উজিরপুর (বরিশাল) সংবাদদাতা // জেলার উজিরপুরের শিকারপুর ইউপির ধনকুবের এক তামাক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আদালতের নিষেধাজ্ঞা না মেনে প্রবাসীর জমি দখল করে অবৈধভাবে স্থাপনা ও ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। আদালতের স্থিতাবস্থা উপেক্ষা করেই মীর সোহরাব হোসেন নামের ওই তামাক কারবারি প্রবাসীর জমি দখল করে মাদ্রাসার বহুতল ভবনের নির্মাণ কাজ চালাচ্ছেন।
এ ঘটনায় আদালতের আদেশের কপি সংযুক্ত করে থানায় অভিযোগ দিলেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুরে ভুক্তভোগী প্রবাসী ও তার ভাতিজা আনোয়ার হোসেন পান্নু সাংবাদিকদের কাছে আদালতের আদেশ অমান্য করে বিরোধীয় জমিতে নির্মাণ কাজ চালানের অভিযোগ এনে প্রশাসনের দ্রæত হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার শিকারপুর ইউপির পূর্ব মুন্ডপাশা গ্রামের সৌদি প্রবাসী হারুন অর রশিদ খলিফা ও ভাতিজা আনোয়ার হোসেন পান্নুর পৈত্রিক ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া এবং ক্রয়কৃত প্রায় ৭১ শতাংশ জমি ২০২০ সালে অবৈধভাবে দখল করেন স্থানীয় মীর সোহরাব হোসেন। তিনি (সোহরাব) অঢেল টাকার মালিক হওয়ায় কৌশলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে ওই প্রবাসীর জমিতে তিন তলা একটি মাদ্রাসা নির্মাণ করেন।
সেই সাথে অভিযুক্ত মীর সোহরাব হোসেন নিজের অবৈধ দখলবাজি ধামাচাঁপা দিতে সু-কৌশলে চরমোনাই পীর সাহেবের ব্যানারে মাদ্রাসা পরিচালনা করে আসছেন। এনিয়ে মীর সোহরাব হোসেন ও চরমোনাই পীরসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে বরিশাল বিজ্ঞ আদালতে একটি মামলাও চলমান রয়েছে। মামলার বাদী ভুক্তভোগী প্রবাসী হারুন খলিফা জানান, রাতারাতি শত কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়ার পরপরই মীর সোহরাব হোসেন ২০২০ সালে আমার ভোগ দখলীয় জমিতে কুনজর দেন। এরপরই সোহরাব কিছু জমির মালিকানা দাবি উঠিয়ে দ্রæত নির্মাণ কাজ চালিয়ে মারকাযুল কারীম সামেলা মাজেদ কওমী মাদরাসা নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে আমার প্রায় ৭০ শতক জমি দখল করেন।
সেই সাথে সোহরাব নিজের অবৈধ দখলবাজি ধামাচাঁপা দিতে সু-কৌশলে চরমোনাই পীর সাহেবের ব্যানারে মাদ্রাসা পরিচালনা শুরু করে। তখন সোহরাবের এই দখলবাজি নিয়ে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো সুফল পাননি ভুক্তভোগী। পরবর্তীতে উপায়ান্ত না পেয়ে ভুক্তভোগী ওই প্রবাসী ও তার অন্যান্য ওয়ারিশগণ বাদী হয়ে জেলার উজিরপুর সহকারি জজ আদালতে মীর সোহরাব হোসেন ও চরমোনাই পীরসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে একটি দেওয়ানি মোকদ্দমা (নম্বর- ৭৯/২০২০) দায়ের করেন। মামলাটি ওই আদালতে চলমান রয়েছে। পরে এক আবেদনের প্রেক্ষিতে চলতি বছরের গত ২ অক্টোবর ওই বিরোধপূর্ণ জমির ওপর আদালত অস্থায়ী স্থিতাবস্থা জারি করেন। আদেশে আদালতের বিচারক মোছা: আসমা মাহমুদ ওই সম্পত্তিতে বিবাদীগণের কোনও প্রবেশাধিকার ও নির্মাণ কাজ না করার অস্থায়ী নির্দেশ দেন। আদালত থেকে এই বিষয়ে বিবাদীদেরকে নোটিশও দেওয়া হয়েছে। তবে আদালতের নির্দেশের কয়েকদিন পরেই আদেশ অমান্য করে ওই জায়গায় ফের নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন বিবাদী মীর সোহরাব হোসেন।
আরেক ভুক্তভোগী আনোয়ার হোসেন পান্নু আরও জানান, বিবাদী মীর সোহরাব ও তার অনুসারীরা আমার স্বামীর মালিকীয় ৭০ শতাংশ দখল করেছে। এনিয়ে আদালতে মামলার করা হয়েছে, কিন্তু সোহরাব আদালতের নির্দেশ অমান্য করেও নির্মাণ কাজ চালাচ্ছেন। এমতাবস্তায় আমি আদালত ও প্রশাসনের দ্রæত কার্যকরী হস্তক্ষেপ চাচ্ছি। এদিকে অভিযুক্ত মীর সোহরাব হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি বিবাদী হারুন খলিফার অন্যান্য ওয়ারিশদের কাছ থেকে মোট ৬৬ শতক জমি ক্রয় করে মাদ্রাসা নির্মাণ করেছি। ওই জায়গা আমার ক্রয়কৃত, আমি কারো জায়গা দখল করিনি। আমার কাছে কাগজপত্র আছে। যা নিয়ে আমি বিবাদীদের সাথে একাধিকবার শালিশ বৈঠকের মাধ্যমে মিসাংসার চেষ্টা করেছি, কিন্তু তারা রাজি হননি। আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে নির্মাণ কাজ চালাচ্ছেন এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি আদালতের আদেশ অমান্য করিনি।
আদালত থেকে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর নির্মাণ কাজ বন্ধ ছিলো। সম্প্রতি তিন-চারদিন আগে উচ্চ আদালত থেকে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা বাতিলে একটি আদেশ হয়েছে, তাই এখন নির্মাণ কাজ পুনঃরায় শুরু করা হয়েছে। আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, ‘আদালত থেকে আমাকে কোনও আদেশ দেননি। তারপরেও অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার উপর আদালতের দেওয়া আদেশ বাস্তবায়নে বিবাদীদের নোটিশ করা হয়েছে। বিবাদী যদি আদেশ অমান্য করে তাহলে বাদী পক্ষ প্রমানাদি নিয়ে বিষয়টি আদালতে অবগত করবেন। তখন আদালত যদি আমাকে কোনও আদেশ দেন তাহলে আমি ব্যবস্থা নেবো। তাছাড়া আমার কিছু করার নেই।
Leave a Reply