শনিবার রাতে হত্যায় জড়িত চারজনকে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-জনি (২০), শারাফাত (২০), ইব্রাহিম চান (২১), সাব্বির হোসেন মেহেদী (২২)। পরে গ্রেপ্তারকৃতদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ড ব্যবহৃত একটি রক্তমাখা সুইসগিয়ার চাকু, আসামিদের ব্যবহৃত রক্তমাখা সিএনজি ও লুন্ঠিত ইজিবাইক।
রোববার দুপুরে রাজধানীর পুরান ঢাকার জনসন রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান।বলেন, গত শুক্রবার সকালের দিকে স্থানীয়রা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় ফোন করে জানায়, মঠবাড়ী পদ্মা রেলওয়ে সেতুর নিচে সাবেক চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিনের পরিত্যক্ত ইটের খোলার ভিতরে একটি গলা কাটা মরদেহ পড়ে আছে। পরে পুলিশ গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে। মৃতদেহটি একই ইউনিয়নের পালিরা গ্রামের মৃত সিদ্দিক মিয়ার ছেলে শাকিলের (১৭)। মরদেহ শনাক্ত করেন পরিবারের সদস্যরা।
তারা পুলিশকে জানায়, শাকিল দশম শ্রেণির ছাত্র। তার বাবা ছোটবেলায় মারা যান। অসুস্থ মা ও ছোট ভাইকে নিয়ে থাকত সে। নিজের পড়াশোনা, মায়ের চিকিৎসা ও সংসারের খরচ মেটাতে শাকিল স্কুল শেষে প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ইজিবাইক চালাত। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ইজিবাইক নিয়ে বের হলেও রাতে আর বাসায় ফেরেনি।
পুলিশ মৃতদেহের সুরতহাল রিপোর্ট করার সময় দেখতে পায় , নিহত শাকিলেকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। তার মাথা দেহ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। পিঠে ১১ বার ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। পেটের ডান পাশে ছুরিকাঘাত করায় নাড়িভুড়ি বের হয়ে গেছে। এ ঘটনায় পরবর্তীতে শাকিলের বড় বোন সীমা (২৪) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা( নং ৯৫) দায়ের করেন। তদন্তে নেমে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শনাক্ত করে পুলিশ। এর ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যায় জড়িতরা নিজেদের দায় স্বীকার করেছে উল্লেখ করে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার বলেন, হত্যায় জড়িত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য ও সবাই মাদকাসক্ত। গত শুক্রবার পরিকল্পনা করে একটা ইজিবাইক ছিনতাই করবে। এরপর সেটির ব্যাটারি বিক্রির টাকা দিয়ে মদের পার্টি করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৮ মে সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার ইব্রাহিম চানের সিএনজি নিয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কাউটাইল ঘাটে টার্গেট ইজিবাইকের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।
পরে কোন টার্গেট ইজিবাইক না পেয়ে শরাফত ও জনি কাটাইল ঘাট এলাকা থেকে সামনে এগিয়ে গিয়ে শাকিলকে পায়। শাকিল ঘাতক জনির পূর্ব পরিচিত হওয়ায় সহজেই শাকিলকে নির্জন স্থানে নিয়ে যাওয়া সহজ হবে। পরে জনি, শারাফাত ও সাব্বির গাড়ি নিয়ে মঠবাড়ী পরিত্যক্ত ইটখোলায় যায়। অপরদিকে ইব্রাহিম চান সিএনজি নিয়ে পিছু পিছু আসে। ঘটনাস্থলে পৌঁছানো মাত্রই পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী শারাফাত সুযোগ বুঝে সুইসগিয়ার দিয়ে শাকিলের গলায় টান দেয়। এতে শাকিল ইজিবাইক থেকে পড়ে যায় এবং গলা চেপে ধরে চিৎকার শুরু করে। তখন জনি পেছন থেকে শাকিলের পিঠে এলোপাথাড়ি চাকু মারতে থাকে। কিন্তু তারপরও শাকিল চিৎকার ও দাপাদাপি করতে থাকায় জনি, সাব্বির ও ইব্রাহিম চান শাকিলের মাথা ও হাত-পা চেপে ধরে এবং শরাফাত শাকিলকে সুইসগিয়ার দিয়ে মাথার সামনে-পেছনে জবাই করে মাথা প্রায় বিচ্ছিন্ন করে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
এরপর শরাফত, জনি ও ইব্রাহিম চান সিএনজিতে করে চলে যায়। আর সাব্বির নিহত শাকিলের ইজিবাইক নিয়ে চলে যায়। মূলত আসামিদের মদের পার্টির টাকার জনাই তারা পূর্ব পরিচিত ইজিবাইক চালক শাকিলকে হত্যা করে।
Leave a Reply