বিশেষ প্রতিনিধি // মেহেন্দিগঞ্জে সংখ্যালঘু পৌরসভার সহকারী লাইসেন্স ইন্সপেক্টর মিঠুন নাথকে মারধর করার ঘটনায় সাংসদ পংকজ নাথ’র অনুসারী হামলাকারীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের এবং প্রতিবাদে ২দিনের কর্মবিরতি কর্মসূচী পালন করেছে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সংখ্যালঘু পৌরসভার সহকারী লাইসেন্স ইন্সপেক্টর মিঠুন দেবনাথকে মারধর করার খবর জানাজানি হলে বুধবার পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। সবাই একজোট হয়ে বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ২দিনের কর্মবিরতির প্রথম দিন পালন করে তারা। এ ঘটনায় আগেরদিন মঙ্গলবার মেহেন্দিগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি, অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে, তারা মানববন্ধন, বিক্ষোভসহ অন্য কর্মসূচি পালন করতে বাধ্য হবেন। কর্মবিরতিতে অংশ নেন পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী শুকলাল বিশ্বাস টিকাদানকারী সুপারভাইজার আনোয়ার হোসেনসহ অনেকে। প্রসঙ্গত গত মঙ্গলবার দুপুরে সাংসদ পংকজ নাথ’র অনুসারীরা পৌরসভার সামনে মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে মেয়র কামাল উদ্দিন খানকে উদ্দেশ্য করে গালাগালি করেন এক পর্যায় পৌর কর্মচারী মিঠুন দেবনাথকে সামনে পেয়ে মারধর করেন। এ ঘটনায় মিঠুন দেবনাথ বাদি হয়ে মেহেন্দিগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। এ বিষয়ে বাদী মিঠুন দেবনাথ বলেন, আমি অফিস থেকে লাঞ্চে যাওয়ার সময় স্থানীয় সোহরাব হোসেন সোহাগ এর নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী লগ্ন হেয়ার ড্রেসার সেলুনে ঢুকে আমাকে মারধর করে সাথে থাকা ২২ হাজার ২ শত ৬০ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ওই টাকা ছিলো পৌরসভার।
সুত্র জানায়, প্রতিপক্ষ শিবিরে ভয় ঢুকানোর জন্য মঙ্গলবার দুপুরে পাতারহাট বন্দরে মোটরসাইকেল মহড়া দেয় মেহেন্দিগঞ্জে পৌর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারন সম্পাদক রাতুল হায়দার চৌধুরীর দুই হাতের রগ কাটার আসামিরা। এরা জামিন লাভের পর গত সোমবার মেহেন্দিগঞ্জে আসলে তাদেরকে ফুলের মালা পড়িয়ে পাতারহাট বন্দরে মিছিলসহকারে প্রবেশ করেন সমর্থকরা। আসার পর থেকে বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রশস্র নিয়ে মহড়া দেয় এবং পৌর মেয়র’র একাধিক কর্মীকে মারধর করেন এবং একটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করেন। সর্বশেষ পৌরসভার সামনে মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে মেয়র কামাল উদ্দিন খানকে উদ্দেশ্য করে গালাগালি করেন এক পর্যায় পৌর কর্মচারী মিঠুন দেবনাথকে সামনে পেয়ে মারধর করেন এমপি পংকজ নাথ’র অনুসারীরা। সুত্র আরো জানায়, রাজনৈতিক আদিপত্ত্য বিরাজ করাকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি পৌর মেয়র উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদকসহ তার গ্রুপের যাকে সামনে পাবে তাকে কোপানোর নির্দেশ দেয় এমপি পংকজ নাথ।
ইতিমধ্যে ওই ভিডিও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর থেকে একের পর এক হামলা এবং ত্রাসসৃষ্টি করে যাচ্ছেন পংকজ নাথ এমপির অনুসারীরা। ত্রাসসৃষ্টিকারীরা হলেন, মেহেন্দিগঞ্জ পোস্ট মাষ্টারের উপর হামলা মামলার আসামি কাউন্সিলর সোহেল মোল্লা, ইউপি নির্বাচনে দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার অভিযোগে বহিষ্কৃত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সুমন ফরাজি, বিনা টেন্ডারে আদালত ভবন ভাঙ্গা মামলার আসামি কাউন্সিলর মনির জমাদ্দার, রগকাটা মামলার আসামি আওলাদ হোসেন আমুসহ আরও অনেকে। এদিকে সংখ্যালঘু পৌর কর্মচারীকে মারধর করার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনসহ পৌর মেয়র ও কর্মকর্তা কর্মচারীরা। উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক শংকর চন্দ্র দে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবী করেন। তিনি আরও বলেন, এর আগেও সংখ্যালঘু ইউপি সদস্য সঞ্জয় শীলকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হাত-পা ভেঙে দেয় স্থানীয় সাংসদ পংকজ নাথ’র নির্দেশে।
একের পর এক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে তার অনুসারীরা। কাউন্সিলর আব্দুল মোতালেব জাহাঙ্গীর বলেন, পংকজ নাথ এমপি পূর্বে হাওয়া ভবনের দালাল ছিলেন, তিনি হাওয়া ভবনের প্রীতি আজও ভুলতে পারেননি, তিনি অনেক বিএনপির নেতাকর্মীদের দলে প্রবেশ করিয়েছে, বিএনপিকে বিশেষ সুবিধা দিতেই স্থানীয় আ’লীগের উপর হামলা মামলা চালিয়ে যাচ্ছেন, তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য সমালোচনা করেন এবং পৌর কর্মচারীকে মারধর করান। তার কাছে কেউ নিরাপদ নয়। পৌর মেয়র কামাল উদ্দিন খান বলেন, এই হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি, তিনি আরও বলেন, সাংসদ পংকজ নাথ’র নির্দেশে তার সন্ত্রাসী বাহিনী ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে, ইতিমধ্যে এমপির বাহিনীর হামলায় আওয়ামী লীগের ৮-১০ জন নেতাকর্মী খুন হয়েছে, আমরা দলের হাই কমান্ডের কাছে এর বিচার দাবী করছি। জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাড মুনসুর আহমেদ বলেন, সাংসদ পংকজ নাথ হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জে রক্তের হলি খেলা খেলছে, খুন, জখম, হামলা-মামলা নির্যাতন, দুটি উপজেলাসহ ১২টি ইউপির নৌকা ডুবানো, অনিয়ম ও দুর্নীতি স্বর্গ রাজ্য কায়েম করে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে জানতে মেহেন্দিগঞ্জ থানার ওসিকে মুঠোফোনে সংযোগের চেষ্টা করা হলেও তা ব্যর্থ হয়।
Leave a Reply