বরিশাল // নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলছে এনজিওর কার্যক্রম। ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। যে কারণে ব্যাঙের ছাতার মতো যেখানে সেখানে গড়ে উঠেছে এনজিও। এদের স্বেচ্ছাচারিতার কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ।
বরিশালে প্রায় দুই শতাধিক এনজিও রয়েছে। এদের মধ্যে হাতে গোনা গুটিকয়েক এনজিও সরকারি নির্দেশনা মেনে কার্যক্রম পরিচালনা করলেও বাকি এনজিওগুলোর কোনো বৈধতা নেই। সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে নামকাওয়াস্তে অনুমোদন নিয়েই বেসরকারি সংস্থাগুলো যত্রতত্র ছড়িয়ে পড়েই নিজেদের কাজ শুরু করছে। অনুমোদন, নিয়মকানুন, ও শৃঙ্খলা কোনো কিছু নেই এই এসব এনজিওগুলোর। মুখে আদর্শের কথা বললেও উদ্দেশ্য ভিন্ন। কারণ এদের লক্ষ একটাই, এনজিও কর টাকা গড়।
সূত্র জানায়, অলাভজনক, সেবামূলক, সহায়তাকারী সংস্থা হিসেবে নিজেদের তুলে ধরে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে অধিকাংশ এনজিও লাভ-লোকসান, সুদ চক্রবৃদ্ধি সুদের ব্যবসাতেই অধিক আগ্রহী। অনেক এনজিও আবার গণতন্ত্র, বাজেট নির্বাচন পর্যবেক্ষণসহ দেশ পরিচালনায় স্বচ্ছতার নামে রীতিমত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সরকার ও রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ কর্মকাণ্ডে নানামুখী হস্তক্ষেপ করছে তারা। আবার মানবাধিকার সুরক্ষার নামে কিছু এনজিও নানা ভাবে বরিশালের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার কাজে লিপ্ত রয়েছে বলেও জানা যায়।
এনজিওর সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে ভাঁওতাভাজি, প্রতারণা করছে সাধারণ সহজ সরল মানুষদের সাথে। এদের জেলা উপজেলা ইউনিয়ন, গ্রাম এমনকি মাঠ পর্যায়ও শাখা প্রশাখা রয়েছে। লোভনীয় অফার, বিভিন্ন কর্মসূচি দেখিয়ে সদস্য সংগ্রহ করে থাকে এরা। এ সব সদস্যদের দেখিয়ে মাঝে মধ্যে ২/১টি লোক দেখানো প্রজেক্ট কর্মসূচি পালন করে নিজেদের কর্তব্য শেষ এবং প্রজেক্টের পুরো টাকা আত্মসাত করে। এরপরে এদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। কিছু এনজিওদের চওড়া সুদের কারণে নিঃস্ব হয়েছে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের একাধিক পরিবার। এনজিওর আইন সংশোধন, জেলায় জেলায় পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা চালুসহ সরকারি বিধি নিষেধের নানা কড়াকড়ি করেও এদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তারপরও বিভিন্ন প্রকল্প প্রণয়ন ও জনগোষ্ঠীকে সহায়তার নামে কোটি কোটি টাকা বিদেশি দাতা সংস্থার কাছ থেকে সাহায্যের নামে অনুদান এনে দেদারছে লুটপাট করছে এনজিওগুলো।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পথ শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, পুনর্বাসনের লক্ষ্যে বছরের পর বছর কার্যক্রম চালালেও শিশুভাগ্য উন্নয়ন ঘটেছে এমন নজির বিরল। মাঠ পর্যায়ে তদারকি ব্যবস্থা সু-দৃঢ় না হওয়ার সুযোগ নিয়ে তারা কৌশলী কাগজে কলমে সব কিছু ঠিকঠাক করে রাখলেও বাস্তবে কার্যক্রম পরিচালনার চাইতে সভা সেমিনার করে মিডিয়া কাভারেজ পেতে এদের জুড়ি নেই। জেলা প্রশাসক ও সমাজ কল্যাণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী প্রায় দেড়শত এনজিও রয়েছে। মাঠে জোরালো ভাবে কাজ করছে মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি এনজিও। এই এনজিওগুলো সরকারি নির্দেশনা মেনে কাজ করে। কিছু এনজিও তালিকায় রয়েছে কিন্তু এদের মাঠে দেখা যায় না। আর কিছু এনজিও রয়েছে তাদের কোনো বৈধতা নেই বললেই চলে। তারা মাঠে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। এমন কিছু এনজিও রয়েছে যাদের মাঝে মধ্যে ২/১টি জেলা প্রশাসক ও সমাজ কল্যাণের প্রোগ্রামে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে দেখা যায়। মুখে মিষ্টি কথা বলে নিজেদের স্বার্থ আদায় করাই এ সকল এনজিওদের মূল লক্ষ্য। অনেক এনজিও রয়েছে যারা বছরের পর বছর রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। এনজিওদের কাছ থেকে কোনো রাজস্ব আদায় করছে না সরকার। প্রতি বছর দাতা সংস্থা ও সরকারের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকার প্রজেক্ট এনে সহজ সরল জনগণের সাথে নাটকীয়ভাবে প্রজেক্টের টাকা আত্মসাত করছে।
বরিশাল ডিসি অফিসের প্রভেশন অফিসার সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, যে সব এনজিও সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে। এনজিওদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে আমরা ব্যবস্থা নেব।
বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, এনজিওদের মাসিক রিপোর্টের প্রতিবেদন দিতে হবে। এমনকি মিটিংএ উপস্থিত থাকতে হবে। যারা উপস্থিত থাকবে না তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে। যে সব অবৈধ এনজিও রয়েছে তাদের তালিকা তৈরি করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, এনজিওদের কাজ জনগণের সাহায্য সহযোগিতা করা। যে সব এনজিও সাধারণ মানুষদের সাথে প্রতারণা করছে তাদেরও আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
Leave a Reply