ঢাকা, কক্সবাজারের পর দারিদ্রপীড়িত জেলা কুড়িগ্রাম জেলার সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের চরসুভারকুঠি গ্রামে স্থায়ীভাবে চালু হলো এক টাকার এই রেস্টুরেন্ট। এই রেস্টুরেন্টে পাওয়া যাচ্ছে বিরায়ানি, পোলাও, ভাত, মাছ, মাংস, ডিমসহ ১২ পদের খাবার। মনোরম ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসে তৃপ্তি সহকারে পছন্দের খাবার খেতে পেরে খুশি সুবিধাভোগীরা।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে সমাজে এমন অনেক অসহায়, দরিদ্র এবং গৃহহীন মানুষ আছেন যাদের তিনবেলা খাওয়া জোটে না। সেখানে শহরের রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাওয়া বিলাসিতা ছাড়া আর কিছুই না। কিন্তু এক টাকার বিনিময়ে পেট ভরে খেতে পেরে খুশি প্রত্যন্ত অঞ্চলের হতদিরদ্র এসব মানুষ। রেস্টুরেন্টটিতে রয়েছে পেশাদার বাবুর্চি, রেস্টুরেন্ট স্টাফ, মেন্যু কার্ড এবং বাহারি সব পুষ্টিকর খাবার। ৫০ জন মানুষ বসে খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে। আর একদিনে ৫ শতাধিক মানুষের খাবার আয়োজন করা হয়।
সুবিধাভোগী ছকিনা বেগম বলেন, ‘এক টাকার রেস্টুরেন্টে নাতি-নাতনি, বিয়াইন, বোনসহ আসছি। হামরা গ্রামের মানুষ কোনো দিন চিন্তা করতে পারিনি যে রেস্টুরেন্টে বসে খাবার খাবো। আজকে এক টাকায় পেট ভরে খেতে পেরে সবাই খুশি হয়েছে।’
সুবিধাভোগী বৃদ্ধা কাশেম আলী বলেন, ‘বাবা মোর বয়স মেলা হইছে। টাকার অভাবে কোনো দিন বড় বড় হোটেলে খাবার খেতে পারিনি। চা-বিস্কুট ৫ টাকা দিয়ে খাইছি। এখন জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় সেটাও হয় না। কিন্তু বউসহ এসে এক টাকায় এমন দামি খাবার খেতে পারবো ভাবতেই পারিনি। এক টাকায় মন মতো খেতে পেরে খুব খুশি হয়েছি বাবা।’
সুবিধাভোগী বুলবুলি আক্তার বলেন, ‘বাচ্চা নিয়ে এসেছি এক টাকার হোটেলে। ভাত, মাছ, মাংস, ডিম, সালাদ, ফল, মিষ্টি খেলাম। কামলা দেওয়া সংসারে শহরের হোটেলে গেলে কম করে হলেও ৪-৫শ’ টাকা খরচ হতো। কিন্তু এখানে এক টাকায় খেতে পেরে স্বপ্নই মনে হচ্ছে।’
স্বেচ্ছাসেবক হৃদয় বলেন, ‘আজ জীবনে প্রথমবারের মতো রেস্টুরেন্টে ওয়েটারের কাজ করছি। সেটিও বিনা পয়সা। এতে করে উপলব্ধি করতে পারবো যারা নিয়মিত হোটেলে ওয়েটার, বাবুর্চিসহ কর্মচারীদের ঘাম ঝরানো শ্রম। সত্যি আমি বেশ গর্বিত প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের জন্য এমন কষ্ট করতে পেরে।’
স্বেচ্ছাসেবক প্রধান আকরুম হোসেন বলেন, ‘বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকরা নিজে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দরিদ্র, এতিম, অসহায়দের খুঁজে বের করে তাদের টোকেন দেয়। পরে তারা এসে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের সুবিধা নেন।’
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের জনসংযোগ প্রধান সালমান খান ইয়াছিন বলেন, ‘বর্তমানে সপ্তাহে দুই দিন এই রেস্টুরেন্টের কার্যক্রম চলবে। তবে এই কাজে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে প্রতিদিন করার পরিকল্পনা আছে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০০ মানুষ এই রেস্টুরেন্ট থেকে সেবা দেওয়া সম্ভব। কুড়িগ্রামে এই রেস্টুরেন্ট একটি মডেল মাত্র। দেশের বিভিন্ন দরিদ্র এলাকায় এই ধরনের কার্যক্রম চালু করা গেলে ক্ষুধায় মানুষের কষ্ট থেকে মুক্তির পাশাপাশি পুষ্টিজনিত অভাবের রোগ থেকে মুক্তি মিলবে এই জনপদের মানুষের।
Leave a Reply