নিজস্ব প্রতিবেদক // নাটোরে চুরির অপবাদে ১০ বছরের এক শিশুকে জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। এর প্রতিবাদ করায় দুজনকে কুপিয়ে জখম করে নির্যাতনকারীরা।
গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে সদর উপজেলার বাঙ্গাবাড়িয়া গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। আহতদের নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওই শিশুর নাম তানভীর হোসেন।
পুলিশ ও এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আলমগীর হোসেন নামের স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর টাকা চুরির অভিযোগ আনেন তানভীর হোসেন ও জীবন আহমেদ নামের স্থানীয় দুই শিশুর বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় তানভীরকে বুধবার সন্ধ্যায় ডেকে অভিযোগকারী আলমগীরের রাইস মিলের পাশে একটি লেবু বাগানে নিয়ে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মারধর ও সিগারেটের আগুনের ছ্যাঁকাসহ বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালানো হয়। এ সময় শিশুটির পরিবারের লোকদের মেরে ফেলার হুমকি দেন আলমগীর।
ভয়ে তারা ঘটনাটি গোপন রাখেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকালে ঘটনাটি জানাজানি হলে শিশু জীবনের বাবা রিপন হোসেন ক্ষুব্ধ হয়ে আলমগীরের কাছে গিয়ে শিশু নির্যাতনের প্রতিবাদ জানান।
এই ঘটনার জেরে রাত ১০টার দিকে আলমগীরের সমর্থক কিশোর গ্যাংয়ের ১০-১২ জন সদস্য ধারালো অস্ত্র নিয়ে রিপন হোসেনকে এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে।
এ সময় রিপন হোসেনের চিৎকারে তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেন তার চাচা আবদুর রাজ্জাক। ওই গ্যাং তাকেও কুপিয়ে জখম করে। তাদের চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে অস্ত্র ফেলে পালিয়ে যায় গ্যাংয়ের সদস্যরা।
নির্যাতনের শিকার শিশু তানভীর জানায়, তাকে হাত-পা বেঁধে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ও সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়ে বলে তোরাই টাকা চুরি করেছিস। স্বীকার কর না হলে প্রাণে মেরে ফেলব।
তানভীরের বাবা উজ্জ্বল হোসেন বলেন, আমি দিনমজুরি করে খাই। আমার ছেলে লেখাপাড়া করার পাশাপাশি নিজের খরচ চালানোর জন্য আলমগীরের রাইস মিলে শ্রমিকের কাজ করত।
কিন্তু তাকে মিথ্যা চুরির অপবাদ দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দিয়েছি। এ কারণে আমাকে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যবসায়ী আলমগীর ও তার সঙ্গীদের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে আলমগীরের চাচা আজাদুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে তানভীরের বাবা আমার কাছে এসেছিল। আমি বিষয়টি মীমাংসার জন্য বলেছি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নাটোর সদর থানার ওসি নাছিম আহমেদ বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ও সেখান থেকে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে।
আহতরা বর্তমানে সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ ঘটনায় একটি মামলা করার প্রস্তুতি নিয়েছে নির্যাতনের শিকার দুই শিশুর পরিবার। কিন্তু এজাহারে কিছু ত্রুটি থাকায় ও এনআইডি না দেওয়ায় মামলাটি রেকর্ড করা যায়নি। দ্রুতই মামলাটি রেকর্ডভুক্ত করা হবে। এ ছাড়া ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আটকে অভিযান চলছে।
Leave a Reply