রাজধানীর কাকরাইলের রাজমনি সিনেমা হলের মোড় থেকে চার্চের মোড়ের দিকে বাস, প্রাইভেটকার, সিএনজিসহ বিভিন্ন প্রকার গাড়ি একের পর এক আসছে আর হাতের ইশারায় যাওয়ার জন্য বলছেন, কখনো হাতের ইশারায় সব গাড়ি থামিয়ে দিচ্ছেন। প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা এভাবেই সড়কে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করতে হয় কনস্টেবল শুকলা বসুকে। তার ইশারায়ই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে কাকরাইলে প্রধান বিচারপতির বাসভবনের পাশে সেন্ট মেরি ক্যাথিড্রাল চার্চের সামনের সড়কে ছুটে চলা গাড়িগুলো।
ঢাকার ব্যস্ততম সড়কগুলোতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে শুকলার মতো অনেক নারী ট্রাফিক পুলিশকে নিয়মিতই দেখা যায়। আট ঘণ্টার দীর্ঘ এই ডিউটিতে ট্রাফিক বক্সে নেই শৌচাগারের ব্যবস্থা। ফলে দায়িত্ব পালনকালে শৌচাগার ব্যবহার নিয়ে পড়তে হয় ভোগান্তিতে। এতে নারী ট্র্যাফিকরা বেশি বিপাকে পড়েন।
দায়িত্ব পালনের এক ফাঁকে শুকলা বলেন, ‘ট্র্যাফিক বক্সে জায়গা খুবই কম হওয়ায় শৌচাগার করতে পারছে না। তাই বাধ্য হয়েই পাশের চার্চের শৌচাগার ব্যবহার করতে হয়। তবে ইউনিফরম পরে যেতে অস্বস্তিবোধ করি।’
জ্যামের নগরী রাজধানী ঢাকার সড়কে যানবাহনের বিশৃঙ্খলা কয়েক দশক ধরে। শৃঙ্খলা আনতে ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণে নানা চেষ্টা করলেও তা নিয়ন্ত্রণে আসেনি। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে প্রায় হাজারখানেক ট্র্যাফিক পুলিশ। পাঁচ দশক ধরে পুরুষ ট্র্যাফিক পুলিশ এই দায়িত্ব পালন করলেও ২০১৪ সাল থেকে সড়কের শৃঙ্খলা ও যানবাহন নিয়ন্ত্রণে পুরুষের পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করছে নারী ট্র্যাফিক পুলিশ।
৮ ঘণ্টার দায়িত্ব পালনের এই সময়ে পুরুষ ট্র্যাফিক পুলিশের মতোই দায়িত্ব পালন করতে হয় তাদের। এই সময়ে বসা কিংবা বিশ্রাম নেওয়ার জন্য ব্যবস্থা থাকলেও এখনো অনেক পুলিশ বক্সে নেই শৌচাগার। যেসব পুলিশ বক্সে এই ব্যবস্থা নেই সেখানে পুরুষ কিংবা নারী সব ট্র্যাফিক পুলিশকেই আশপাশের কোনো শৌচাগারে যেতে হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোড়ে পুলিশের নিজস্ব কোনো জায়গা না থাকায় শৌচাগার করা যাচ্ছে না। কোথাও কোথাও করলে সিটি করপোরেশন তা অনেক সময় ভেঙে ফেলে। আর নারী ট্র্যাফিক পুলিশদের দায়িত্ব দেওয়া হয় এমন স্থানেই যেই পুলিশ বক্সে শৌচাগার রয়েছে।
জানা গেছে, পুলিশে নারী সার্জেন্ট নিয়োগ শুরু হয় ২০১৪ সালে। সেই বছর প্রথমবারের মতো নিয়োগ দেওয়া হয় ২৮ জন নারী ট্র্যাফিক সার্জেন্ট। এর মধ্য দিয়েই ২০১৫ সালে সড়কে পুরুষের পাশাপাশি ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণে নারী ট্র্যাফিক পুলিশ কাজ করতে শুরু করেন। দেশে বর্তমানে প্রায় ৫৬ জন নারী ট্র্যাফিক সার্জেন্ট হিসেবে কাজ করছেন। শুধু ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্র্যাফিক বিভাগেই কনস্টেবল থেকে শুরু করে বিভিন্ন পদের কাজ করছেন ৪১ জন নারী পুলিশ সদস্য। এরমধ্যে ২৯ জন নারী ট্র্যাফিক সার্জেন্ট ও ১২ জন কনস্টেবল দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত দুই শিফটে কাজ করেন তারা।
Leave a Reply