অনলাইন ডেস্ক
বরিশালে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু ভরাট ও উত্তোলনের ঘটনায় এবার কর্পোরেশনের প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। গতকাল ১২ নং ওয়ার্ডবাসীর পক্ষে কিছু সংখ্যক সচেতন ব্যক্তি প্রশাসক বিভাগীয় কমিশনারের কাছে এ অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগে তারা জানান, আমরা বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ১২ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানের মত ১২ নং ওয়ার্ডেও নানা ধরণের বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। একইসাথে বিএনপি নেতা পরিচয়ে অবৈধ সব কার্যক্রম সংঘটিত হচ্ছে। যার ধরুণ সরকারের আইন অমানাসহ সাধারণ মানুষ নানাভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন। আইন অনুযায়ী বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকায় পুকুর-জলাশয় ভরাট নিষিদ্ধ রযেছে।
একই সাথে পরিবেশ আইন ২০০০ ও সংশোধিত ২০০৫ অনুসারে- কোনো পুকুর বা জলাশয় ভরাট দণ্ডনীয় অপরাধ, এমনকি নিজ সম্পত্তি হলেও তা করা যাবে না। কিন্তু কথিত বিএনপি নেতা পরিচয়ে আইনের কোনো তোয়াক্কা না করে রাতের আধারে গোপনে প্রশাসনের আড়ালে পুকুর-জলাশয়, খাল ভরাটের মাধ্যমে দখল ও অবৈধ এ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আমরা জানতে পেরেছি, বিএনপি নেতা পরিচয়ে কেএম শহিদুল্লাহ শহীদ নামের এক ব্যক্তি ও তার অনুসারীরা অবৈধ ড্রেজিং এর ব্যবসা পরিচালনা করছেন। আমরা প্রতিবাদ করলে ভার পক্ষ থেকে নানাভাবে হুমকিও দেয়া হচ্ছে।
যেহেতু সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ড্রেজিং নিষিদ্ধ সেহেতু আইন অমান্য করে পরিবেশ ও সাধারণ মানুষের ক্ষতিসাধণ করা কোন বাক্তির কাছ থেকে কাম্য নয়। বিষয়টি বিবেচনাপূর্বক অবৈধ ড্রেজিং বন্ধ ও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সুদৃষ্টি কামনা করেন তারা।
এদিকে অভিযোগে আরও জানা গেছে, ১২ নং ওয়ার্ডে ড্রেজার দিয়ে বালু ভরাট ও উত্তোলনের প্রতিবাদ করায় এক সংখ্যালঘু যুবককে মারধর করে ড্রেজার পরিচালনাকারীরা। আহত যুবক ডমেনিক ডন মিস্ত্রি (৩৪) । তিনি ঐ এলাকার জন মিস্ত্রির ছেলে ও ওয়ার্ড ছাত্রদলের যুগ্ন আহবায়ক। ভুক্তভোগী যুবক ডমেনিক অভিযোগে জানান, ১২ নং ওয়ার্ডে রাতের আধারে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু ভরাট ও নদী থেকে উত্তোলনের কাজ পরিচালিৎ হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ড্রেজার নিষিদ্ধ থাকায় আমি এর প্রতিবাদ করতাম। বিএনপি নেতা পরিচয়ে কে এম শহিদুল কবির শহীদ ও তার অনুসারীরা এই ড্রেজার পরিচালনা করছে। প্রতিবাদ করায় তারা বিভিন্ন সময়ে আমাকে হুমকি প্রদর্শন করে আসছিল। এরই ধারবাহিকতায় আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে খ্রিষ্টান কলোনীর সামনে দিয়ে আমি বের হলে সাড়ে ১১ টার দিকে আমার পথরুদ্ধ করে শহিদের অনুসারী ওয়ার্ড ছাত্রদলের আহবায়ক শাহাদাতের নেতৃত্বে সাব্বির, সাদ্দাম, রাকিব, ফেরদৌসসহ আরও কয়েকজন মিলে আমাকে চর-থাপড় মারে। এছাড়া আমার শরীরের বিভিন্ন অংশে পেটায়। এছাড়া তারা আমার কানে জোরে থাপ্পর দিলে আমি গুরুত্বর আঘাত প্রাপ্ত হই। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রাত ১০ টার পরই ১২ নং ওয়ার্ডের আমবাঘান এলাকায় ড্রেজার রেখে বালু ভরাট করছে ঐ চক্রটি। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের এ ঘটনায় ইতিপুর্বের শহিদের বিরুদ্ধে একাধিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। তথাপি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ না থাকায় অবৈধ এ কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়িত হচ্ছে ওয়ার্ডজুড়ে।
একদিকে সরকারের নির্দেশনা যেমন ব্যহত হচ্ছে তেমনি পরিবেশেরও মারাত্নক ক্ষতিসাধণ হচ্ছে। অবিলম্বে এ ড্রেজার বন্ধে আমরা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি। এ বিষয়ে জানতে কে এম শহীদুল কবির শহিদের মুঠোফোনে একাধিকবার সংযোগের চেষ্টা করা হলেও তা ব্যর্থ হয়।
এ বিষয়ে শাহাদাত জানান- কোন পুকুর কিংবা জলাশয় ভরাট করা হচ্ছেনা । তবে একটি ড্রেজার চলছে। ব্যক্তি জমিতে কাজ করার জন্য সেটি ভরাট চলছে। বরিশাল মহানগর বিএনপি’র সদস্য সচিব মোঃ জিয়াউদ্দিন সিকদার বলেন, আমাদের নেতা জনাব তারেক রহমানের স্পষ্ট নির্দেশ দলের নাম ভাঙ্গিয়ে ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হোক এমন অপচেষ্টায় কেউ লিপ্ত থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি প্রশাসনিক ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা(ভারপ্রাপ্ত) মোসা: মাসুমা আক্তার জানান, আমি ইতিমধ্যে কর্পোরেশন থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পাঠিয়েছি। দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মোঃ শওকত আলী জানান, সিটি কর্পোরেশন কিংবা পৌরসভা এলাকায় কোন ড্রেজার কিংবা অন্য কোন উপায়ে জলাশয় ভরাট করা যাবেনা । এটি সরকারের নির্দেশ। এটির প্রতিফলন ও অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে আমরা বদ্ধপরিকর। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে বিদ্যমান পরিবেশ আইন- ১৯৯৫ এবং জলাধার সংরক্ষণ আইন- ২০০০ এর বিধান অনুসারে যে কোনো জলাশয় ভরাট নিষিদ্ধ এবং ব্যক্তিগত পুকুর হলেও তা জলাধারের সংজ্ঞাভুক্ত হওয়ায় তা ভরাট করা যাবে না। ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর মহামান্য হাইকোর্ট জলাধার সংরক্ষণ আইন- ২০০০ এর ২ (চ) ধারায় প্রাকৃতিক জলাধারের সংজ্ঞাভুক্ত করে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেন। তার প্রেক্ষিতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বিদ্যমান আইন ও হাইকোর্টের নির্দেশে গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে সব ধরণের পুকুর/জলায়শয় ভরাট বন্ধে গ্যাজেট প্রকাশ করে।
Leave a Reply