নিজস্ব প্রতিবেদক
বরিশালে এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সভাপতি ও সাবেক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এঘটনায় ইতিমধ্যে মাঠেও নেমেছে তদন্ত কমিটি। সদর উপজেলার রায়পাশা-কড়াপুর ইউনিয়নের মধ্য কড়াপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এলাকাবাসির পক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা , শিক্ষা কর্মকর্তা ও সদর উপজেলা প্রকৌশলীর কাছে লিখিত অভিযোগ দেন দক্ষিণ করাপুর এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রশিদ খলিফার ছেলে মোঃ রুবেল খলিফা।
অভিযোগে তিনি জানান, মধ্য কড়াপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ কোন কার্য নির্বাহী কমিটি নাই। পূর্বের কমিটি ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ জহিরুল ইসলাম রিমন এর দূর্নীতির কারণে কার্য নির্বাহী কমিটির সভাপতি পদত্যাগ করেন। মিরণ আওয়ামী লীগের প্রভাবে দীর্ঘদিন যাবৎ উন্নয়নমূলক কাজের নামে অর্থ আত্মসাৎ করেছে। এর মধ্যে
বিদ্যালয়ের শিশুদের খেলনা সামগ্রী- দোলনা, ব্যালেন্স, স্লিপার নামে মাত্র তৈরী করে যা ব্যবহার অযোগ্য, স্কুলের সংযোগ সড়ক ব্যবস্থা সিডিউল বহির্ভূত, নতুন বেঞ্চ, টেবিল, চেয়ার বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ ও উন্নয়নমূলক চলমান কাজ নিয়ম বহির্ভূতভাবে করে অর্থ আত্নসাতের পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিদ্যালয়ে তদন্ত ছাড়া কোন প্রকার যাতে উন্নয়ন কাজের অর্থ প্রদান করা না হয় এজন্য সংশ্লিস্ট প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন অভিযোগকারী।
এদিকে অভিযোগে পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল তদন্তে নামে সদর উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ কামাল হোসেন। ২০ অক্টোবর তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্তে সরেজমিন পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে তিনি জানান, স্কুলটির অনিয়মের বিষয়ে আমাদের দপ্তরে অভিযোগ আসে। এরই প্রেক্ষিতে সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। যথাযথ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
তদন্তকারী কর্মকর্তা সরেজমিনে গেলে সেখানে স্থানীয় জনতা ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীসহ বাসিন্দারা জড় হতে থাকেন। সাবেক প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি হিসেবে অবৈধভাবে দায়িত্ব পালন করে লাখ লাখ টাকা আত্নসাতের অভিযোগ তুলে অভিযুক্তদের বিচারের দাবি জানান তারা।
রায়পাশা-কড়াপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ কড়াপুরের ৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম মনির শরীফ জানান- বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষিকা নুসরাত ও ২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জহিরুল ইসলাম মিরণ মিলে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়া বানিয়ে ফেলেছে। মিরণ স্থানীয় ২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও আওয়ামী যুবলীগের ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ছিলেন। তিনি দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বিদ্যালয়ের উন্নয়নে বরাদ্দকৃত সব অর্থ তছরুপ করেছেন।
মনির আরও জানান, বিদ্যালয়ের কমিটির সভাপতি শ্রাবনী আক্তার। তিনি না থাকায় অবৈধভাবে মিরন নিজেকে সভাপতি দাবী করে বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দের অর্থ তুলতেন। এছাড়া স্কুলের বেঞ্চ বিক্রি, ড্যানিডা প্রকল্প সরকারি একটি কিন্ত তারা অন্য একটি দেখিয়ে অর্থ তুলেছেন, কম দামের খেলনা ক্রয়, ওয়াশরুমের নির্মাণের নামে বিপুল অর্থ আত্নসাতের করেছেন। আর এসব তিনি সাবেক প্রধান শিক্ষক নুসরাতের যোগশাজসে করেছেন। তাকে নানা অনিয়মের দায়ে বদলী করেন তৎকালীন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন।
মিন্টু নামের এক বাসিন্দা জানান, মিরণ ও সাবেক প্রধান শিক্ষক নুসরাত স্কুলটিকে দুর্নীতির আখড়া বানিয়ে ফেলেছে। স্কূলটিতে নৈশ প্রহরী নিয়োগের নামে তিন জনের কাছ থেকে প্রায় ৫ লাখ টাকা নিয়েছে। আমরা অভিযুক্তদের বিচার চাই।
এদিকে অভিযোগাকারী রুবেল জানান, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগের প্রভাব বিস্তার করে মিরণ মেম্বার স্কুলটিতে একক আধিপত্য সৃষ্টি করে। আর তার সহযোগী হিসেবে ছিলেন সাবেক প্রধান শিক্ষক নুসরাত জাহান। উভয়ের যোগসাজশে স্কুলের সব বরাদ্দ কৃত অর্থ সঠিক উন্নয়নের বিপরীতে লোপাট করেছেন তারা। সঠক পহ্নায় কমিটিও গঠন করতে দেয়নি অভিযুক্তরা। ঘুরে ফিরে মিরণই এককভাবে স্কুলটিতে চালিয়েছেন অবৈধ ক্ষমতার দাপট। নামমাত্র শ্রাবনী আক্তার নামের একজনকে সভাপতি বানিয়ে কাগুজে কলমেই তাকে রাখা হতো। বাস্তবে সব কার্যক্রম ও অবৈধভাবে চেক উত্তোলন করতো মিরণ। যার ফলে উন্নয়নে সরকার থেকে বরাদ্দের সিংহংভাগ অর্থ চলে যেতো তার পকেটে। ফলস্বরুপ বিদ্যালয়ের ওয়াশরুম, শিশুদের খেলনা সামগ্রী , বেঞ্চসহ সব আসবাবপত্র প্রায় এখন অকেজো অবস্থায় পরিণয় হয়েছে। এছাড়া স্কুলের গাছ বিক্রি করেও আত্নসাত করেছেন তিনি। আমরা মিরণ ও সাবেক প্রধান শিক্ষক নুসরাত জাহানের বিচারের দাবি জানাই।
এদিকে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুলের এক সহকারী শিক্ষিকা জানান, প্রধান শিক্ষক নুসরাত ম্যাডামে প্রায়সই ঠিকমত স্কুলে আসতেন না। এছাড়া সরকারি নিষেধ থাকা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পরীক্ষার ফি আদায়ের জন্য আমাদের বলতেন। আমরা এর প্রতিবাদ জানালে আমাদের হুমকি ও অশালীন ব্যবহার করতেন তিনি। তাকে তার অনিয়মের দায়ে অন্যত্র স্কুলে বদলী করা হয়েছে। এছাড়া সভাপতি পরিচয় দেয়া মিরণ ভাইও আওয়ামী লীগ সরকার ৫ তারিখের পতনের আর আসেননি। আমরা মোটকথা একটি জিম্মি দশা থেকে মুক্তি পেয়েছি।
এ-বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত সাবেক প্রধান শিক্ষক নুসরাত জাহানকে ফোন দিলে তিনি কোন কথা বলবেন না বলে জানিয়ে দেন।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত জহিরুল ইসলাম মিরণ জানান, সব মিথ্যা অভিযোগ দেয়া হচ্ছে। কোন অনিয়ম হয়নি। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে।
এদিকে স্কুলের বর্তমান প্রধান শিক্ষক এটিএম রবিউল আলম জানান- আমি যেহেতু নতুন এসেছি পুর্বের কিছুই জানিনা। আমাকে সরকার দায়িত্ব দিয়েছেন শিক্ষার উন্নয়নে। আমি আমার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবো। কোন অনিয়ম দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবোনা।
এ বিষয়ে বরিশাল সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফয়সল জামিল জানান- অভিযোগ প্রাপ্তির পর দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। অভিযুক্তদের মধ্যে একজন আত্নগোপনে ও আরেকজন প্রধান শিক্ষক অনেক আগেই বদলি হয়েছেন। তদন্ত শেষে অভিযোগের সত্যতা পেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply