নিজস্ব প্রতিবেদক // পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটিতে যাতায়াতে দেশের সড়ক-মহাসড়কে ২৭৭টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ২৯৯ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়াও ৫৪৪ জন আহত হয়েছেন। আজ শনিবার (৮ জুলাই) সকালে নগরীর বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় ‘বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি’।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ঈদুল আজহায় সড়ক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ-২০২৩ প্রকাশকালে এই তথ্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, সড়ক, রেল ও নৌ পথে সম্মিলিতভাবে ৩১২টি দুর্ঘটনায় ৩৪০ জন নিহত ও ৫৬৯ জন আহত হয়েছেন।
সংগঠনটির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল প্রতি বছরের ন্যায় এবারও প্রতিবেদনটি তৈরি করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবছর ঈদকেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশংকাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানির বিষয়টি দীর্ঘ এক দশক ধরে পর্যবেক্ষণ করে আসছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঈদযাত্রা শুরুর দিন ২২ জুন থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ৬ জুলাই পর্যন্ত ১৫ দিনে ২৭৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৯৯ জন নিহত এবং ৫৪৪ জন আহত হয়েছেন। বিগত ২০২২ সালের ঈদুল আজহায় যাতায়াতের সঙ্গে তুলনা করলে এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা ১৫ দশমিক ১৬ শতাংশ, প্রাণহানি ৩৩ দশমিক ১১ শতাংশ, আহত ৪২ দশমিক ২৭ শতাংশ কমেছে। এ ছাড়া এই সময়ে রেলপথে ২৫টি ঘটনায় ২৫ জন নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছেন। নৌ-পথে ১০টি দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত, আহত ১৫ জন ও ৬ জন নিখোঁজ হয়েছেন।
বিগত বেশ কয়েক বছর যাবত দুর্ঘটনার শীর্ষে মোটরসাইকেলের অবস্থান থাকলেও এবারের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পশুবাহী যানবাহনের ব্যাপক চলাচল ও ঈদযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবাধ চলাচলের কারণে এবার ঈদে দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান। এবারের ঈদে ৮৮টি ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান দুর্ঘটনায় ৯৩ জন নিহত এবং ১৯৩ জন আহত হয়েছেন। যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৩১ দশমিক ৭৬ শতাংশ, নিহতের ৩১ দশমিক ১০ শতাংশ এবং আহতের ৩৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ প্রায়। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ৯১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৯৪ জন নিহত ও ৭৭ জন আহত হন। যা মোট দুর্ঘটনার ৩২ দশমিক ৮৫ শতাংশ, মোট নিহতের ৩১ দশমিক ৪৩ শতাংশ, মোট আহতের ১৪ দশমিক ১৫ শতাংশ।
এ সময় সড়কে দুর্ঘটনায় ৮২ জন চালক, ৯ জন পরিবহন শ্রমিক, ৩৫ জন পথচারী, ৪৭ জন নারী, ২৫ জন শিশু, ১৭ জন শিক্ষার্থী, ৫ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য (১ পুলিশ, ১ নৌ বাহিনী, ১ র্যাব, ১ বিজিবি, ১ সেনাবাহিনী), ৪ জন শিক্ষক, ৫ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী নিহত হন এবং তাদের পরিচয় মিলেছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট যানবাহনের ২২ দশমিক ৩৭ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২৩.০৫ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-লরি, ১৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ ব্যাটারিচালিতরিকশা-ইজিবাইক-ভ্যান-সাইকেল, ১৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ বাস, ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ কার-মাইক্রো-জিপ, ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ নছিমন-করিমন-ট্রাক্টর-লেগুনা-মাহিন্দ্রা ও ৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ সিএনজি অটোরিকশা এসব দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত ছিল।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক ক্যান্সারের মতো বেড়ে যাওয়ায় সড়ক দুর্ঘটনার মহামারি চলছে। দেশের হাসপাতালগুলোর চিত্র পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার রোগী ভর্তি হচ্ছে। নতুন সড়ক পরিবহন আইন হলেও সড়ক নিরাপত্তায় গবেষণা না থাকা, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রকৃত দোষী ব্যক্তিকে চিহ্নিত করার পদ্ধতিতে ক্রুটি থাকা, তদন্ত দুর্বলতা, আইনের দীর্ঘসূত্রিতাসহ নানা কারণে সড়ক নিরাপত্তা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সরকারের স্বদিচ্ছা থাকলেও সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল মিলছে না। অন্যদিকে গণপরিবহনকে বিকশিত না করে ব্যাপকভাবে ছোট ছোট পরিবহন সড়কে নামানোর কারণে পরিবহনের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দুর্ঘটনার সংখ্যা ও প্রাণহানি বাড়ছে।
Leave a Reply