সমকালীন রাজনীতি নিয়ে দৈনিক আমাদের সময়ের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া। ক্ষমতাসীন চৌদ্দ দল থেকে বের হয়ে যাওয়ার কারণও জানিয়েছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক মুহম্মদ আকবর
শুরুতেই কথা হয় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) থেকে বেরিয়ে আসার বিষয়ে। শরীফ নুরুল আম্বিয়া মনে করেন, এটি অবধারিত ছিল। কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ২০১০ সালে একটা কাউন্সিল হয়। ওই কাউন্সিলে আমি সাধারণ সম্পাদক হই। তখন কয়েকটি সিদ্ধান্ত হয় ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতির বিরুদ্ধে। সিদ্ধান্ত হয়, কেউ দুই মেয়াদের বেশি দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকতে পারবেন না। সরকার ও দল আলাদা থাকা উচিত- এমন সিদ্ধান্তও হয়। কিন্তু ২০১৬ সালের কাউন্সিলে সব উল্টে দেওয়া হয়। তার অবধারিত পরিণতি হিসেবে বিভক্ত হয় দল। আরও অনেক কিছুই আছে। এর পরও ঐক্যের জন্য একটা লম্বা সময় গেছে। কিন্তু তারা সেই ঐক্য চায়নি। ফলে আমরা আমাদের পথেই হেঁটেছি। সম্প্রতি আমাদের কাউন্সিল হয়েছে। কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে কিছু পরিবর্তন এসেছে। ১৯৭২ সালে আমরা যে লক্ষ্য নিয়ে দল গঠন করেছিলাম, সেই লক্ষ্যটি ঠিক রেখে গণতন্ত্র, সমতা ও ন্যায়বিচার হাসিল করার জন্য কাজ করছি এবং করব। এখানে আমরা তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে আসছি।
চৌদ্দ দল ছাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাসদের কাউন্সিলের আগে ন্যাশনাল কমিটির সভা হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, চৌদ্দ দলে থেকে আমাদের লাভ নেই। চৌদ্দ দলে আওয়ামী লীগ যা সিদ্ধান্ত নেয়, তা করতে হয়। কমিটির মিটিংয়ে যে আলাপই হোক, শেষ পর্যন্ত নাসিম সাহেব থাকবেন, তিনি ব্রিফ করবেন। পরে আমু ভাই এসেছেন। উনি আসার পর তো করোনা এসেছে, সেখানে জুম মিটিং হয়। নাসিম ভাই (মোহাম্মদ নাসিম) কিছু একোমোডেট করতেন। তিনি চাইতেন ভিন্নমতগুলো আলোচনায় আসুক। কিন্তু আমু ভাইয়ের বক্তব্যগুলো স্পষ্ট শুনেছি। তিনি বলেছেন, চৌদ্দ দলের কাজ হলো- সরকারকে সাপোর্ট করা; সরকারের পাশে দাঁড়ানো এবং সহযোগিতা করা। প্রত্যেকটা দলের একটা নীতি আছে, আদর্শ আছে। ফলে সেখানে সব দল তো সরকারকে সাপোর্ট নাও করতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা চৌদ্দ দলের বিষয়ে ২০১৮ সালের নির্বাচনে স্রেফ বলেছিলাম যে, কাজটা ঠিক হয়নি। আপনারা আগের রাতে ভোট করলেন এবং যারা ভোটার তাদের ইনসাল্ট করা হলো- এটি অন্যায়। এই অন্যায় করা উচিত হয়নি। কিন্তু চৌদ্দ দলে আওয়ামী লীগের চাটুকাররা বলেছেন যে, নির্বাচন ঠিক আছে। এসব বলার পর ওইখানে পরিবেশটা অন্যরকম ছিল। কাজেই ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর চৌদ্দ দলের রাজনীতিতে প্রত্যেক দলের রাজনীতি চালিয়ে যাওয়ার সুযোগটা একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে দেওয়াই চৌদ্দ দলের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার জন্য আমি জোট করব কেন? কাজেই আমাদের ন্যাশনাল কমিটিতে আমাদের সিদ্ধান্ত হলো- চৌদ্দ দল আমাদের অতীত। এই জোটের গঠনে আমরা ছিলাম। এখানে অনেকগুলো সফল আন্দোলনে আমরা ছিলাম। এখন আর সেটি চালিয়ে যাওয়ার দরকার আছে বলে আমাদের মনে হয়নি।
অনেকেই বলেন, ২০১৪ সালে চাওয়া-পাওয়ার হিসেবে গরমিল থাকায় বাংলাদেশ জাসদ জোট ছেড়েছে। এ বিষয়ে আম্বিয়া বলেন, চৌদ্দ দলে আমাদের যেসব প্রার্থী ছিলেন, তাদের সমর্থন করেছি। এটি সত্য যে, ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তেমন ভূমিকা পালন করতে পারেনি। নির্বাচন করেছে ইউএনও-টিএনও, ওসি, ডিসি, এসপিরা।
আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিষয়ে জানতে চাইলে আম্বিয়া বলেন, আগামী নির্বাচনে মানুষ যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে, তার পরিবেশটা আগে নিশ্চিত করতে হবে। সে রকম যদি না হয়, তা হলে কার নিবন্ধন আছে, আর কার নেই, এর কোনো মিনিং থাকবে না। কাজেই নিবন্ধন বিষয়টি আসছে রাজনীতিটাকে একটা গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার জন্য। এই নিবন্ধন প্রসেসটাই উঠিয়ে দেওয়া উচিত। যদিও নিবন্ধনের জন্য আমরা কোর্টে নিয়মিত পদ্ধতি মেনেই যাব। আশা করি হাইকোর্টের বিচারে আমাদের নিবন্ধন দেওয়া হবে।
নিবন্ধনের জন্য কোর্টের বিষয়টি এলো কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু নির্বাচন কমিশন আমাদের নিবন্ধন দেয়নি। তাই কোর্টের দারস্থ হয়েছি।
নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে ভাবনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের বক্তব্য হলো- গ্রহণযোগ্য একটা সরকার হতে হবে। চলমান সরকার ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন দিলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করলে সমাধান হয়ে যাবে।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিয়ে আম্বিয়া বলেন, এর আগে হলো- নির্বাচন কার তত্ত্বাবধানে হবে; দ্বিতীয় হলো- প্রশাসন, তারপর নির্বাচন কমিশন। এবং তার পরে আমরা যারা রাজনীতি করি, তাদের বিষয়। আগে এক নম্বর বিষয়টি সমাধান হোক। এ ছাড়া নিরপেক্ষ নির্বাচনের শর্ত হলো- নির্বাচনকালীন সরকার নিরপেক্ষ হতে হয়। এ নিরপেক্ষ সরকারটা কীভাবে করা যায়, তা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করলেই বের হয়ে যাবে।
নির্বাচনে অংশগ্রহণের পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের দলের কমিটি আছে, তারা সিদ্ধান্ত নেবে। ইভিএম ও ব্যালটের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের দাবি হলো- ‘মানুষ যেন ভোটটা দিতে পারে। ভোটকেন্দ্র কে নিয়ন্ত্রণ করবে’ তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। আসলে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন সরকার নিরপেক্ষ হতে হবে।
বাংলাদেশ জাসদ কোনো জোটে যাচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন সময়টা হচ্ছে গণতন্ত্র অর্জনের সময়। দেশটাকে গণতান্ত্রিক পথে ফিরিয়ে আনার সময়। এ জন্য আমরা প্রগ্রেসিভ এবং ডেমোক্রেটিক প্ল্যাটফরম গড়ার চেষ্টা করছি। সে জন্য আমাদের অনানুষ্ঠানিক পর্যায়ের আলোচনা চলছে।
Leave a Reply