০ বছর পুর্বে। অভিযুক্ত হলো, পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ৭ নং সুর্যমনি ইউনিয়নের সাতবাড়ী-রামনগর গ্রামের আবদুস সালাম হাওলাদারের ছেলে মোঃ বশির উদ্দিন। প্রতারণার মাধ্যমে দুই ভাইয়ের থেকে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়েছেন এই প্রতারক বলে মামলা সুত্রে জানা গেছে। দায়েরকৃত মামলা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আদালত। সম্পর্ক গভীরে নিয়ে দীর্ঘ বছর যাবত সেটিকে পুঁজি করে প্রায় দুই কোটি টাকা আত্নসাতের পুরো বিষয়টি প্রকাশ্যে এনেছেন প্রবাসী মুরাদুলও ।
বর্তমানে অভিযুক্ত বশির নানা মাধ্যমে দৌরঝাপ শুরু করেছেন। গণমাধ্যমকর্মীসহ সংশ্লিস্ট আইনশৃঙ্খলা বাহীনিকে ম্যানেজের অপচেস্টাও চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তথাপি সত্য বিষয়টাকে ধামাচাপা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় এবার ভুক্তভুগী ও তাদের স্বজনদের দ্বারস্থ্য হচ্ছেন অভিযুক্ত বশির বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ।
ভুক্তভোগীর ভাই সাইদুল ইসলাম সায়েম জানান- আমার ভাই মুরাদুল সাথে সম্পর্কের মাধ্যমে প্রতারণা করে বিপুল অর্থ আত্নসাত করেছে বশির। জমি ক্রয়ের নামেও নিয়েছেন মোটা অংকের টাকা। কিন্ত বাস্তবে শুধু আমাদের সাথে প্রতারণাই করে গেছে সে। আমরা উপায়ন্ত না পেয়ে মামলা দায়ের করি। ইতিপুর্বে বিচার চেয়ে মামলা দায়ের করলে আমাদের বিভিন্ন ধরণের হুমকি প্রদর্শণ করে আসছিল বশির। এখন মুল ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় আমাদের কাছে মাফ চাচ্ছে তিনি। তার বড় ভাইকে আমাদের বাড়িতে পাঠিয়ে সমাধানের প্রস্তাব দিচ্ছে। এছাড়া আমাদের অন্যান্য স্বজনদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে মুল ঘটনা আড়ালের চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। আমরা প্রতারনার শিকার হয়ে আইনের দ্বারস্থ্য হয়েছি। আমরা শুধু বিচার চাই।
এদিকে ভুক্তভোগী মুরাদুলের মামাতো ভাই বায়েজিদকে ফোন দিলেও ঘটনা গোপন রাখতে নানান ভাবে ফুসলিয়ে যাচ্ছে বশির বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগী মুরাদুলের মামাতো ভাই বায়েজিদ অভিযোগে জানান- মুরাদুল ভাইয়ের মাধ্যমে বশিরের সাথে আমাদের পরিচয় হয়। বশির প্রায়ই মুরাদুল ভাই দেশে থাকাবস্থায় বরিশালের বাড়িতে আসতেন। আমরা প্রথমে শুনেছি বশির শুধু মুরাদুল ভাউয়ের বন্ধু। কিন্ত বিভিন্ন সময়ে বশিরকে বিপুল অর্থ প্রদানের ফলে একপর্যায়ে বুঝতে পারি তাদের মধ্যে অন্যকোন সম্পর্ক রয়েছে। যেটা বাংলাদেশের আইনে অবৈধ। আমার ভাই নিজেই বলতেন ছেলেদের ওপর তিনি আকৃষ্ট। আর বশিরকে তিনি বিয়ে করেছেন। এসব শুনার পর আমরা বুঝতে পারি বশির ভাইকে মুরাদুল ভাইয়ের দেয়া এত অর্থ প্রদানের কারণ। জানতে পারি, বশি ভাই আজীবন মুরাদুল ভাইয়ের পাশে থাকবেন কোন বিয়ে করবেন না। কিন্ত বশির একপর্যায়ে বিপুল অর্থ আত্নসাত করে মুরাদুল ভাইয়ের সাথে সবধরণের সম্পর্ক বন্ধ করে দেন । আর বিয়ে করেন বলেও জেনেছি। এর আগে জমি ক্রয়ের নামে বিপুল অর্থও নেন বশির। বিলাসবহুল অনেক মোটরসাইকেল , আইফোন, মাসে বিপুল টাকা বশির ও তার গ্রামের বাড়ি বাউফলে থাকা পরিবারকে দিতেন আমার ভাই মুরাদুল। বশিরের এই প্রতারণা ফাঁস হওয়ায় মুরাদুল ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন বশির। এ ঘটনায় মুরাদুল ভাইয়ের বড় সায়েম ভাই বিচার চেয়ে মামলাও দায়ের করেন। এ মামলায় ফেঁসে যাচ্ছেন দেখে এখন বশির ভাই আমাদেরসহ সব স্বজনদের ফোন দিয়ে নানানভাবে ঘটনা কাউকে না জানাতে অনুরোধ করে যাচ্ছেন। আমাকেও মাসখানেক পুর্বে ফোন দিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দিতে একাধিকবার অনুরোধ করেন তিনি। বশির আমাকে ম্যানেজে ব্যর্থ হয়ে একপর্যায়ে অর্থের প্রলোভন দেখায়। আমি তাকে এড়িয়ে যাই। কারণ তিনি আমার ভাইয়ের সাথে প্রতারণা করেছেন। আমি শুধু এর বিচার চাই।
বশিরের আরেক বন্ধু আরিফকেও ফুসলাচ্ছেন তিনি। ভুক্তভোগী মুরাদুলের আরিফের যোগাযোগ থাকায় সম্প্রতি তার কাছে গিয়ে ঘটনা সম্পর্কেও মুখ না খুলতে অনুরোধ করেন বশির।
ভুক্তভোগী মুরাদুল জানান- আমার সাথে সম্পর্কের মাধ্যমে দীর্ঘ ১০ বছরে প্রায় ২ কোটি টাকা আত্নসাত করেছে বশির। ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় আমার ইমো নম্বরে একাধিক ফোন দিয়ে মাফ চাচ্ছে তিনি। আর ঘটনা কাউকে না বলতে অনুরোধ করে যাচ্ছে। আমি শুধু বিচার চাই। আমি প্রতারণার শিকার। এ বিষয়ে আমি সংশ্লিস্ট প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত বশিরের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা ব্যর্থ হয়।
উল্লেখ্য, অভিযুক্ত বশিরের বিরুদ্ধে তার বাড়ি বাউফলে গিয়েও মিলে নানান অপকর্মের তথ্য। ছাত্রলীগ পরিচয়ে এলাকায় দাপুটে চলাফেরা করতেন তিনি। এর প্রভাবে এলাকার বিভিন্ন মানুষকে মারধর, নির্যাতন ও একচেটিয়া মাদকব্যবসা পরিচালনা করতেন বশির বলে জানান বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী। তার বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীসহ পুরো এলাকাবাসী নানা অভিযোগের ফিরিস্তি গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে তুলে ধরেন। যার ভিডিও ফুটেজ ও অভিযোগ সংরক্ষিত রয়েছে।
Leave a Reply