জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুরের রামগতির আলেকজান্ডার থেকে মেঘনা নদী এলাকার চাঁদপুরের ষাটনল পর্যন্ত একশ কিলোমিটারকে ইলিশ অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়েছে। এই এলাকায় ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাস সকল ধরণের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। নদীতে সব ধরনের জাল ফেলা ও মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞায় জেলার ৫টি উপজেলার মধ্যে ৪টি উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার জেলে এখন বেকার ও অলস সময় পার করছেন। কেউ কেউ আবার নৌকা তৈরী ও জাল বুননে ব্যাস্ত রয়েছে এখন। যদিও মৎস্য বিভাগ বলছেন, নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪০ হাজার। এমন প্রেক্ষাপটে মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় জেলেদের প্রতিজনের জন্য ১৬০ কেজি করে চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। তাও ২৮হাজার নিবন্ধিত জেলেরা এ সহায়তার আওতাভূক্ত রয়েছে।
এদিকে সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে নদী যাচ্ছে না এখানকার জেলেরা। অভিযান শেষে বেশি ইলিশ পাওয়ার প্রত্যাশা ব্যাক্ত করেন কেউ কেউ। তবে অনকে জেলেরই রয়েছে নানা অভিযোগ। তাদের মধ্যে রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার ইউনিয়নের নুর মোহাম্মদ, সালাহ উদ্দিন মাঝি ও নুরুল ইসলামসহ কয়েকজন জেলে অভিযোগ করে বলেন, প্রকৃত জেলে হয়েও কার্ডধারী হতে পারেননি তারা। মেম্বার-চেয়ারম্যানদের কাছে ধরনা দিয়েও লাভ হয়নি বলে জানান অনেকে। তাদের অভিযোগ, টাকা দিয়েও জেলে কার্ড ভাগ্যে জোটেনি। অনেকে আবার বলছেন ১৫০০-৩০০০ টাকা দিয়ে কার্ড করেছেন। এখন ১ম ধাপের ৮০ কেজির বরাদ্ধের চালের মধ্যে ৫০-৬০ কেজি করে দেয়া হচ্ছে। তাও ২০০টাকা দিলে চাল মিলে বলে জানান জেলেরা।
জেলে জাহাঙ্গীর কোম্পানি জানান, জেলে কার্ড করতে ২ হাজার টাকা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা। টাকা দিয়েও অনেক ভোগান্তি শেষে ৩ বছর পর জেলে কার্ড পেয়েছেন। এখন আবার চাল নিতে গেলে ২০০ টাকা দিতে হয়। সরকারিভাবে ১ম ধাপে ৮০ কেজি চাল পাওয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয়েছে ৬০ কেজি। জেলেরা মৎস্য কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে।
আলেকজান্ডার ইউপি গ্রাম পুলিশ কামরুল ইসলাম বলেন, আমাদের ইউনিয়নে চাল বরাদ্ধ হয়েছে ৮০ ভাগ জেলের জন্য। কিন্তু আমরা প্রত্যেক জেলেদেরকে চাল দিচ্ছি। তাই ৮০ কেজির স্থলে ৬০ কেজি দেয়া হচ্ছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার ইউপি কার্যালয়ে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা ধরা পড়েছে ক্যামেরায়। চাল বিতরণে ট্যাগ অফিসার থাকার বিধি থাকলেও কারো দেখা মেলেনি।
এদিকে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে ইলিশের অভয়াশ্রম ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন সম্পর্কিত জেলা টাস্কফোর্স কমিটির সভায় জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোছাইন আকন্দ এসব অনিয়ম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ওই সময়ে তিনি প্রত্যেক ইউনিয়নে ম্যাজিষ্ট্রেটের উপস্থিতিতে চাল বিতরণের জন্য জেলা মৎস্য কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদেরকে নির্দেশনা প্রদান করেন। জানতে চাইলে রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার ইউপি চেয়ারম্যান শামীম আব্বাছ সুমন বলেন, তার ইউনিয়নে ৪২৭০ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। এর মধ্যে ৩৪৭০ জনের জন্য বরাদ্ধ এসেছে। তাই সবাইকে সমন্বয় করে চাল দেয়া হচ্ছে। টাকা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইউপি ট্যাক্স আদায় করা হচ্ছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, জেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪০ হাজার। সরকারিভাবে জাটকা সংরক্ষণ ও অভয়াশ্রম ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২৮ হাজার ৩৪৪ জন জেলে পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে। এজন্য ৪ হাজার ৫৩৫ মেট্রিকটন ভিজিএফ বরাদ্ধ দিয়েছে সরকার। জেলে হালনাগাদ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। মৎস্য অভিযান সফল হলে এ বছর ২৬ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদন হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা। এদিকে, চাল বিতরণে অনিয়ম বা অর্থ লেনদেনের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।
Leave a Reply