অনলাইন ডেস্কঃ বাকেরগঞ্জে শৈশব নামের এক যুবককে মাদক, জাল টাকা ও বিদেশি অস্ত্রসহ আটকের ঘটনায় সাজানো বলে দাবী করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তার মা সাজেদা ইয়াসমিন। গতকাল তিনি হয়রানীর অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেসময় তিনি লিখিত বক্তব্যে জানান, গত ৭ সেপ্টেম্বর বুধবার বাকেরগঞ্জ উপজেলার ৭ নং কবাই ইউনিয়নের পেয়ারপুর আমাদের নিজ বাসভবনে প্রশাসনের নির্ভরযোগ্য ইন্টেলিজেন্ট ফোর্সেস র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন র্যাব এর একটি টিম ‘র্যাব সোর্সের’ সাজানো নাটকে আকস্মিক অভিযান চালিয়ে আমার ছোট পুত্র শৈশবকে মাদক , জাল টাকা ও বিদেশী পিস্তলসহ গ্রেফতার করেছে ।
র্যাব সদস্যরা সেদিন আমার বাসবভনে তল্লাশির সময় আমার বাসার মালামাল, জরুরী কাগজপত্র , আসবাবপত্র ভেঙ্গে ছুড়ে ফেলে রাখে। মনে হচ্ছিল, আমার বাসাটি যেন একটি যুদ্ধক্ষেত্র। তবে তল্লাশির ক্ষেত্রে সম্ভবত সবকিছুই সম্ভব এটিই তাদের দ্বায়িত্ব। এছাড়া অভিযান পরিচালনা করাকালে আমি, আমার মেয়ে ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ লোকজনদেরকে দূরে সরিয়ে রেখে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
সাজেদা আরও জানান, পরবর্তীতে ঘরে ঢুকেই মেহমানখানায় বিছানার চাদর জাগিয়ে চিৎকার দিয়ে বললেন এক লক্ষ টাকার জাল নোট পাওয়া গেছে! কিছুক্ষণ পর বললেন হাজার খানেক ইয়াবা পাওয়া গিয়েছে! এর কিছুক্ষণ পর বললেন একটি বিদেশি পিস্তল পাওয়া গিয়েছে! আমি বলতে চাচ্ছিনা যে, এগুলো বাসায় পাওয়া যায়নি বা পাওয়া যেতে পারেনা । অবৈধ জিনিসপত্রের সংখ্যা শুনে এটি সুস্পষ্ট যে ঘটনাটি র্যাবের সোর্সের সাজানো নাটক। এগুলো পাওয়া যেতে পারে মানেই তো এই নয় যে এগুলো আমরা রেখেছি।
তিনি আরও বলেন, পেয়ারপুরে প্রায় দীর্ঘ দেড়শ শত বছরের একটি ঐতিহ্যবাহী বংশপরম্পরায় একটি ইতিহাস সমৃদ্ধ এবং সম্মানিত এই কুদ্দুস মিয়ার পরিবার । র্যাব যে ভবনটিতে অভিযান করেন, সে ভবনটিতে আমি এবং আমার স্বামী আব্দুল কুদ্দুস মিয়া, তিন মেয়ে ও দুই ছেলেসহ ব্যক্তিগত মার্কেটের নিজ প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে দীর্ঘদিন যাবৎ বসবাস করে আসছি। আমাদের এই ভবনে ইসলামি ব্যাংক ও ভবনের নিচের এক অংশে ব্রাক ব্যাংক ভাড়া থাকে । এছাড়াও ভালো ভালো কিছু প্রতিষ্ঠান ও কিছু ফ্যামিলি বাসা ভাড়া দিয়ে থাকি। এসব থেকে যা আয় হয় তাতে আমাদের পরিবার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ ভালো ভাবেই চলতে সক্ষম। অবৈধ পথে উপার্জন করার প্রশ্নই আসে না।
সংবাদ সম্মেলনে সাজেদা ইয়াসমিন আরও জানান, ইতিপুর্বে আমার স্বামী আব্দুল কুদ্দুস মিয়ার সাথে স্থানীয় কয়েকজন কালোবাজারির সঙ্গে জমিজমা সংক্রান্ত মামলা চলমান ও সরকারের কথিত আমলার পরিবেশ দূষণ ইটভাটা নির্মাণ করতে বাধা দিলে সেটিই আমার স্বামী ও আমার সন্তানের জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায়। এই প্রতিবাদের জের ধরে কিছুদিন আগে আমার স্বামী আব্দুল কুদ্দুস মিয়া ঢাকায় অবস্থান কালে তাকে তুলে নিয়ে গুম করার চেষ্টাও করা হয়। গোপন জায়গায় আটকেও রাখা হয়। শত্রুরা যখন কোনকিছুতেই তাকে পরাস্ত করতে পারেনি তখন এরকম এক কূটবুদ্ধির আশ্রয় নেয়। একজন অভাগী মা হিসেবে এমন নির্মাণ দৃশ্য পুত্র শৈশবকে যেভাবে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছিল মা হিসেবে আমার বুকটা ফেটে গিয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, ব্যাক্তিগত আক্রোশ, এবং আমাদের জমিজমা লুটপাট করার উদ্দেশ্যে এতটা হীন পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে সেটি আমি কোনভাবেই মানতে পারিনা।
র্যাব এর অভিযান শুরু করার পূর্বেই প্রতিপক্ষ একদল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ব্যক্তিগত পেইজে প্রকাশ করেন যে,’ দুটি আগ্নেঅস্ত্র, হাজার হাজার পিস ইয়াবা ও নগদ কয়েক লক্ষ জাল টাকাসহ মাদক ব্যবসায়ী শৈশব গ্রেফতার’। এ সব আগেই নিশ্চিত হলো কিভাবে ? শৈশব এত সংখ্যক অবৈধ জিনিস নিয়ে গ্রেফতার এটা তাদেরই পাতানো ফাঁদ। অথচ র্যাব এর পক্ষ হতে সুস্পষ্ট জানানো হয় প্রেস রিলিজ করে আসামি গ্রেফতার ও রিকভারির বিষয়ে জানানো হবে। পরের দিন আনুষ্ঠানিক প্রেস রিলিজ করে র্যাব দফতর হতে জানানোও হয়। বিশেষ করে এমন একটি অভিযানের ব্যাপারে কাছাকাছি থাকা স্থানীয় থানার কর্তৃপক্ষ কিছুই জানেন না বলে বাকেরগঞ্জ থানার পক্ষ হতে সুস্পষ্ট জানানো হয়েছে। এটা সুস্পষ্ট যে, উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে আমার স্বামী কুদ্দুস মিয়া ও আমার পুত্র মেহেদী হাসান শৈশবকে ইয়াবা, জাল টাকা ও অবৈধ অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে।
সাজেদা বলেন, এর সুস্পষ্ট কারণ হলো, র্যাব এর অভিযান পরিচালনা করার সময় রাষ্ট্রের অনুমোদিত নির্ভরযোগ্য কোনো গণমাধ্যম বা স্থানীয় কোন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত রাখেননি। গ্রেফতারের ব্যাপারে জানানো হলেও রিকোভারী অবৈধ জিনিসপত্রের ব্যাপারে একদিন পরে জানানো হয় । এই অবৈধ ইয়াবা, পিস্তল ও জাল টাকা অভিযানের ব্যাপারে যে বা যারা র্যাব সোর্স হিসেবে কাজ করেছেন নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে র্যাবের সোর্সের ব্যাপারে নিশ্চিত করতে হবে, তা না হলে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে একটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের এবং গণতন্ত্রের ধ্বংস হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আমার স্বামী বিরোধী দলের রাজনীতি করেন বলে আমারা সঠিক নিয়মতান্ত্রিক আইনের সহায়তা পাবো না এমনটি হতে পারে না।
এসময় সাজেদা ইয়াসমিন সাংবাদিকদের নিকট ঘটনার আড়াল থেকে সত্য ঘটনাকে তুলে ধরার অনুরোধ জানান। এছাড়া তিনি সুবিচার প্রত্যাশা করেন।
Leave a Reply