হাওর অঞ্চলের কৃষকেরা আশঙ্কা করছেন, গত কয়েক দিন যেভাবে পানি বাড়ছে, এভাবে পানি বাড়তে থাকলে ২০১৭ সালের মতো অকাল বন্যার সৃষ্টি হবে। ঘরে তোলা যাবে না একমুঠো ফসলও।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র বলছে, ধনু নদের পানি এখনো বিপৎসীমার বাইরে। বাঁধের বাইরের অংশ প্লাবিত হয়েছে। ফসলরক্ষা বাঁধ রক্ষায় আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। আর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে বলা হচ্ছে, ১৫ দিনের মধ্যে হাওরের ধান পুরোদমে কাটা শুরু হবে। এ অবস্থায় পানি বাড়লে কৃষকদের দুশ্চিন্তা থাকা স্বাভাবিক।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নেত্রকোনার ১০টি উপজেলার মধ্যে মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরি হাওর উপজেলা। এই তিনটি উপজেলার মানুষ একমাত্র বোরো ফসলের ওপর নির্ভর করে সারা বছরে চলে। সন্তানদের লেখাপড়া, চিকিৎসা সবকিছু তাদের এই বোরো ফসলের ওপর নির্ভরশীল। জেলার মোট ১৩৪টি হাওরের মধ্যে খালিয়াজুরি উপজেলায় আছে ৮৯টি হাওর। বাকি হাওরগুলো অন্য দুই উপজেলায়। এসব হাওরে ৩০০ কিলোমিটার অস্থায়ী বাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ১৮১ কিলোমিটার খালিয়াজুরিতে, মোহনগঞ্জে ৬১ কিলোমিটার ও মদনে ৪৬ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার। এসব বাঁধের ওপর স্থানীয় কৃষকদের ৪১ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল নির্ভর করে।
পাউবো এ বছর ৩৩ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে এসব বাঁধ নির্মাণ করে। কিন্তু গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার ভারতের চেরাপঞ্জি এলাকায় ভারি বৃষ্টিপাত হয়। ফলে গত শুক্রবার থেকে রোববার সকাল নাগাদ ধনু নদে চার ফুট পানি বেড়েছে।
মোহনগঞ্জ উপজেলার নারাইচ গ্রামের কৃষক স্বপন সরকার বলেন, ‘আমি প্রায় ১৫ আড়া জমিতে বোরো ধান লাগিয়েছি। এরই মধ্যে ২৮ ধানে কালছে চিটা পড়ে মুকুল নষ্ট হয়ে পড়েছে। এবার শুনছি ধনু নদীর পানিও বাড়ছে। এরই মধ্যে নাকি খালিয়াজুরি এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে ডিঙ্গাপোতা হাওরের এক মুঠো ধানও ঘরে তোলা সম্ভব না।’
মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী গ্রামের কৃষক দেবেশ সরকার বলেন, ‘২০১৭ সালের অকাল বন্যার পর ধান ভালো হওয়ায় এবার আমি ১৮ কাটা খেতে ১ হাজার ৩০০ টাকা ধরে পত্তন নিয়েছি। এরই মধ্যে ২৮ ধান চিটায় নষ্ট হয়ে গেছে। পানি বাড়তে থাকলে অন্য জাতের ধানও ঘরে তোলা সম্ভব নয়।’
খালিয়াজুরি উপজেলার নগড় ইউনিয়নের শিক্ষক প্রাণেশ সামন্ত বলেন, ‘আমাদের সবকিছু ধানের ওপর নির্ভরশীল। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি গ্রামের বেড়িবাঁধের বাইরের অংশ তলিয়ে গেছে। তবে এখনো ফসল রক্ষা বাঁধ ভাঙেনি। তবে পানি এভাবে বাড়তে থাকলে বাঁধ ভেঙে যেতে পারে এবং সমস্ত হাওরের ধান পানির নিচে তলিয়ে যাবে।’
এ বিষয়ে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত বলেন, ‘ধনু নদের পানি এখনো বিপৎসীমার বাইরে আছে। বাঁধের বাইরের অংশ প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনকে নিয়ে আমরা ওই এলাকায় অবস্থান করছি। ফসল রক্ষা বাঁধ রক্ষায় আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে।’
নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক এফ এম মোবারক আলী বলেন, ‘আগামী ১৫ দিনের মধ্যে হাওরের ধান পুরোদমে কাটা শুরু হবে। গতকাল কৃষকদের কাছে শুনেছি, বোরো ২৮ ধানে চিটা পড়েছে। এটা সরেজমিনে দেখে বুঝা যাবে। এখন আগাম বন্যা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
Leave a Reply