রোববার সকাওল নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার এইচ এম আজিমুল হক বলেন, গত ২৫ জানুয়ারি ভুক্তভোগী ওই নারী দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের একটি জেলা থেকে সন্তানদের সঙ্গে দেখা করার জন্য মোহাম্মদপুরেরর বসিলায় আসেন। বসিলা এলাকার এক বাসায় ভুক্তভোগী তার স্বামী-সন্তানসহ থাকতেন। আনুমানিক ৪ মাস আগে শারীরিক অসুস্থতার জন্য সন্তানদের স্বামীর নিকট রেখে ভিকটিম তার গ্রামের বাড়িতে চলে যান। এরমধ্যে স্বামী তাকে ডিভোর্স দেন।
ঘটনার দিন বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ভুক্তভোগী নারী তার আগের বাসায় এসে স্বামী-সন্তানকে না পেয়ে আশপাশে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। বাড়ির মালিক ও পাশের ভাড়াটিয়ারা তার স্বামী-সন্তানদের কোনো ঠিকানা দিতে পারেননি। পরে রাত ৯টা পর্যন্ত বছিলা চল্লিশ ফিট হাউজিং, ফিউচার হাউজিং, গার্ডেন সিটি হাউজিং, স্বপ্নধরা হাউজিংয়ের আশপাশের এলাকায় খোঁজাখুঁজি করে। পরে সন্তানদের সন্ধান না পেয়ে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
পরে ভুক্তভোগী রাত সাড়ে ৯টার দিকে বছিলা চল্লিশ ফিট তিনরাস্তার মোড় থেকে একটি রিকশা ভাড়া করেন। কিন্তু রিকশাওয়ালা ভুক্তভোগীকে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে না নিয়ে ঢাকা উদ্যান ও বসিলার বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরাতে থাকেন। ওই সময় বিভিন্নজনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন রিকশাওয়ালা। ভুক্তভোগীকে তার স্বামীর বাসা খুঁজে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে সবাইকে ফোন করে।
আজিমুল হক বলেন, রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে অজ্ঞাতনামা রিকশাচালক পরিকল্পনা অনুযায়ী ভুক্তভোগী নারীকে তার অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে বসিলা ফিউচার টাউন রোডের শেষ মাথায় একটি অস্থায়ী শ্রমিকদের টিনের ঘরে ভিকটিমকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে নিয়ে যায়। সেখানে ওই নারীকে পালাক্রমে পাঁচজন ধর্ষণ করে ও দুইজন পাহারা দেয়।
পরে ওই নারীর চিৎকারে এলাকার কর্তব্যরত নিরাপত্তা রক্ষী ও লোকজনদের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে আসামিরা পালিয়ে যায়।
সংবাদ পেয়ে মোহাম্মাদপুর থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং ভুক্তভোগী ওই নারীকে উদ্ধার করে। পরে ভিকটিমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পাঠানো হয় এবং প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহ করা হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
ডিসি এইচএম আজিমুল হক আরও বলেন, মামলার পর আশপাশের সিসি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে সাত ব্যক্তি ও তিনটি রিকশার উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়। প্রযুক্তির সহায়তা ও বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে মোহাম্মদপুর থানার চাঁদ উদ্যান এলাকা থেকে ভুক্তভোগীর মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয় এবং শাহিন খান নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে এ ঘটনায় সরাসরি জড়িত আসামি বিল্লাল হোসেনকে গাবতলী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকার ডেমরা থেকে আরেক আসামি আল আমিন হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বসিলা থেকে মো. সবুজ ও রাসেল ওরফে মোল্লা রাসেলকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ভোলার তজুমদ্দিন থানা থেকে শফিকুল ইসলাম নামে আরও এক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের হেফাজতে থাকা দুইটি রিকশা উদ্ধার করা হয়। দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তারে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চলছে।
Leave a Reply