মঙ্গলবার (২২ মার্চ) দুপুরে কলাপাড়া পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। দুপুরে তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করলে বিচারক কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলো, মাসুম (২৩), গোপাল চন্দ্র মিস্ত্রী (২২) ও শাকিল মিয়া (২৫)। তাদের সবার বাড়ি কলাপাড়া পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায়। এ ঘটনায় মঙ্গলবার সকালে ওই শিক্ষার্থীর মা বাদী হয়ে কলাপাড়া থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।
মামলার বরাতে কলাপাড়া থানার ওসি মো. জসীম জানান, কলাপাড়ার বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া ওই শিক্ষার্থী তার বাবা, মা ও দুই ভাই-বোনের সাথে পৌর শহরের মাদ্রাসা সড়কে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ওই শিক্ষার্থী কলাপাড়া হাসপাতালে করোনার টিকা দিতে গেলে উপজেলার মকিমপুর গ্রামের সেরাজল মোল্লার ছেলে মাসুমের মাথে পরিচয় হয়। পেশায় মোটরসাইকেল চালক হলেও মাসুম নিজেকে হাসপাতালে চাকরি করে বলে শিক্ষার্থীকে পরিচয় দেয়।
এ পরিচয়ের সূত্রধরে স্কুলে আসা যাওয়ার পথে মাসুম ওই শিক্ষার্থীর সাথে দেখা করতো। একপর্যায়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে।
গত ৮ মার্চ বিকালে পরিবারের অজান্তে ওই শিক্ষার্থীকে মোটরসাইকেলে তুলে ঘুরতে নিয়ে যায় মাসুম। রাত ৯টার দিকে মাসুমের সহযোগী গোপালের সহায়তায় ইটবাড়িয়া গ্রামের একটি বাড়ির ফসলের ক্ষেতে নিয়ে মাসুম ও শাকিল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করে।
এরপর শিক্ষার্থীকে বাসায় না পৌঁছে দিয়ে রাত ১১টার দিকে তাকে কলাপাড়া হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডের ২০৬ নং কক্ষে মাসুমের এক পরিচিত রোগীর কক্ষে নিয়ে যায়। হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় সবার অগোচরে ওই রাতে আবার কিশোরীকে সারারাত ধর্ষণ করে মাসুম।
পরদিন সকালে কিশোরীকে ওই কক্ষে রেখেই মাসুম চলে যায়। পরে ৯ মার্চ ওই শিক্ষার্থীর পরিবার অনেক খোঁজাখুঁজি করে তাকে কলাপাড়া হাসপাতালে অসুস্থ অবস্থায় পায়।
এই নিয়ে অভিযুক্তরা ভুক্তভোগীর পরিবারকে ভয়ভীতি দেখায়। ভয়ে তারা বিষয়টি কাউকে জানায়নি।
গত ১১ মার্চ দুপুরে ওই শিক্ষার্থী বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফেরার পথে ভয় দেখিয়ে মাসুম, শাকিল ও গোপাল তাকে উপজেলার পাখিমারা এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে তাকে আটকে রেখে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। মেয়েকে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করে পরিবার। এরপর সোমবার কলাপাড়া থানা পুলিশকে বিষয়টি জানায়। পুলিশ রাতেই পৌর শহরের রহমতপুর এলাকার একটি বাসা থেকে ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে।
ওসি মো. জসীম আরও জানান, শিক্ষার্থীর মায়ের মামলার প্রেক্ষিতে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার আসামিদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। ওই শিক্ষার্থীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পটুয়াখালী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে হাসপাতালে প্রসূতি ওয়ার্ডে নিয়ে বহিরাগত যুবক এক কিশোরীকে রাতভর ধর্ষণ করার বিষয়টি মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালের চিকিৎসকসহ কর্মচারীরা পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। কে, কিভাবে ওই মাসুমকে হাসপাতালে প্রবেশের সুযোগ করে দিয়েছে এ বিষয়টি কেউই অবগত না বলে জানান কর্তব্যরতরা।
এ ব্যাপারে কলাপাড়া হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. চিন্ময় হাওলাদার বলেন, পুলিশ তাদের এ বিষয়টি জানিয়েছে। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন।
Leave a Reply