অনলাইন ডেস্কঃ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়েছে। সোমবার ১৭-তম কমিশন বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. জাহাংগীর আলম তফসিল ঘোষণা করেন। সেনুযায়ী বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন আগামী ১২ জুন। ইতিমধ্যেই নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীরা আগাম বার্তা দিয়ে রাজনীতিতে সক্রিয়তার জানান দিচ্ছেন। ব্যক্ত করছেন নানা পরিকল্পনাও। কাঙ্ক্ষিত সেই নির্বাচন ঘিরে নানা মতামতও প্রকাশ করছেন।
চলতি মাস পেরোলেই প্রার্থীদের কর্মযজ্ঞ ব্যাপক আকারে শুরু হবে। প্রার্থীতা নিশ্চিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন মহলে দৌড়যাপও শুরু করেছেন। জনসাধারণের মাঝে নিজের অস্বিত্ব টেকাতে ও অন্য প্রার্থীর চেয়ে জনসমর্থন বাড়াতেও সে কর্মযজ্ঞ মহাযজ্ঞে পর্যায়ক্রমে প্রার্থীর নানামুখী কর্মকান্ডে রুপ নিবে। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ঘিরে অন্য ৪ সিটির চেয়ে এবার চমক নিয়ে নতুন প্রার্থীরা নিজেকে জানান দিতে আটঘাট বেধে মাঠে নেমেছেন।
আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি , হাতপাখা ও বামপন্থী দল নির্বাচনে অংশ নিলেও এবারে অংশ নিচ্ছেনা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। সেক্ষেত্রে বিএনপি ঘড়ানার নেতারা দল অংশ না নিলেও স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনের মাঠে প্রার্থীতার ঘোষণা দিয়েছেন। এমনই বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকায়ও। ইতিমধ্যে বিএনপির প্রয়াত সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের একমাত্র ছেলে মো. কামরুল আহসান রুপনের এমন প্রত্যাশা ব্যক্তকরণে এই সিটির নগরবাসীকে যেন নতুন এক চমক সঞ্চার করেছে। আলোচনায় কিংবা ভাবনাতে না থাকায় হতবাক হয়েছে নিজ দলের বিএনপির অধিকাংশ নেতারাও।
তবে নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীতার ঘোষণা দিলেও দলের যেকোন স্বীদ্ধান্ত নির্দেশনা আসা মাত্রই মেনে নিবেনও বলে জানিয়েছেন তিনি। যদিও তিনি বিএনপি দলের কোন কমিটিতে নেই। তবে ইতিপূর্বে রুপন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু এবং আমিরুল ইসলাম আলীমের নেতৃত্বাধীন কমিটির সদস্য ছিলেন ।
এদিকে প্রতিবেদকের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে রুপন যেকোন সময়ে দলের স্বীদ্ধান্ত মানার পাশাপাশি ব্যক্ত করেছেন নগরবাসীকে নিয়ে নানা সেবামুখী ও জনোন্নয়নমূলক পরিকল্পনা।
মেয়র হলে সে পরিকল্পনানুযায়ী কাজ করবেন বলেও প্রতিশ্রুতি ও প্রতিজ্ঞা করেছেন তিনি । একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, আমি বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের আশাবাদ ব্যক্ত করেছি এটা সঠিক। বিএনপি দলের সাথে সবসময় কাজ করেছি।
তবে বর্তমানে কোন পদে নেই সেটাও ঠিক। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করলেও আমি জাতীয়তাবাদী চেতনায় বিশ্বাসী। সেমোতাবেক দল যখন যে স্বীদ্ধান্ত গ্রহণ করবে কিংবা আমার বিষয়ে কোন স্বীদ্ধান্ত আসলে সেটি আমি যথাযথভাবেই পালন করবো। সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিশেষ কিছু উদ্দ্যেশ্যও রয়েছে। প্রথমত সেটি অবহেলিত নগরবাসীর সেবা।
এছাড়া বর্তমান সরকারের সময়ে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন যে সম্ভব নয় সেটিকেও জনসাধারণের মাঝে আরও প্রকাশ্যে আনতে। নির্বাচন ঠিকই হবে তবে সেটি গ্রহণযোগ্য হবেনা। সেটা সিটি কর্পোরশন কিংবা জাতীয় সংসদ নির্বাচন অথবা অন্য যেকোন নির্বাচন । বর্তমান প্রেক্ষাপটে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প নেই। রুপন আরও জানান, বরিশাল নগরীর প্রায় ৭৫% রাস্তার মান ভাল নয়। বৃষ্টি ও বন্যা হলেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। নগরবাসীর ভোগান্তির অন্ত থাকেনা। ঘরবন্দি দিনযাপন করতে হয় সাধারণ মানুষের। এমন বন্দিদশার কবলে যেন নগরবাসীকে পড়তে না হয় সেজন্য জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পেলে এগুলো নিরসনের প্রচেষ্টা থাকবে আমার সর্বোচ্চ। রুপন বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী জেলা পটুয়াখালী। দৃষ্টিনন্দন জেলা হিসেবে ইতিমধ্যেই পেয়েছে সুপরিচিতি। তেমনি সুন্দর ও উন্নয়নের আলোয় ঝলমল করবে এমনি একটি বরিশাল সিটি গড়তে চাই। নগরবাসীর হোল্ডিং ট্যাক্সের ক্ষেত্রে বৈষম্য দুর করতে চাই।
রুপন বলেন, আমাকে ভোট দিতে হবে এমন কোন কথা নেই আপনার ভোট আপনি দিবেন যাকে ইচ্ছে তাকে দিবেন কিন্তু কেন্দ্রে গিয়ে আপনি আপনার পছন্দ ব্যক্তিকে ভোট দিতে পারছেন কিনা তা দেখার জন্য অন্তত একবার ভোটকেন্দ্রে এসে দেখুন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। এমনকি ইভিএম এর মাধ্যমে ভোটের ফলাফল পরিবর্তন হয়ে থাকে।
তিনি আরো বলেন, বিএনপি যদি নির্বাচনে আসতো আমি নিজেকে যোগ্য প্রার্থী মনে করিনা । নির্বাচনের লড়াইয়ে নিজেকে সেরা একাদশের খেলোয়াড়ও মনে করিনা। তাই দ্বাদশ খেলোয়ার হিসেবে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নিজেকে যথেষ্ট মনে করি। এজন্য আমি প্রস্তুত আছি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে এ সরকার একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন দেয় কিনা জাতি ও বহির্বিশ্ব তা দেখার অপেক্ষায় থাকবে।
রুপন বলেন, আমি কারো রোষানলে পড়তে চাইনা। দলের মধ্যে ঐক্যবদ্ধতা বজায় থাকুক সেটাই চাচ্ছি। তবে নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছি হয়রানী , হুমকি , কিংবা দুদকের চিঠি, আবার মামলাও হতে পারে। সেটি নিয়ে ভাবছিনা। দলের অধিকাংশ নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে না হলেও নিরবে সমর্থন যোগাচ্ছেন। সেটাও আমার একটি শক্তি ।
কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য নিয়ে প্রতিপক্ষ হিসেবে নয় নিজের ইতিবাচক ধারা নিয়ে অগ্রসর হতে চাই। রুপন বলেন, মুলত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়ার আরও কিছু উদ্দেশ্য রয়েছে। বিভাগীয় শহর বরিশাল। গুরুত্বপূর্ণ একটি সিটি এলাকা ও মহানগরী। সেক্ষেত্রে শিল্পের প্রসারেও নিতে হবে দায়িত্ব। এতে বাড়বে কর্মসংস্থান। উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী হবে তরুণরা। বেকারত্ব দূরীকরণে এ নগরী রাখবে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা। দায়িত্ব পেলে সেটির দিকেও থাকবে বিশেষ মনোনিবেশ।
নগরবাসীর সমস্যা সরাসরী শুনে তা লাঘবেও থাকবে আমার সক্রিয় তৎপরতা । যখন যেকোন সময় মানুষ আমার সাক্ষাৎ পাবে।
আমার অফিস হবে সিটি কর্পোরেশন, জনগণ থাকবে আমার অভিভাবক। সবশেষ তিনি নিজ দলের নেতাকর্মীসহ সবার কাছে দোয়া কামনা করেন ।
উল্লেখ্য , কামরুল আহসান রুপন বিসিসির নির্বাচিত সাবেক প্রয়াত মেয়র আহসান হাবিব কামালের বড় ছেলে। কামাল দলের সবশেষ কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী সম্পাদক পদে ছিলেন। এ ছাড়া দলের শহর, মহানগর ও দক্ষিণ জেলা শাখার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ।
Leave a Reply