স্টাফ রির্পোটার ॥ বাবুগঞ্জের মাধবপাশার সুদ ব্যবসায়ী বাবুলের পাতা সুদের ফাঁদে পা দিয়ে পরিবার নিয়ে গৃহহারা হয়ে পরেছে শত শত পরিবার। সুদে নেয়া টাকার তিনগুন দিয়েও পরিশোধ করতে পারছে না বাবুলের টাকা। অনেকের বিরুদ্ধে নেয়া টাকার কয়েকগুন বেশি লিখে করছে চেক জালিয়াতির মামলা। টাকা না দিতে পারায় অনেকে হচ্ছে বাবুলের সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলার শিকার। এ নিয়ে একাধিকবার শালিস বিচার হলেও মানছে বেপরোয়া বাবুল।
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়নের বাড়ৈখালী গ্রামের সুদ ব্যবসায়ী বাবুল হাওলাদার (৫০) এর ফাঁদে পা দিয়ে শতশত পরিবার নিঃস্ব হয়ে পরেছে। নির্যাতনের শিকার হয়েছে অর্ধশতাধীক পরিবার। চিহিৃত সুদের ব্যবসায়ী বাবুলের এলাকায় প্রকাশ্যে চলছে সুদের রমরমা ব্যবসা। অন্যকোন আয়ের উৎস্য না থাকলেও তিনি সুদের টাকায় আলিসান বাড়ী তৈরি করছেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
যথযথ কতৃপক্ষের নজড়দারী না থাকায় সুদব্যবসায়ীর বেড়াজালে জিম্মি হয়ে পরেছে শতশত গড়িব অসহায় পরিবার। চক্রবৃদ্ধি হারে সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে ভুক্তভোগীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। অনেকেই ঋনের বোঝা মাথায় নিয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে জানা গেছে। সুদ ব্যবসায়ী বাবুল হাওলাদার ও নির্যাতনের শিকার ৮টি পরিবার ইতিমধ্যে মাধবপাশা ইউনিয়ন পরিষদে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। কেউ কেউ বিচার চেয়ে আদালতের স্মরনাপন্ন হয়েছে।
লাফাদী গ্রামের বাসিন্দা মো: কাওসার জানায় গত একমাস আগে আমার একটি কন্যা সন্তান হয়। কিন্তু আমি এখন পর্যন্ত আমার সন্তানের মুখ দেখতে পারি নাই। কারন বাবুলের কাছ থেকে জরুরী প্রয়োজনে সুদে টাকা নেই।
কিন্তু এর পরে তার টাকার সুদসহ তিনগুন টাকা ফেরত দেই। পরে তাকে দেয়া আমার ব্লাংক চেক ও স্ট্যাম্প ফেরত চাই। কিন্তু বাবুল আমার কাছে আরো টাকা দাবী করে। এর পরে এ নিয়ে মাধবপাশা ইউনিয়ন পরিষোদে একটি শালিস হয় এবং বাবুল আমাদের কাছে কোন টাকা পায়না বলে শ্বিকার করে। চেক ও ষ্ট্যাম্প ফেরত দেয়ার কথা বলে। কিন্তু বাবুল তা না করে আমার বিরুদ্ধে আদালতে ৫লক্ষ টাকার একটি চেক জালিয়াতি মামলা করে। ০৮ ফেব্রুয়ারি রাতে নির্যাতনের শিকার বিনয়কাঠী ইউনিয়নের মৃত আঃ খালেক আকন এর ছেলে আব্দুল জলিল বলেন, ২০১৮ সালে ফেব্রুয়ারী মাসে আমি ও আমার বোন ৪০হাজার টাকা নেই বাবুলের কাছ থেকে। ইতিমধ্যে ৪০হাজার টাকায় তাকে ৫লক্ষ টাকা পরিষোধ করি। করোনাকালীন কিস্তি অনুযায়ী টাকা দিতে না পারায় আমাকে ডেকে নিয়ে বলে ১৭ লক্ষ টাকা পায় সে। বুধবার আমাকে জরুরি কথা আছে বলে বাড়িতে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করে ও আটকে রাখে। একপর্যায় আমার বোনের কাছ থেকে ফাঁকা চেকের পাতা ও স্টাম্পে সই রেখে ছেড়ে দেয়।
একই রকম নির্যাতনের শিকার হয় বাড়ৈখালী গ্রামের দেলোয়ার হোসেন তালুকদারের ছেলে সোহাগ। তিনি বলেন, বাবুলের কাছ থেকে আমি ৪০হাজার টাকা নিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। বাবুল মাসে ১হাজার টাকায় ৩শত টাকা সুদ নেয়। ১লক্ষ টাকায় নেয় ৩০হাজার টাকা। আমি ৪০ হাজার টাকায় ৫লক্ষ টাকার বেশি পরিষোধ করলেও সে আমাকে তার বাসায় ডেকে নিয়ে নির্যাতন ও মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। আমি এ ব্যপারে আদালতের স্মরনাপন্ন হয়েছি।
ভুক্তভোগী মাসুম মোল্লা ,কাওসার হাওলাদারসহ অসংখ্য লোক বাবুল হাওলাদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে উর্দ্ধতন কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন।
সুদ ব্যবসায়ী বাবুল হাওলাদার সাংবাদিকদের দেখে ঘর থেকে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ায় তার বক্তব্য পাওয়া যায় নি। তার স্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন আমরা যা বলার কোর্টে বলবো।
মাধবপাশা ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ¦ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ইতিমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ বরাবর ৭/৮জন ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। আমার কাছে অনেকে মৌখিক অভিযোগ করেছে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, সরকারী নির্দেশনা ছাড়া কোন প্রকার সুদ গ্রহন করা এবং উচ্চ হারে সুদ গ্রহন ও সুদের টাকা আদায়ে নির্যাতন করা বড় ধরনের অপরাধ। এ ব্যপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিত। তবে যারা স্থানীয় পর্যায় সুদ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা নেয় তাদেরও সচেতন হওয়া দরকার।
Leave a Reply