গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- তাওহিদুল কাউছার (৪২), মো. নাজিম (৩৫), মো. মাসুদ (৩৫), মো. দুলাল (৪৫), মিরাজ উদ্দিন (৩৩), আব্দুল আল মাসুদ (৩০) এবং সাইফুল ইসলাম (২২)।
শুক্রবার রাতে ডেমরার একটি প্যাকেজিং ভবনের সামনে এবং ভবনের দ্বিতীয় তলায় অভিযান চালিয়ে চোরাইকৃত প্রায় ২৫ হাজার পিস গার্মেন্টস সামগ্রী একটি কাভার্ড ভ্যানসহ তাদের গ্রেপ্তার করে র্যাব-৪।
শনিবার দুপুরে র্যাব-৪ এর সহকারী পরিচালক এএসপি মাজহারুল ইসলাম জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, রাজধানীর মিরপুর, উত্তরাসহ আশুলিয়া, সাভার ও গাজীপুরের বিভিন্ন ফ্যাক্টরি থেকে গার্মেন্টসের মালামাল বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করার উদ্দেশে চট্টগ্রাম বন্দরে নেয়ার সময় পথে কিছু কাভার্ড ভ্যান থেকে প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ দামি গার্মেন্টস মালামাল চুরি হয়ে যাচ্ছে।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে ছায়া তদন্তের এক পর্যায়ে ফ্যাক্টরি থেকে মালামাল চট্টগ্রাম বন্দরে নেয়ার সময় পথে কাভার্ড ভ্যান থামিয়ে গার্মেন্টস পণ্য চুরির খবরে গত রাতে অভিযান চালিয়ে গার্মেন্টস সামগ্রী ও একটি কাভার্ড ভ্যানসহ সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা ডাকাতচক্রের মূলহোতাসহ ৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধারকৃত গার্মেন্টস মালামালসমূহ সংশ্লিষ্ট পোশাক প্রস্তুতকারী সংস্থার কর্তৃপক্ষ তাদের বলে শনাক্ত করেছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর মিরপুর, উত্তরা, আশুলিয়া ও গাজীপুর থেকে বিভিন্ন দেশে রপ্তানির গার্মেন্টস মালামাল চুরির ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত।
জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, তারা মালামাল পরিবহনে নিয়োজিত চালকদের সাথে সংঘবদ্ধ হয়ে একটি ডাকাত চক্র গঠন করে পরস্পর যোগসাজশে বিগত কয়েক বছর ধরে গার্মেন্টস মালামাল কাভার্ড ভ্যান থেকে ডাকাতি করে স্থানীয় মার্কেটে চোরাইপথে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করছিলো।
প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এ ধরনের কয়েকটি চক্র ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সক্রিয় রয়েছে এবং প্রতি বছর এসব চক্রের মাধ্যমে শত কোটি টাকা মূল্যের দেশি পোশাক চুরি হয়ে যাচ্ছে।
গ্রেপ্তার চক্রটি সাধারণত কাভার্ড ভ্যানের ড্রাইভারদের সাথে সখ্যতা তৈরির মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার লোভ দেখানো ও ডাকাতির মালামাল বিক্রয়ের টাকার একটি অংশ দেয়ার কথা বলে তাদেরকে রাজি করিয়ে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নিকটবর্তী নির্জন এলাকার ভিতর কিংবা চক্রের সুবিধাজনক স্থানে কাভার্ড ভ্যান পার্কিং করাতো। পরে কাভার্ড ভ্যানটিকে তাদের লোড-আনলোড পয়েন্টে নিয়ে আসলে বিশেষ কৌশলে কাভার্ড ভ্যানের সিলগালা তালা না খুলে কাভার্ড ভ্যানের পাশের ওয়ালের নাট-বল্টু খুলে প্রত্যেক কার্টুনের ভিতরে থাকা মালামালের ৩০-৪০ শতাংশ মালামাল রেখে আবার আগের মতোই সঠিকভাবে কার্টুন বাঁধাই করে কাভার্ড ভ্যানে লোড করে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে নিয়ে যেত, যাতে করে ফ্যাক্টরি মালিক ও বন্দর কর্তৃপক্ষের কেউ সন্দেহ না করতে পারে।
বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, এ ডাকাতচক্রটি কার্টুনের মালামালের ওয়েট ঠিক রাখার জন্য যে পরিমাণের মালামাল কার্টুন থেকে চুরি করে সরিয়ে রাখে ঠিক সে ওজনের জুট কার্টুনের ভিতর মালামালের মাঝখানে দিয়ে কার্টুন প্যাকেট করে। যার ফলে বন্দরে স্ক্যানিং কিংবা ওয়েট মেশিনে কোনো ধরণের অনিয়ম ধরা পড়ে না। এছাড়াও মাঝে মাঝে তারা মালামালসহ সম্পূর্ণ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানও লুট করেছে বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে।
Leave a Reply