শিক্ষার্থীদের এই রঙের উৎসবে মাতার কারণকে অনেকেই বললেন নিছক একটি ‘চল’। পুরান ঢাকার ‘হোলি’ উৎসব থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই রং মাখার এই আয়োজন। চারুকলায় যেটির শুরু বছর সাতেক আগে। দিনটিতে লাল, হলুদ, সবুজ, বেগুনিসহ বাহারি রঙের আবির গায়ে মাখেন শিক্ষার্থীরা। রাঙিয়ে দেন অন্যকে। আবির ছোড়েন বাতাসেও। গতকাল ছিল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দোল উৎসব আর আজ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এ যেন এক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।
চারুকলার এক শিক্ষার্থী বলছিলেন, ২০১০-১১ সালের দিকে চারুকলায় এই উৎসবের শুরু। পুরান ঢাকার হোলি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তখন শুধু পানি ছিটানো হতো। এখন শুকনো আবির ছিটানো হয়। দিনে দিনে যেটি সর্বজনীনতা পেয়েছে।
বুধবার (৮ মার্চ) দুপুর নাগাদ এই আয়োজনের পুরোটাজুড়েই ছিল আবির মাখামাখি আর ঢোলের তালে নাচ। দেবালয়ের সামনে থেকে আবিরের রং মাখিয়ে নেচে গেয়ে শিক্ষার্থীরা ঘুরে বেড়ান পুরো চারুকলা প্রাঙ্গণ। কেউ চুলে মেখেছেন বেগুনি, সবুজ, কারও আবার মুখের পুরো অংশটাই ঢেকে গেছে লাল, হলুদ রঙে। রঙের ছটায় নতুন নকশা পেয়েছে শিক্ষার্থীদের পরনের সাদা টি-শার্ট।
রঙের এ খেলা ছুঁয়ে গেল সুদূর বিদেশ থেকে আসা শিক্ষার্থীদের মাঝেও। বাংলাদেশ ভ্রমণে আসা এক তরুনের সাথে চারুকলা প্রাঙ্গণে যখন তার সঙ্গে কথা হচ্ছিল, তখন পুরো শরীর রঙে মাখা। বলছিলেন, বাংলাদেশে এটাই তার প্রথম আসা। রং মাখিয়ে উৎসব উদ্যাপনের অভিজ্ঞতাটাও নতুন।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ হয়েছে বছর খানেক আগে তবুও চারুকলার রঙের উৎসবে আসেন বর্ষা। তিনি বলছিলেন, এই উৎসবের আনন্দটাই হলো বন্ধুদের রং মাখানো। উৎসবে এসেও অনেকে রং মাখতে চান না। তখন বাকি বন্ধুরা মিলে তার পিছে ছোটেন। রং মাখতে না চাওয়ায় তার গায়ে আরও বেশি করে রং মাখানো হয়।
এবারের রং উৎসবের সাথে যুক্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। তাই এই উৎসবটি আলাদা মাত্রা পেয়েছে। সেটিই বলছিলেন চারুকলার শিক্ষার্থী নবনীতা হাওলাদার। তিনি বলছিলেন, আজ নারী দিবস আমরা এখন অনেক এগিয়ে গিয়েছি আরো যেতে চাই বহুদূর। এই রং উৎসবের মধ্য দিয়ে নারীদের খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে পৃথিবী দেখার আহবান জানাই।
রঙের এই খেলা থেকে বাদ যায়নি সংবাদকর্মীরাও। চারুকলায় সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে রঙের খেলেয় মেতেছেন তারাও।
Leave a Reply