নিজস্ব প্রতিবেদক
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায় ফসলি জমির ধান কাটাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগে সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ভুতেরদিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। এঘটনায় একপক্ষের আদালতে মামলা চলমান ও ওপর পক্ষ ফৌজদারী মামলায় রায় প্রাপ্ত হয়ে ধান কর্তন করছেন।
ক্রয় ও শেষে ওয়ারিশ সুত্রে প্রাপ্ত শতবছর ভোগদখলে থাকা মোঃ মাসুদুর রহমান জানান, আমার নানা রজ্জব আলী খানের পৈতৃক ও ক্রয় সুত্রে এক একর ১৯ শতাংশ জমি রয়েছে। সে অনুযায়ী তার মৃত্যুর পর আমার মা মমতাজ বেগম ও খালা তাসলিমা বেগম সহ অন্যান্য ওয়ারিশরা সঠিকভাবে ভোগ দখলে রয়েছি। আমরা শত বছর ধরে এই জমি ভোগ দখল করে আসছি। কিন্ত প্রতিবেশী আনিছ বেপারী আমাদের ফসলি জমি নিজের দাবী করে আদালতে ফৌজদারী মামলা দায়ের করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তারা আমাদের ফসলি জমি থেকে জোরপূর্বক ধান কেটে নিচ্ছেন।
বিষয়টি নিয়ে আমরা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি। পাশাপাশি আদালতে ১৪৪ ও ১৪৫ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। বিজ্ঞ আদালত আগামী বছর অর্থাৎ ২৯/০১/২৪ তারিখ পর্যন্ত ঐ জমিতে শান্তি -শৃঙ্খলা বজায়ে থানার ওসিকে নির্দেশনা দেন। ঐ কপি আমরা থানা ও ভুমি অফিসে কপি প্রেরণ করি। ফৌজদারী কার্যবিধি ১৪৪/১৪৫ ধারায় বরিশাল বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন মাসুদূর রহমানের মা মোসাঃ তাসলিমা বেগম। যার নং এমপি ৯৩/২০২৩। ঐ মামলায় কেদারপুর ইউনিয়নের মৃত আদম আলী হাওলাদারের ছেলে মোঃ আনিছুর রহমান বেপারী সহ ৪জনকে বিবাদী করা হয়।
অথচ আদালতের সেই নির্দেশনা অমান্য করে আনিছ বেপারী অন্যায়ভাবে ফসলি জমির ধান কেটে নিচ্ছেন।
মোঃ মাসুদুর রহমান অভিযোগে আরও জানান, অন্যান্যভাবে ফসলি জমির ধান কর্তন নিয়ে থানায় অবহিত করেছি। এছাড়া স্থানীয় চেয়ারম্যান মহোদয়কেও জানিয়েছি। উভয় পক্ষ দাবীদার হওয়ায় তিনি ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইব্রাহিম বিশ্বাসকে কর্তনকৃত ধান নিজের জিম্মায় রেখে পরবর্তীতে সঠিক সিদ্ধান্ত মোতাবেক বন্টন করা হবে বলে জানিয়েছেন। ইউপি সদস্য সে মোতাবেক জানালে আনিচ বেপারী সেটি না মেনেই ধান কেটে নিজের জিম্মায় রাখছেন।
তিনি বলেন, আনিছ বেপারী অন্যায়ভাবে আমাদের ফসলি জমি থেকে ধান কর্তন করে নিচ্ছেন। তার কোন কাগজপত্রও নেই। যা আছে তা সঠিক নয়। এছাড়া তিনি আমাদের পরিবারকে বিভিন্ন ধরণের হুমকি প্রদর্শন করে আসছেন। এবিষয়ে আমরা প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত ও সুদৃষ্টি কামনা করছি।
স্থানীয় এক বয়স্ক ব্যাক্তি জানান, আমার ৭০ বছর বয়স। আমি ছোট থেকেই দেখে আছি মাসুদুর রহমানের নানা রজ্জব আলী মাস্টার সহ ৪ ভাই এ জমি ভোগ দখল করেছে। তারা এ জমি চাচা ও চাচাতো ভাইয়ের কাছ থেকে ক্রয় করেছে বলে জানি। এখন আনিছ বেপারী কোন কাগজের বলে জমি দাবী করছেন সেটি আমার জানা নেই।
এদিকে বিষয়টি সুষ্ঠুভাবে মিমাংসা না হলে উভয়পক্ষের মধ্যে সমস্যা আরও বৃদ্ধি পেয়ে সংঘাত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
এদিকে ধান কাটা নিয়ে আনিছ বেপারী বলেন, ২০০৩ সালে বিরোধীয় জমি নিয়ে স্থানীয়দের মাধ্যমে একটি সালিশ বৈঠক হয়। তবে সেটি অমান্য করে মাসুদুর রহমানের মামা গিয়াস উদ্দিন ও শাহ আলম একটি মামলা দায়ের করেন। গিয়াস উদ্দিন মারা গেলে তার ছেলে পারভেজ সহ স্বজনরা ওয়ারিশ হন। আর ২০০৮ সালে শাহ আলম আপিল করে মারা জানান। এরপর গোলাম কিবরিয়া তার ওয়ারিশ হন। ২০০৩ সালের মামলার পর ২০০৮ সালে তারা হেরে যাওয়ার পর আপিল করেন। সেটি ২০১৭ সালে খারিজ হয়ে যায়। ২০১৮ সালে স্থানীয়দের সালিশির মাধ্যমে জমি আমার বলে জানানো হয়। কারন ১ একর ২৯ শতাংশ জমি আমার বাবা আদম আলী বেপারী ও দাদীর ক্রয়-দলিল সুত্রে আমরা ওয়ারিশপ্রাপ্ত। আনিছ বলেন, ২০১৮ সালে আমি একটি দেওয়ানি মামলা দায়ের করি। ঐ মামলায় প্রথম ডিগ্রি ও চূড়ান্ত ডিগ্রি আমাদের ১২ জনের নামে আসে। মিউটেশনের পর ২০২২ সালে এটিএম কোর্টের মাধ্যমেও আমাদের পক্ষে রায় হয়। আমরা আদালতের রায় অনুযায়ী নিজেদের জমির ধান কর্তন করেছি। এছাড়া আমরা কাউকে হুমকি দেইনি তারাই আমাদের হুমকি ও বিভিন্নভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করছে।
এ বিষয়ে জানতে বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ নূরে আলম বেপারীর মুঠোফোনে সংযোগের চেষ্টা করা হলেও তা ব্যর্থ হয়।
এ বিষয়ে বাবুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তুষার কুমার মণ্ডল জানান, আনিছুর রহমানের নামের এক ব্যক্তির পক্ষে বিজ্ঞ আদালতের আদেশ রয়েছে যে ঐ জমিতে বিবাদী পক্ষরা কোনভাবেই যেতে পারবেন না। আর শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় এটিএম কোর্টের একটি আদেশ রয়েছে। তবে বিবাদী পক্ষকে ঐ জমিতে যাওয়ার জন্য বিজ্ঞ আদালত অনুমতি দেয়নি। আদালতের নির্দেশনা ও আইন অনুযায়ী পুলিশ সাহায্য করছে।
Leave a Reply