বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভা অহেতুক বর্জনের অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যানদের বিরুদ্বে। গতকাল উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
সমন্বয়হীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভা বর্জন করেন উপজেলার ১২ ইউপি চেয়ারম্যান। আর সভা বর্জনের ফলে সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় উপজেলার সব ইউনিয়নের উন্নয়নে একটি বরাদ্দ ফেরত যাচ্ছে সরকারি তহবিলে।
জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষ হবে চলতি মাসের ৩০ তারিখ। এই অর্থবছরে ’উপজেলা উন্নয়ন সহায়তা’ খাতের অনগ্রসর উপজেলা বিবেচনায় বাকেরগঞ্জ উপজেলা পরিষদে ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। গত ৪ জুন স্থানীয় সরকার বিভাগ , বাংলাদেশ সচিবালয়ের উপসচিব (উপজেলা -২ শাখা) ড. মাসুরা বেগম স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ’উপজেলা উন্নয়ন সহায়তা’ থোক বরাদ্দের ৭’শ কোটি টাকার মধ্যে অনগ্রসর উপজেলা বিবেচনায় উপখাতে রক্ষিত ৮০ কোটি টাকার মধ্যে ৫০ লাখ টাকা বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের জন্য বাকেরগঞ্জ উপজেলা পরিষদে বরাদ্দ দেয়া হয়। আর সেটি যথাযথভাবে ব্যয় ও প্রকল্প বাস্তবায়নে নানাবিধ নির্দেশনাও দেয়া হয়।
আর উপজেলা পরিষদে চলতি অর্থবছরে শেষ সভাটি ছিল সোমবার। বরাদ্দকৃত সেই অর্থে যেসব উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করা হবে তার সিদ্ধান্ত নেয়ারও কথা ছিল ওই সভায়। তবে সভা বর্জনে তা ব্যর্থ হয়েছে।
আরও জানা গেছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান সকলকে সভায় উপস্থিত থাকতে নিজেই চিঠি দিয়ে ডেকেছেন। ইউপি চেয়ারম্যানরা উপস্থিত হলেও অনুপস্থিত ছিলেন নব-নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান সালাম মল্লিক ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জাহানারা বেগমও।
কিন্ত উপস্থিত চেয়ারম্যানরা সেই সভাটি বর্জন করায় সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়নি উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়নের। ফলে উন্নয়ন খাতের বরাদ্দকৃত ৫০ লক্ষ টাকার পুরোটাই সরকারকে ফেরত দিতে হবে পরিষদের। আর এতে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের রাস্তা-ঘাট থেকে নানাবিধ উন্নয়নে বিঘ্নতা ঘটেছে বলে মনে করছেন দায়িত্বশীলরা।
সভা বর্জন করা ইউপি চেয়ারম্যানদের দাবি, নব-নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান রাজিব আহম্মদ তালুকদার তাদের সাথে কোন ধরনের আলোচনা ও সমন্বয় না করেই রবিবার (৯ জুন) এককভাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। এ কারনেই মাসিক সভাসহ উপজেলা প্রশাসনের সকল কাজ বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন তারা ।
এদিকে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রাজিব তালুকদারের দায়িত্বভার গ্রহণ ও তাকে সংবর্ধনার পুরো আয়োজন করে বাকেরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ। সেখানে চেয়ারম্যান রাজিব নিজেও অতিথী হিসেবে অংশ নেন।
উপজেলার কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে নব-নির্বাচিত পরিষদের চেয়ারম্যান রাজিব তালুকদারের সংবর্ধনা ও দায়িত্বভার গ্রহণের আয়োজন করা হয়। এখানে চেয়ারম্যান রাজিব নিজেই অতিথী । ইউপি চেয়ারম্যানদের যে অভিযোগ সেটির দ্বায়ভারতো পরিষদের চেয়ারম্যান নিবেন না। অহেতুক অভিযোগ এনে তারা সভাটি বর্জন করেছে। সভাটি ছিল অতি গুরুত্বপুর্ণ। এতে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের একাধিক সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা ছিল। যা চেয়ারম্যানদের এমন কর্মকান্ডে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। যার ক্ষতির সম্মুখীন হবে সাধারণ মানুষ।
উপজেলা চেয়ারম্যান রাজিব আহম্মদ তালুকদার বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ সংবর্ধনার আয়োজন করে। সেখানে আমি নিজেই অতিথী। এছাড়া চেয়ারম্যানরা যে সভাটি বর্জন করেছেন সেটি ছিল আমার প্রথম সভা। ইউএনও মহোদয় সবাইকে চিঠি দিয়ে ডেকেছেন। তার ডাকে সকলেই উপস্থিত হয়েছেন। আমি হয়তো পরবর্তী সভায় তাদের ডাকবো। আমার ওপর অভিযোগ থাকলে তখন তারা বর্জন করতে পারতেন।
চেয়ারম্যান রাজিব আরও বলেন, বিষয়টি সম্পুর্ণ পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। যার প্রভাব পড়বে উন্নয়নে। কারণ ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষ হবে চলতি মাসের ৩০ তারিখ। সরকার উন্নয়নের জন্য বাকেরগঞ্জে ৫০ লক্ষ টাকা প্রদান করেছিল। এ অর্থে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন ইউনিয়নের রাস্তা-ঘাট সংস্কার কিংবা নতুন করে নির্মাণের একটা পরিকল্পনা ছিল আমাদের। কিন্ত চেয়ারম্যানদের সভা বর্জন ও অনুপস্থিত থাকায় উন্নয়ন কর্মকান্ডে এই টাকা ব্যয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া যায়নি। এতে পুরো টাকাটাই সরকারকে ফেরত দিতে হবে। যার ধরুন বাধাগ্রস্ত হবে উন্নয়ন। জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয়ে তারা জনগণের কথা না ভেবে দাওয়াত না পেয়ে এমন কর্মকান্ডে উন্নয়নে বিঘ্ন ঘটালো। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ মানুষ। জনপ্রতিনিধির থেকে এমনটা আশা করা যায়না।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, কোরাম সংকটের কারণে উপজেলা পরিষদের মাসিক সভা হয়নি। নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের পরিচিতি সভা হয়েছে। এমনকি কোরাম সংকটের কারণে মাসিক সভা হয়নি বলে উপজেলা পরিষদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়নি। সভায় ১৮ জন সদস্যের মাত্র চার জন উপস্থিত ছিলেন। সভায় অধিকাংশ ইউপি চেয়ারম্যান অনুপস্থিত ছিলেন এটা সত্য। তবে কি কারনে দুইজন ভাইস-চেয়ারম্যানসহ ১২ জন ইউপি চেয়ারম্যান অনুপস্থিত ছিলেন সে বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
উল্লেখ্য, সোমবার মাসিক সমন্বয় সভা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও কোরাম সংকটের কারণে মাসিক সভা হয়নি। বেলা ১২টায় উপজেলা চেয়ারম্যান রাজিব আহম্মদ তালুকদারের সাথে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের পরিচিতি হিসেবে অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমানের সঞ্চালনায় পরিচিতি সভা দুপুর ২ টার দিকে শেষ হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন পৌর মেয়র লোকমান ডাকুয়া, গারুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান এস এম কাইয়ুম খান, কলসকাঠী ইউপি চেয়ারম্যান ফয়সাল ওয়াহিদ তালুকদার মুন্না, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুনিতি কুমার সাহা, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. কামরুল প্রমুখ।
Leave a Reply