নিজস্ব প্রতিবেদক // গাছের সাথে বেঁধে গায়ে আগুন দেওয়া নারী সুফিয়া বেগম (৫০) মারা গেছেন। বুধবার (১১ জানুয়ারি) সকাল ৭টায় দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। কাশিয়ানী থানার ওসি ফিরোজ আলম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত ওই নারীর দেবর অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য লিয়াকত মোল্লাকে (৫০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭ সাতটার দিকে ঢাকার কদমতলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে কাশিয়ানী থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। কাশিয়ানী থানার এসআই দেওয়ান সাদেকুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুরে ওই নারীর ভাই আখতার হোসেন বাদী হয়ে কাশিয়ানী থানায় লিয়াকতসহ দু’জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরো ২/৩ জনের নামে একটি মামলা দায়ের করেন। (মামলা নং ৫ ,তাং ১০/০১/২৩। কাশিয়ানী থানার ওসি ফিরোজ আলম বলেন, গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দিকা নেতৃত্বে একদল পুলিশ কাশিয়ানী থানায় অবস্থান করে আসামির লোকেশন ট্রাকিং করেন। তারপর তাকে গ্রেফতারে ঢাকা অভিযানরত কাশিয়ানী থানা পুলিশ টিমকে তিনি নির্দেশনা দেন। সন্ধ্যা ৭ টার দিকে ওই টিম আসামি লিয়াকতকে ঢাকার কদমতলী এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। এই ঘটনার পরপরই কাশিয়ানী থানা পুলিশ লিয়াকতকে গ্রেফতারে অভিযান শুরু করে। ঘটনার সাড়ে ৮ ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ প্রধান অভিযুক্ত লিয়াকতকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। লিয়াকতকে রাতেই কাশিয়ানী থানায় আনা হয়েছে। বুধবার তাকে গোপালগঞ্জের আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করা হবে। মঙ্গলবার বেলা ১১ টার দিকে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার সাজাইল ইউনিয়নের বাঘঝাপা গ্রামে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে বড় ভাইয়ের স্ত্রীকে সুফিয়া বেগমকে বাড়ির উঠানের পেয়ারা গাছের সাথে বেঁধে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন দেবর লিয়াকত মোল্লা। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কাশিয়ানী হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আগুনে ওই নারীর শরীরের ৯০ ভাগ পুড়ে যায় বলে কাশিয়ানী ১০০ শয্যা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন। বাঘঝাপা গ্রামের হিরন মোল্লা ও ইয়াকুব মোল্লা জানান, এই গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য ইউসুফ আলী মোল্লার সাথে তার আপন ভাই লিয়াকত মোল্লার দীর্ঘ দিন ধরে পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। অভিযুক্ত লিয়াকত মোল্লাও একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য। লিয়াকাত মোল্লা তার পৈতৃক সম্পত্তির প্রাপ্য অংশ আগেই বিক্রি করে অন্যত্র বসবাস করছেন। কিন্তু এখনো তিনি পৈতৃক সম্পত্তি পাবেন বলে দাবি করে আসছেন। এই নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। এই বিরোধের জের ধরে মঙ্গলবার লিয়াকত তার ভাবী সুফিয়া বেগমকে ঘর থেকে বাইরে এনে উঠানে থাকা পেয়ারা গাছের সাথে বেঁধে তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। ১ বছর আগে লিয়াকত জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে তার ভাবী সুফিয়া বেগমের চুল কেটে দেয়। সেটি সালিশের মাধ্যমে মীমাংসা হয়। গতকাল ওই নারীর ওপর লোমহর্ষক ও নৃশংস ঘটনা ঘটেছে।
Leave a Reply