প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ফেব্রুয়ারিতে দেশটিতে রাশিয়ার হামলা শুরুর পরই মূলত ইউক্রেনের অর্থনীতিতে বড় ধরনের আঘাত লাগে। তাতেই গত বছরের তুলনায় এ বছরের প্রথম ৯ মাসে দেশটির অর্থনীতি প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সংকুচিত হয়ে গেছে। দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ীই যুদ্ধের কারণে অর্থনীতির এ সংকোচন ঘটেছে।
ইউক্রেনের অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, যুদ্ধের কারণে দেশটির বিভিন্ন শিল্পকারখানার উৎপাদন, পণ্য আমদানি ও সরবরাহব্যবস্থা মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সম্প্রতি দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের শহর জাপোরিঝঝিয়ার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরবরাহ আটকে গেছে। পাশাপাশি সেপ্টেম্বর মাসে খারাপ আবহাওয়ার কারণে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে ফসল কাটাও সম্ভব হয়নি। তাতে অর্থনীতির গতি মন্থর হয়ে গেছে।
অর্থনীতি সংকুচিত হলেও ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরুর পর গত সেপ্টেম্বরে প্রথম রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি দেখেছে ইউক্রেন। গত মাসে দেশটির রপ্তানি আগস্ট মাসের চেয়ে ২৩ শতাংশ বেড়েছে। গত জুলাইয়ে কৃষ্ণসাগর দিয়ে পণ্য পরিবহনে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে রাশিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তি করে ইউক্রেন। ওই চুক্তির ফলে দেশটি থেকে পণ্য রপ্তানির পরিমাণ বাড়তে থাকে।
রয়টার্সকে ইউক্রেনের অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, সেপ্টেম্বরে দেশটির অর্থনীতির অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে রাশিয়া এখনো ইউক্রেনের ভূখণ্ডে গোলাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে। এর ফলে রপ্তানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য উভয়ই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আর সরকারও চাপে রয়েছে। অব্যাহতভাবে উৎপাদন কমে যাওয়া, অবকাঠামো ও আবাসিক ভবনগুলো ধ্বংসের কারণে অর্থনীতির গতি কমে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে চলমান যুদ্ধ কত দিন স্থায়ী হবে, তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা। এতে দেশটির উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
গত জুলাইয়ে ইউক্রেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, চলতি বছর দেশটির অর্থনীতি এক-তৃতীয়াংশ সংকুচিত হতে পারে। তবে ২০২৩ ও ২০২৪ সালে ইউক্রেনের অর্থনীতি যথাক্রমে ৫ ও ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। এদিকে বিশ্বব্যাংক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইউক্রেনের অর্থনীতি চলতি বছর প্রায় ৪৫ শতাংশ সংকুচিত হবে।
সারা বিশ্বে গমের বড় সরবরাহকারী দেশ রাশিয়া ও ইউক্রেন। ইউরোপ অঞ্চলের প্রায় ৪০ শতাংশ গম যায় রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। আর মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ ককেশাসে প্রায় ৭৫ শতাংশ বা তার বেশি গম আমদানি হয় রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। এমনকি বাংলাদেশের গমের একটি বড় অংশও আসত রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে। যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে এই গম রপ্তানি বাণিজ্যে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে।
Leave a Reply