দেশে ভয়াবহ এক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে মাদক। এর ভয়াল ছোবলে ধ্বংস হচ্ছে দেশ। বাড়ছে নানা মাত্রার অপরাধ। যুবক-যুবতী থেকে শুরু করে কিশোর-কিশোরীরাও মাদকাসক্ত হয়ে ভয়ঙ্কর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। মাদকের অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে ভয়ঙ্কর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে কিশোর অপরাধীরা। জেলা, উপজেলা শহরেও বাড়ছে মাদকাসক্তদের সংখ্যা। মাদকের কারণেই সমাজের উচ্চ ও নিম্নবিত্ত পরিবারের কিশোর- যুবকরা জড়িয়ে পড়ছে নানা মাত্রার অপরাধে। মাদকের সহজলভ্যতাই অধিকহারে বিপথগামী হচ্ছে কিশোর ও যুবকরা।
আর এ অবস্থা থেকে উত্তোরণে কাজ করে যাচ্ছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। সেই সাথে উল্লেখযোগ্য হারে ভুমিকা রাখছে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিষ্ঠিত মাদকাসক্তি ও মানসিক রোগ নিরাময় কেন্দ্রগুলো।
এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিভাগীয় শহর বরিশালে মাদকাসক্তিদের সঠিক চিকিৎসা প্রদানের মধ্য দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে সুস্থ সমাজ গঠনে উল্লেখযোগ্যহারে ভুমিকা রাখছে ’ দি নিউ লাইফ’ নামের মাদকাসক্তি ও মানসিক রোগ চিকিৎসা কেন্দ্র। দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে মাদকাসক্তিদের চিকিৎসা সেবায় অন্যতম সেবাদানকারী কেন্দ্র হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে এ প্রতিষ্ঠানটি।
সর্বাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় আক্রান্তরা স্বল্প সময়ের মধ্যেই ফিরতে পাচ্ছে স্বাভাবিক জীবনে। আর এতে ব্যক্তি-পরিবার উন্নয়নের পাশাপাশি ইতিবাচক ভুমিকা রাখছে সমাজ ও দেশের উন্নয়নেও।
জানা গেছে, ২০১৯ সাথে মাদকাসক্তি ও মানসিক রোগ নিরাময়ে সেবা প্রদানের লক্ষ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ’নিউ লাইফ’। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সেবার ব্রত পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে মেনে চলছে এই প্রতিষ্ঠানটি। মাদকাসক্তিদের আলোর পথে ফেরাতে নিরলস পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটিও ইতিমধ্যে হয়েছে সমাদৃত। সেবা প্রত্যাশীদের একটি নির্ভরযোগ্য আস্থার প্রতীক হয়ে ওঠেছে নিউ লাইফ। মাদকাসক্তিদের নতুন জীবনে ফেরাতে শতভাগ সাফল্যের সাথে কাজ করে যাচ্ছে এটি । যার ধরুণ, বিভিন্ন মহল থেকেও কুড়িয়ে চলছে প্রশংসাসহ নানা ইতিবাচক স্বীকৃতি । বর্তমানে মাদকাসক্তিদের সেবার নামে যত্রতত্র বিভিন্নস্থানে ব্যাঙ্গের ছাতার মত গড়ে ওঠেছে নাম-সর্বস্ব একাধিক প্রতিষ্ঠান।
ঐসব প্রতিষ্ঠানে সেবার বিপরীতে হয়রানী সহ নানান নেতিবাচক কর্মকান্ড নানা মাধ্যমে উঠে আসে। এতে সেবাপ্রত্যাশীরা সেবার বদলে প্রতিষ্ঠান বিমুখ হচ্ছেন। তবে ঐসব প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে কাজ করছে নিউ লাইফ। সর্বাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় সুস্থ্য হয়ে ফিরতে পারছেন সেবা প্রত্যাশীরা। জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার পর এ পর্যন্ত ৫ বছরে চিকিৎসা সেবা গ্রহণের মধ্য দিয়ে আটশত মাদকাসক্ত রোগী স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পেরেছেন। তারা সুস্থ হয়ে সঠিক পহ্নায় জীবিকা নির্বাহ করছেন।
এদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন যুবক। যাদের বয়স ২৫-৪০ বছরের মধ্যে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ৪০ জন মাদকাসক্ত যুবক চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া চিকিৎসা নিচ্ছেন ৬ জন নারীও । দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে শুধুমাত্র এই প্রতিষ্ঠানটিতেই মাদকাসক্ত নারীদের চিকিৎসা সেবার অনুমতি দিয়েছে সংশ্লিস্ট মন্ত্রণালয়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাদকাসক্তদের চিকিৎসায় এ প্রতিষ্ঠানটির দুটি ভবন রয়েছে। এর মধ্যে একটি ৪ তলা বিশিষ্ট ও অন্যটি একতলা অবকাঠামো। আর মাদকাসক্তদের চিকিৎসায় অভ্যন্তরিন সিস্টেম বেশ উন্নত ও আধুনিকভাবে সাজানো হয়েছে। প্রত্যেকটি কক্ষ্যে রয়েছে উন্নতমানের পৃথক পৃথক শয্যা। এছাড়া রয়েছে এসি ও উন্নত টয়লেট ব্যবস্থা। রোগীদের চিকিৎসায় রয়েছে তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তারা রোগীদের যথাযথ সেবায় সার্বক্ষনিক রুটিন অনুযায়ী নিয়োজিত থাকছেন।
এছাড়া নিয়োজিত রয়েছে অভিজ্ঞ নার্স। তারা রোগীদের যথাযথভাবে সার্বক্ষনিক তদারকি করে থাকেন। রোগীদের সুরক্ষায় রয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। দুটি ভবন মিলিয়ে ৬৪টি সিসি ক্যামেরা সংযুক্ত রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানটিতে। আর এসবের মনিটরিং এর দায়িত্বেও দুই শিফটে নিযুক্ত রয়েছে পর্যাপ্ত জনবল। রোগীদের চিকিৎসায় অংশ হিসেবে তাদের জন্য চালু রয়েছে চিত্ত বিনোদনেরও নানাবিধ ব্যবস্থা। প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরেই রয়েছে দৃষ্টিনন্দন পার্ক। যেখানে দিনের নির্দিস্ট একটি সময়ে অংশ নিয়ে বিনোদনের খোরাক যোগাতে পারছেন রোগীরা। এতে তাদের মানসিক অবস্থারও উন্নীত হচ্ছে। এছাড়াও রয়েছে ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা। প্রতিদিন নির্দিস্ট একটি সময়ে অত্যাধুনিক হল রুমে তাদের এ শিক্ষা প্রদানে নিয়োজিত রয়েছে শিক্ষক। তাদের মানসিক বিকাশেও দেয়া হয় কাউন্সেলিং। প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছে ওযুখানাও নামাজের স্থান। এছাড়া প্রতিদিন ৬ বার রোগীদের স্বাস্থ্যগত সুরক্ষায় উন্নতমানের খাবারও পরিবেশন করা হচ্ছে। রোগীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় রয়েছে ব্যায়ামের ব্যবস্থাও । মোটকথা মাদকাসক্ত রোগীদের একটি অত্যাধুনিক ও নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রে রুপ নিয়েছে দি নিউ লাইফ। নিউ লাইফ থেকে চিকিৎসাগ্রহণকারী বরিশাল নগরীর কাশিপুর এলাকার এক যুবক জানান, আমি মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিলাম। দীর্ঘ ৬ বছর মাদক সেবন করেছি। ভয়াল নেশা আমাকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছিলো। এ অবস্থায় আমার পরিবার আমাকে নিউ লাইফে ভর্তি করায়। ঠিক দুই মাস এখানে আমি চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করি। এর মধ্যেই আমি পূনরায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পেরেছি। এখানে চিকিৎসা সেবা অন্যসব প্রতিষ্ঠানের চেয়ে অধিকতর উন্নত।
ঐ যুবক জানান, বিভিন্ন মাদকাসক্তি প্রতিষ্ঠানে মারধর সহ রোগীদের নানা ধরণের হয়রানী ও নির্যাতন করা হয়। এছাড়া টাকা দিতে হয় অনেক। কিন্ত নিউ লাইফ স্বল্প খরচে উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে। আমি এই প্রতিষ্ঠানটির প্রতি কৃতজ্ঞ। এদিকে জানা গেছে, সেবার মান অক্ষুন্ন রেখে নিউ লাইফ নানাবিধ ইতিবাচক কর্মকান্ডে সর্বদা প্রশংসা কুড়িয়েছে। যার ধরুণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগ থেকে বিভিন্ন সময়ে সচিবরা এসে পরিদর্শন করেছেন এ প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি পরিদর্শন করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জিয়াউল হক। প্রতিষ্ঠানের সার্বিক দিক বিবেচনায় পরিদর্শন শেষে সন্তোষও প্রকাশ করেন তিনি। এর আগেও মন্ত্রণালয়ের মহাপরিদর্শক আব্দুস সবুর মন্ডল ও অতিরিক্ত সচিব বেলাল হোসেন পরিদর্শন শেষে প্রতিষ্ঠানের ওপর সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
নিউ লাইফে নিয়োজিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আল মাহিত জানান, রোগীদের অত্যন্ত যত্ন সহকারে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। তারা যাতে সঠিক সেবা গ্রহণ করে দ্রুত সুস্থ্য জীবনে ফিরতে পারেন সে অনুযায়ী তাদের যথাযথ চিকিৎসার আওতায় আনা হচ্ছে। সার্বক্ষনিক চিকিৎসার জন্য আমরা নিয়োজিত রয়েছি। এই প্রতিষ্ঠানে কোন রোগীকে মারধর করা হয়না। যা অন্যসব প্রতিষ্ঠানে করা হয়। আমরা রোগীদের সুস্থ্যতায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্য দিয়ে তাদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছি। নিউ লাইফের ব্যবস্থাপক মাওলানা সাইফুল্লাহ জানান, রোগীদের সেবায় প্রদানে আমরা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও সতর্কতা অবলম্বন করে থাকি। তারা যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে সঠিক সেবা পেয়ে স্বাভাবিক জীবনে পূনরায় ফিরে আসতে পারেন মুলত সেটিই থাকে আমাদের লক্ষ্য। আর আমরা সে লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি।
যারা মাদকাসক্ত রয়েছে,তাদের পরিবারের উদ্দেশ্যে বলব- স্বজনদের নিউ লাইফে ভর্তি করিয়ে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণের মধ্য দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে সহায়তা করুন।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর, বরিশাল জেলার উপ-পরিচালক মোঃ তানভীর হোসেন খান জানান, মাদকাসক্তিদের সেবা একটি মহৎ পেশা। নিউ লাইফের সেবার মান ভাল। সার্বক্ষনিক চিকিৎসক ও নার্স রয়েছেন। তারা সেবায় সর্বোচ্চ প্রচেস্টা অব্যাহত রেখেছেন।
Leave a Reply