নিজস্ব প্রতিবেদক
“সাকিব সাহেব আমাদের লিল্লাহ বোডিংয়ে মাঝে মাঝে আসতেন। সাথে নিয়ে আসতেন দু:স্থ এবং অসহায় শিশুদের জন্য কিছু বাজার। এমনকি এবার রমজানেও এসেছিলেন কিছু বাজার নিয়ে।সেই সাথে কিছু ছাত্রদের হাতে দিয়েছিলেন পোশাক তৈরি করার জন্য কিছু টাকা। এরপর আজকের পুর্বে আর আসেননি। কিন্তু তিনি উদ্দেশ্য প্রনীত ভাবে প্রচার করেছিলেন। যে, তিনি প্রতি মাসে আমাদের এখানে ৬০ হাজার টাকা দিতেন যা ছিল সম্পুর্ন মিথ্যা।
কিন্তু বিষয়টি যাছাই না করে প্রচার করায় আমরা মারাত্নক সমালোচনার মুখে পরেছিলাম। তবে আমাদের ভরসা ছিল আল্লাহর উপর। সব কিছু তিনিই সমাধান করবেন। আমরা ভরসা রাখার ফলাফল পেয়েছি। গতকাল সাকিব তার মামাকে নিয়ে পুনরায় আমাদের মাদ্রাসায় এসেছেন। সাথে নিয়ে এসেছেন ২৫ কেজি বস্তার ১২ বস্তা চাল, তৈল, পিয়াজ, রোশন, আলু, ১০ কেজি গরুর মাংসসহ প্রয়োজনীয় বাজার এবং নগদ ৫ হাজার টাকা। আমার জানামতে, এগুলো নিউইয়র্কে বসবাসরত তার বোন এবং ভগ্নিপতি পাঠিয়ে থাকেন।
আমরা তাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য দিনভর দু:স্থ ও অসহায় ছাত্রদের নিয়ে দোয়া করছি” কথাগুলো বলছিলেন দীর্ঘ মেয়াদি রোগ নিয়ে শেবাচিমে চিকিৎসাধীন পলাশপুর রহমানিয়া ক্বিরাতুল কুরআন পাবলিক মাদ্রাসা এবং লিল্লাহ বোডিং এর প্রতিষ্ঠাতা নুরুল ইসলাম ফিরোজী। তিনি আরও বলেন, গতমাসে এতিম শিশুদের দুর্দশা নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশের পর আমাদের অফিসিয়াল বিকাশ, নগদ এবং ব্যাংক হিসেবে প্রায় সাড়ে ৬/৭ লক্ষ টাকা অনুদান এসেছে। আমরা এজন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। তবে চলতি মাসের ১ তারিখের পর তেমন কোন অনুদান আসেনি। তাই মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ উল্লেখিত টাকা দিয়ে পুর্বের কিছু লোন পরিশোধের পাশাপাশি বেশকিছু দিন মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ভরনপোষণের স্বীদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এছাড়াও, সবার জন্য মাদ্রাসার প্রাপ্ত হিসেব উন্মুক্ত করা হয়েছে। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন যাতে আমি দ্রুত সুস্থ হয়ে এতিম শিশুদের খেদমতে নিয়োজিত হতে পারি।”
এদিকে, নিজের ভুল বুঝতে পেরে অনুশোচনায় ভুগছেন বরিশাল নগরীর সেই সাকিব। মাদ্রাসা এবং লিল্লাহ বোডিং নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করা এবং পরবর্তীতে ব্যাপক সমালোচনার মুখে দু:স্থ ও অসহায় শিশুদের ভরসাস্থল পলাশপুর রহমানিয়া ক্বিরাতুল মাদ্রাসা এবং পাবলিক এতিমখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হওয়ার বর্তমানে অনুশোচনায় ভুগছেন তিনি।
এরই জের ধরে গতকাল স্বশরীরে এতিম শিশুদের জন্য বেশ কিছু খাদ্য সামগ্রী এবং নগদ টাকা নিয়ে হাজির হন মাদ্রাসায়। উল্লেখ্য, বরিশাল নগরীর পলাশপুরে রহমানিয়া পাবলিক মাদ্রাসা এবং লিল্লাহ বোডিং স্থাপিত হওয়ার পর থেকে পিতা-মাতাহীন অর্ধশতাধিক অসহায় ও দু:স্থ শিশু সম্পূর্ণ বিনামুল্যে আবাসন, তিনবেলা খাবার এবং ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষা গ্রহণ করছে। সরকারি দপ্তরে নিবন্ধনের জন্য মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ চেস্টা করলেও বিভিন্ন জটিলতায় তা এখনো সম্ভব হয়নি। তবে, জটিলতা নিরসনের চেস্টা চলছে।
অপরদিকে, মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির একাধিক সদস্য বলেন, সাকিব অনিচ্ছাকৃত একটি বক্তব্য দেয়ায় আমরা কিছুটা সমালোচনার মুখে পরেছিলাম। গতকাল তার মাদ্রাসায় আগমন এবং খাদ্য সামগ্রী ও নগদ টাকা প্রদান আমাদের অস্বস্তি পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দিয়েছে। আমাদের মাদ্রাসায় প্রতিমাসে ৬০ হাজার টাকা প্রদান করতেন, সাকিবের এমন বক্তব্য ভুল প্রমাণিত হওয়ায় কমিটির সদস্য এবং শিক্ষার্থীরা আনন্দিত।
Leave a Reply