জন্মের ছয়মাসে টাইফয়েডে আক্রান্ত হওয়ায় অচল হয়ে পড়ে দু’পা ও হাত। এছাড়া সেলিবারি পালস ডিসঅর্ডারের কারণে হাতে নেই বল। যার ফলে রাইটিং অ্যাসিস্ট্যান্ট ছাড়া পরীক্ষা দিতে অক্ষম সাইদুর। প্রতিষ্ঠানগুলো অ্যাসিস্ট্যান্ট না দেয়ায় চাকরিতে আবেদন পর্যন্তই সীমাবদ্ধ সাইদুরের স্বপ্ন। রাইটিং অ্যাসিস্ট্যান্ট না দেয়ায় এবং জুমেও ইন্টারভিউ নেয়ার ব্যবস্থা না থাকায় চাকরির বাজারে অচল সাইদুরের সকল যোগ্যতা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে থাকাকালীন বাবাকে হারান তিনি। বাবা মো. জিল্লুর রহমান মোল্লা ছিলেন শিক্ষক। বাবার পেনশনের টাকায় চলে সাইদুরের পড়ালেখার খরচ এবং ভরণপোষণ। কিন্তু সীমিত পেনশনের টাকায় ৩ ভাই ও ২ বোনের ভরণপোষণ মেটানো সম্ভব হচ্ছে না পরিবারের। উচ্চ শিক্ষার পর এখন আর পরিবারের বোঝা হয়ে থাকতে পারছে না সাইদুর। অক্ষমতার জন্য হচ্ছে না চাকরি। যার ফলে হতাশাগ্রস্ত সাইদুরের জীবন।
সাইদুরের বাড়ি কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলায়। রিয়াজ উদ্দিন পাইলট হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং সুজাত আলী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ভর্তি হন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগে। স্নাতকে ৩.১৪ এবং স্নাতকোত্তরে ৩.২১ নিয়ে সফলতার সাথে শেষ করেন বিশ্ববিদ্যালয় জীবন।
পড়ালেখার পাশাপাশি আরও অনেক এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিসে নিজেকে করেছেন সমৃদ্ধ। ডেইলি এশিয়ান এইজ এবং বাংলাদেশ অবজারভারে প্রকাশিত হয়েছে তার লেখা ৪টি আর্টিকেল। এছাড়াও কুমিল্লা পলিটেকনিক থেকে কম্পিউটার কোর্স, বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্যকালীন এমবিএ কোর্স এবং আইইএলটিএস করেও নিজেকে করেছেন সমৃদ্ধ।
কিন্তু কি লাভ হয়েছে এতো কিছু করে? যেদেশে যোগ্যতার চেয়ে প্রতিবন্ধকতাকে মুখ্য হিসেবে দেখা হয়।
দুঃখ প্রকাশ করে সাইদুর রহমান বলেন, চাকরি হয় না কারণ সবাই ডিজেবিলিটি আগে দেখে। জুমে ইন্টারভিউ নিতে রাজি হয় না কোন প্রতিষ্ঠান। প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান গুলোতো সিভি খুলেও দেখে না। প্রাথমিক নিয়োগ পরীক্ষায় রাইটিং অ্যাসিস্ট্যান্ট দেয়ার কথা বললে ওরা বলে এভাবে পরীক্ষা দেয়ার কোনো নিয়ম নেই। তবে যদি এ ব্যাপারে পরীক্ষার জন্য কোন নীতিমালা হয় তাহলে আপনাকে জানানো হবে। আমার চাকরি লাগবেই পরিবারের বোঝা হয়ে আর থাকতে পারছি না। ফ্রীল্যান্সিং তো পার্মানেন্ট না তাই একটা সরকারি চাকরি দরকার। একটি প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় দরকার।
Leave a Reply