তিনি (চেয়ারম্যান) উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সাংসদ আ.স.ম ফিরোজের ভাতিজা। আলকাচ মোল্লা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এ কারণে চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে তাকে।
উপজেলা ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নে ২০১৪ সাল থেকে কোনো খাস জমি ডিসিআর দেওয়া হচ্ছে না।
বরিশাল ডিয়ারা সেটেলমেন্ট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে,বর্তমানে চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নে ৪৫৭ একর ৩০ শতাংশ জমি খাস রয়েছে। এর মধ্যে হালোট রয়েছে ৬ একর ২২ শতাংশ , খাল রয়েছে ৫৪ একর ৪৫ শতাংশ ও নদী রয়েছে ১১৫ একর ৯৮ শতাংশ (চর জেগে উঠলেও চাষাবাদের যোগ্য না)।
সরেজমিনে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের মানুষ চেয়ারম্যান ও তাঁর নেতা-কর্মীদের কাছে জিম্মি। তাঁর কথার বাহিরে চলার কোনো সুযোগ নাই। সরকারি খাস জমি, খাল ও নদী সব-ই তাঁর ও তাঁর লোকজনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা অভিন্নভাবে বলেন,‘ আলকাচ মোল্লা বহিস্কৃত নেতা হলেও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাঁর কাছে অসহায়। কারণ তিনি স্থানীয় সাংসদ আ.স.ম ফিরোজের ভাতিজা। তাই তাঁর বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পাচ্ছেন না।’
মো. ফারুক মাঝি নামে এক ব্যক্তি বলেন, তাঁর বাড়ি রাঙ্গাবালী উপজেরার চরযমুনা গ্রামে। দুই-তিন বছর ধরে তিনি চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নে তরমুজ চাষ করেন। এ বছর চর নিমদী ও রায় সাহেব এলাকায় মোট ১৮০ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। এর মধ্যে চর নিমদীর ৩০ একর সরকারি খাস জমি রয়েছে। ওই ৩০ একর জমি বাবদ একর প্রতি ১০ হাজার টাকা করে চেয়ারম্যান আলকাচ মোল্লাকে দিয়েছেন।
চর রায়সাহেব গুচ্ছ গ্রামের পূর্ব পাশে ৮০ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার নুরাবাদ গ্রামের মো. মিজানুর রহমান হাওলাদার। গত বছরের নভেম্বরের শেষ দিকে চার মাসের জন্য প্রতি একর জমি বাবদ ১০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই ৮০ এককের মধ্যে ১৪ একর খাস জমি রয়েছে। তবে এ বিষয়ে মিজানুর রহমান কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,এর মধ্যে ৬ একরের টাকা নিয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. বাবুল হাওলাদার ও ৮ একরের টাকা নিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান আলকাচ মোল্লা।
চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল বশার মৃধার মাধ্যমে চেয়ারম্যান আলকাচ মোল্লা চর রায়সাহেব গুচ্ছগ্রামের উত্তর-পূর্ব ও পশ্চিম পাশে, জোড়খালের পূর্বপাশে এবং কারেন্টের খালের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে সরকারি ১ নম্বর খাস খতিয়ানের প্রায় ৭০ একর জমি দখলে নিয়ে চাষাবাদ ও বেচাকেনা করেন।
ইউপি সদস্য আবুল বশার বলেন,‘এতো খাস জমি হবে না। অনেকে খাস জমি রেকর্ড করে নিয়েছেন। কিছু জমি আছে যা গরীবদের মধ্যে বন্টন করে দেওয়া হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ নেতা বাবুল হাওলাদার বলেন,‘যাঁরা খাস জমি ডিসিআর নিয়েছেন। তাঁরাই তরমুজ চাষীদের কাছে জমি বিক্রি করেছেন। তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত না বলে দাবি করেন।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবলীগ নেতা বলেন,‘আলকাচ মোল্লা আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত নেতা হলেও স্থানীয় সাংসদ আ.স.ম ফিরোজের ভাতিজা হওয়ার সুবাধে তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের মানুষের নাই। আলকাচ মোল্লা নিজেকে চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের সরকার মনে করেন। তাই তিনি ও তাঁর লোকজন চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের প্রায় আড়াইশ একর খাস জমি দখলে রেখে চাষাবাদ ও বেচা-কেনা করেন।’
অপরদিকে চর রায়সাহেবের কারেন্টের খাল, হুটখেতের খাল, ঘোসের খাল ও জোড়খাল এই চারটি খাল বাধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন চেয়ারম্যান ও তাঁর লোকজন। এতে কৃষক ও জেলেরা ওই খাল দিয়ে যাতায়াত করতে পারছেন না, ভোগান্তিত পড়তে হচ্ছে সুবিধাভোগিদের। এমনকি চর রায়সাহেব গুচ্ছ গ্রামের বিশাল পুকুর দখলে রেখেছেন চেয়ারম্যান ও তাঁর লোকজনেরা। এদিকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ ঘেরের খালটির আলতাফ মিয়ার ঘের-সংলগ্ন উত্তর-পূর্ব পাশে চেয়ারম্যান আলকাচ মোল্লা বাধ দেওয়ায় খালটি ভরাট হয়ে যাচ্ছে। খালটি দিয়ে কয়েশ একর জমির ফসল আনা-নেওয়া করতেন কৃষকেরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বলেন,‘সত্য কথা বললে গুচ্ছগ্রামে কেউ থাকতে পারবে না। কিছুদিন আগে চেয়ারম্যান সাহেব ও তাঁর লোকজনেরা পুকুর সেচ করে মাছ ধরে নিয়ে গেছে। তাঁদেরকে (গুচ্ছ গ্রামের বাসিন্দা) খাওয়ার মত মাছও দেয়নি।’
চর ব্যারেট ও চরমিয়াজানে প্রায় ৫০ একর জমি দখলে রেখে বেচা-কেনা করেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. বাবুল হাওলাদার ও চার নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ও একই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. জসিম উদ্দিন। এরা সবাই চেয়ারম্যান আলকাচের খুবই বিশ্বস্ত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত।
এভাবেই চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গার ১ নম্বর খাস খতিয়ানের ২৮৬ একর সরকারি খাস জমি দখলে রেখেছেন চেয়ারম্যান ও তাঁর লোকজনেরা।
এ বিষয়ে চন্দ্রদ্বীপ ইউপি চেয়ারম্যন, এনামুল হক আলকাচ মোল্লা বলেন, ওই ইউনিয়নে কিছু খাস জমি ছিলো। যার বেশির ভাগই নদিতে ভেঙ্গে গেছে। যেটুকু বাকি াাছে তা নাজিরপুর,মমিনপুর,এলাকার ভ’মিহীন কৃষকেরা চাষাবাদ করে। আর কিছু জমিতে স্থানীয় ভূমিহনিরা ঘর তুলে বসবাস করে। আমার বিরুদ্ধে খাস জমি দখলে রেখে বিক্রির অভিযোগ সত্য নয়। আর এ ঘটনার সাথে তার কোন নেতাকর্মী জড়িত নয় বলে তিনি দাবি করেন। উপজেলা নির্বাহি অফিসার (ইউএনও) মোঃ আল-আমিন বলেন, সরকারি জমি দখলের বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
Leave a Reply