নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি , বরিশাল আঞ্চলিক শাখা রক্ষায় তিন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তবে অবৈধভাবে দখল চেষ্টার হাত থেকে রক্ষায় সংশ্লিস্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করলেও অদ্যবধি কোন সুরাহা মিলছে না বলে জানিয়েছে সমিতির নেতৃবৃন্দসহ সাধারণ শিক্ষকরা। শিক্ষকতা পেশার অস্তিত্ব রক্ষার মুল সংগঠনের ভবনে প্রবেশে প্রতিবন্ধকতায় চরম হতাশা ও অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন শিক্ষক নেতারা।
একইসাথে সাধারণ শিক্ষকরাও ক্ষোভ প্রকাশ করে অবিলম্বে শিক্ষক সমিতি অসাধুদের হাত থেকে রক্ষায় সংশ্লিস্ট প্রশাসনের চেয়েছেন সহযোগীতা। এরই ধারাবাহিকতায় তারা জেলা প্রশাসন, সেনাবাহীনি বরিশাল সদরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও পার্শ্ববর্তী থানায়ও লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। যদিও সেটির কোন বাস্তবায়ন কিংবা প্রতিক্রিয়া মিলছে না জানিয়ে ক্ষোভ ও চরম হতাশা প্রকাশ করেন সমিতি রক্ষায় দায়িত্বশীল শিক্ষক নেতারা।
গত ৫ আগস্ট নগরীর ফকিরবাড়ি রোডস্থ শিক্ষক ভবনে দখলের এঘটনা ঘটেছে। ঘটনায় প্রথম ৫ আগস্ট থানায়, ৬ আগস্ট সেনাবাহিনীর সদরে দায়িত্বরত কর্মকর্তা মেজর রাশেদ ও শেষে ১৩ আগস্ট জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগ দেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক(ভারপ্রাপ্ত) আসাদুল আলম।
বিবাদীরা হলেন- শিক্ষক সমিতি কামরুজ্জামান গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক দাবিদার শফিউল আযম ও দলিল উদ্দিন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম। আসাদুল ঐ অভিযোগে উল্লেখ করেন- বিবাদীরাসহ অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জন দেশের অস্থির পরিস্থিতিতে গত ০৫/০৮/২০২৪ তারিখে বিকাল সাড়ে ৫ টায় আমাদের নিজস্ব মালিকানাধীন অফিস, শিক্ষক ভবনের মেইন গেটের তালা ভেঙ্গে অফিসের ভিতরে প্রবেশ করে। এরপর অফিসে থাকা সকল কাগজপত্রসহ সাংগঠনিক কাজে ব্যবহারের জন্য রাখা নগদ দুই লক্ষ টাকা নিয়ে যায়। আমরা শিক্ষক সমাজ নিজেদের প্রয়োজনে শিক্ষক ভবনে গেলে সেখানে যেয়ে দেখি বিবাদীরাসহ সঙ্গীয় ১০/১২ জন রড, লাঠিসহ দাড়িয়ে আছে।
সমিতির সভাপতি সুনীল বরণ হালদার অভিযোগে জানান- শিক্ষক সংগঠনটি ১৯২১ সনে অইঞঅ নাম ধারনে প্রতিষ্ঠিত হয়। পর্যায়ক্রমে ১৯৭১ সনের পর নাম হয় বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (ইঞঅ)। দেশব্যাপী এই সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হিসাবে অধ্যক্ষ কামরুজ্জামান ১৯৬৬ সাল থেকে ২০০৩ সালে কেন্দ্রীয় কাউন্সিল পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি বরিশাল আঞ্চলিক শাখা তাদের অর্জিত অর্থ দ্বারা ৫০ নং বগুড়া আলেকান্দা মৌজায় বিগত ২৫/১০/১৯৯০ খ্রি. তারিণে ৫০৬০ নং রেজি, ছাপ কবলা দলিল মূলে ০.০৮৮৫০ একর জমি ক্রয় করে। সভাপতি আরও জানান-যেহেতু অধ্যক্ষ কামরুজ্জামান বিগত ১৯৬৬-২০০৩ সাল পর্যন্ত ৩৬ বছর এই সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
সেকারণে তাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য উক্ত দলিলে গ্রহীতার স্কুলে লেখা হয়, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (কামরুজ্জামান গ্রুপ)। কিন্তু কামরুজ্জামান তার উক্ত কর্মকালে কখনো কোন কাগজ পত্রে কামরুজ্জামান গ্রুপ কথাটি ব্যবহার করেননি। বরিশাল আঞ্চলিক শাখার রেজুলিউশনসহ কোন কাগজ পত্রে কামরুজ্জামান গ্রুপ কথাটি ব্যবহার হয়নি। ভবন নির্মাণের সময় ক্রয়কৃত ইট, রড, সিমেন্টসহ অন্যান্য মালামাল ক্রয়ের বিল ভাউচারে কোথাও কামরুজ্জামান গ্রুপ কথাটি লেখা নেই। সকল কাগজপত্রে লেখা বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি, বরিশাল আঞ্চলিক শাখা।
তাছাড়া ভবনের সকল ভাড়াটিয়ার চুক্তিপত্রে লেখা বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি, বরিশাল আঞ্চলিক শাখা। সভাপতি সুনীল জানান, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি, বরিশাল আঞ্চলিক শাখার তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক বাবু সন্তোষ মুখার্জী তার অবৈধ কৃতকর্মের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক বহিষ্কৃত হয়। তখন নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য দলিলের কামরুজ্জামান গ্রুপ শব্দটি ব্যবহার করে নতুন একটি শিক্ষক সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন।
এ কারণে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (কামরুজ্জামান গ্রুপ) দলিলটি স্থায়ী করণের নিমিত্বে ২৬/০৫/২০০৫ তারিখে প্রতিপক্ষ একটি রীট পিটিশন দায়ের করেন। উক্ত রীট পিটিশনটি বিগত ২৩/০৯/২০০৭ তারিখে মহামান্য হাইকোর্ট খারিজ করেন।
তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে মাঠ জরিপে ৩০ ধারায় বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি বরিশাল আঞ্চলিক শাখার দখলী সত্ত্ব হিসাবে লিপিবদ্ধ হয়। ৩১ ধারায় আপীল করিলে আপীল আদালত শুনানীঅন্তে বিগত ০৪/০১/২০২৩ তারিখে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি, বরিশার আঞ্চলিক শাখার নামে রেকর্ড করেন। উক্ত রেকর্ড বহাল আছে। তাছাড়া বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি, বরিশার আঞ্চলিক শাখার সদস্যবৃন্দ বিগত ০৫/০৮/২০২৪ তারিখ পর্যন্ত শিক্ষক ভবনে দখলদার হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন। কামরুজ্জামান গ্রুপ নামে শিক্ষক সংগঠনটি যা বিগত ০৮/০৮/২০০৩ তারিখে প্রতিষ্ঠিত।
গত ০৫/০৮/২০২৪ তারিখ বিকাল সাড়ে ৫ টায় তারা ভবনের তালা ভেঙ্গে জবর দখল করেন। এর নেতৃত্ব দেন বরিশাল আঞ্চলিক শিক্ষক সমিতি কামরুজ্জামান গ্রুপের সভাপতি দাবী করে প্রনব বেপারী ও সাধারণ সম্পাদক দাবিদার শফিউল আযমসহ অজ্ঞাত আরও অনেকে। এ বিষয়ে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে। আমরা অতিসত্বর ভবনে বাধাহীনভাবে যাতে পুর্বের ন্যায় সুশৃঙ্খলভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারি এজন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
এদিকে অভিযোগে শিক্ষক নেতা সুনীল সহ আরও কয়েকজন জানান, বরিশাল শিক্ষক সমিতি দখলে তান্ডব চালাচ্ছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাময়িকভাবে চাকুরী হারানো আঞ্চলিক শিক্ষক সমিতি কামরুজ্জামান গ্রুপের সভাপতি দাবী করা প্রনব বেপারী ও সাধারণ সম্পাদক দাবিদার দু বছর পুর্বে অবসর প্রাপ্ত শফিউল আযম। এ নিয়ে বরিশাল আঞ্চলিক শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ ও সদস্যরা তীব্র প্রতিবাদ জানায়।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের হস্তক্ষেপে বরিশাল আঞ্চলিক শিক্ষক সমিতি ভবন দখলমুক্ত হয়। এছাড়া প্রনব কুমার বেপারী বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা চন্দ্রদ্বীপ হাই স্কুল এন্ড কলেজে কর্মরত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে একাধিক জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদও প্রকাশিত হয়। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পলায়নের পরে ঐদিনই প্রনব ও শফিউল আযমের নেতৃত্বে কৌশলে বরিশাল নগরীর ফকিরবাড়ি রোডস্থ বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি, বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয় ভবনটি দখলে নেয় তাদের অনুসারীরা।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি, বরিশাল আঞ্চলিক শাখার নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয়দের হস্তক্ষেপে গত ২৮ সেপ্টেম্বর ভবনটি দখলমুক্ত হয়।
এ বিষয়ে প্রনব বেপারী জানান, আমি বরিশাল শিক্ষক সমিতি কামরুজ্জামান গ্রুপের সভাপতি। ফকিরবাড়ি রোডের শিক্ষক ভবন আমাদের সমিতির নামে। এতদিন স্থানীয় কাউন্সিলরের সহযোগীতায় প্রতিপক্ষরা অবৈধভাবে দখলে ছিল। আমরা দখল করিনি । দখলমুক্ত করেছি।
শফিউল আযম জানান- ভবনটি কামরুজ্জামান গ্রুপের। এতবছর আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় দখলে ছিল। এখন বৈধভাবে দখলমুক্তের মাধ্যমে মোটামুটি আমাদের নিয়ন্ত্রনে এসেছে।
এ বিষয়ে বরিশাল জেলা প্রশাসক মোঃ দেলোয়ার হোসেন জানান- বিষয়টি আমার জানা নেই। জেনে যাচাই-বাছাই করে যথাযথভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply