গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, ডাকাত দলের মূলহোতা হাছান জমাদ্দার ওরফে লেংড়া হাছান। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে ডাকাতি করে বোমা ফাটিয়ে ডাকাতি করেন। মূলত তিনি ভারতে বসে সহযোগিদের সহায়তায় বিভিন্ন এলাকার স্বর্ণের দোকানে ডাকাতির পরিকল্পনা করতেন। পরে দেশে এসে ডাকাতি শেষে আবারও ভারতে পালিয়ে যেতো।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- দলের মূলহোতা মো. হাছান জমাদ্দার ওরফে ল্যাংড়া হাছান (৩৪) ও তার সহযোগী মো. আরিফ (২৬), মো. আইনুল হক ওরফে ভোলা (৪২), মো. সাইফুল ইসলাম মন্টু (৪৫), মো. আনসার আলী (৫০), মো. শাহীন (৩৫)। তাদের কাছ থেকে ডাকাতিতে ব্যবহৃত একটি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, পাঁচটি চাপাতি ও ডাকাতি শেষে পালিয়ে যেতে ব্যবহার করা প্রাইভেটকার উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) হারুন অর রশীদ বলেন, ঢাকা, কেরানীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, ফেনী , চট্টগ্রাম , ময়মনসিংহের ভালুকা, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিনব কায়দায় বোমা ফাটিয়ে ডাকাতি করে আসছিলো দুর্ধর্ষ আন্তঃজেলা ডাকাত দলটি।
হারুন অর রশীদ বলেন, ডাকাত দলটির মূলহোতা ল্যাংড়া হাছান ভারতে বসে সহযোগীদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকার স্বর্ণের দোকান টার্গেট করতো। এরপর ডাকাতির আগে তারা সেই দোকানের আশেপাশে একটি বাসা ভাড়া নেয়। এরপর ডাকাত দলের সদস্যরা দোকানের আশেপাশে রেকি করে প্রস্তুতি গ্রহণ করতো। সব কিছু ঠিক হলে হাছান ভারত থেকে এসে দলে যোগ দেয়। প্রথমে বোমা ফাটিয়ে ও গুলি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ৬ থেকে ৭ মিনিটের মধ্যে দোকানের স্বর্ণালঙ্কার লুট করে আগে থেকে ঠিক করে রাখা গাড়িতে করে পালিয়ে যেতো।
তিনি বলেন, এই চক্রটি ডাকাতির মালামাল কোথায় বিক্রি করে সেই তথ্য আমরা পেয়েছি। আপনারা জানেন পুরান ঢাকার তাতিবাজারে কিছু চক্র রয়েছে যারা এই সকল মালামাল কিনে থাকেন। আমরা মালিক সমিতিকে অনুরোধ করবো এই সকল অসাধু চক্রকে প্রশ্রয় দিবেন না। তারা এই সকল মালামাল কেনার কারণেই এই সকল দুর্ধর্ষ চক্র ডাকাতি করছে। আমরা অনেকের নাম পেয়েছি। আমরা তাদেরকেও আইনের আওতায় আনবো।
ডাকাত দলের মূলহোতা ও মাস্টারমাইন্ড ন্যাংড়া হাছানের টার্গেট স্বর্ণের দোকান উল্লেখ করে গোয়েন্দা প্রধান বলেন, ২০০৮ সাল থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বোমা ফাটিয়ে ডাকাতি করতো। সে ভারতে বসে পরিকল্পনা করে দেশে এসে ডাকাতি করতো। এরপর ডাকাতি করে পাওয়া মালামাল ভাগাভাগি শেষে আবারও ভারতে পালিয়ে যেতো। ২০১২ সালে চট্টগ্রামে একটি দোকানে ডাকাতি করতে গিয়ে গোলাগুলির সময়ে পায়ে গুলি লাগে হাছানের।
তার বিরুদ্ধে ডিএমপিসহ দেশের বিভিন্ন থানায় ১৭টি মামলা রয়েছে।
ল্যাংড়া হাছান ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে কোনো প্রক্রিয়ায় ভারতে যেতো জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ বলেন, ন্যাংড়া হাছানের ভারতে নাগরিক কার্ড করেছে। তার পাসপোর্ট ইমিগ্রেশন থেকে ব্লক করে রাখা। তাই সে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে পালিয়ে যেতো৷ একইভাবে আবার ফিরে আসতো। সে ২০০৮ সাল থেকে ডাকাতি করে আসছে। তার আশ্রয়দাতাদের বিষয় খোঁজ খবর নেয়া হবে। ভারতে সে কিভাবে নাগরিক হলো সে বিষয় আমরা লোক পাঠিয়ে খোঁজ করবো।
গ্রেপ্তার চক্রের সদস্যদের স্বীকারোক্তি উল্লেখ করে হারুন বলেন, চক্রটি হাছানের নেতৃত্বে সারাদেশে ২৫ থেকে ৩০ টি ডাকাতি করেছে। এই ডাকাতির মাধ্যমে হাজার হাজার ভরি স্বর্ণ ছিনিয়ে নিয়েছে।
সম্প্রতি কেরানীগঞ্জ ডাকাতি করার পরে ফেনীতে ডাকাতি করে। সেখানে ডাকাতির সময়ে একজনকে গুলি করে। সেই ব্যক্তি পরে মারা গেছেন।
খিলগাঁও এলাকায় ডাকাতির ঘটনায় রামপুরা থানায় ডাকাতি ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
Leave a Reply