নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারালো বাংলাদেশ। কথাটা শুনে কি একটু পুরোনো স্মৃতি নাড়া দিয়ে গেলো ক্রিকেট পাগল বাঙালি জাতির মনে? হ্যা, ২৩ বছরের পুরোনো এক স্মৃতি। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশের ছেলেরা প্রথম বিশ্বকাপেই হারিয়ে দিয়েছিলো তখনকার প্রবল পরাক্রমশালী ওয়াসিম-ওয়াকারদের পাকিস্তানকে। ২৩ বছর পর আরেক বিশ্বকাপে বাংলার নারীরা নিজেদের প্রথম জয় তুলে নিলো সেই পাকিস্তানের বিপক্ষেই।
হ্যামিল্টনের সেডন পার্কে এদিন ২৩৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করা পাকিস্তানকে বাংলাদেশ থামিয়ে দেয় ২২৫ রানেই। টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৩৪ রান করেছিলো টাইগ্রেসরা। ফারাজানা হক, নিগার সুলতানা ও শারমিন আক্তারের ব্যাটে চড়ে ভালো সংগ্রহের পর বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম জয়ের স্বপ্নই দেখছিলো বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিংয়ে ফাহিমা, রুমানা, জাহানারারা মিলে যেন সেই স্বপ্নকেই সত্যি করলেন।
পাকিস্তানকে যেনো বলে কয়ে হারানোর মতোই হারালো বাংলার মেয়েরা। নিজেদের প্রথম জয়ের স্বপ্নটা যে আগের দিনই দেখিয়েছিলেন টাইগ্রেস অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়কের দেখানো সেই স্বপ্নকে সত্যি করতেই যেন মাঠে নেমেছিলেন টাইগ্রেসরা। ম্যাচের শুরু থেকেই লাল-সবুজের বাঘিনীরা যেন খেললেন ইতিহাসের পাতায় নিজেদের নাম লেখাতেই।
আগের দুই ম্যাচের মতোই এই ম্যাচেও বেশ ভালো শুরু করেন দুই ওপেনার শামিমা সুলতানা আর শারমিন আক্তার ৩৭ রানের জুটি গড়ার পর নবম ওভারে শামিমা আউট হন ব্যক্তিগত ৩০ বলে ১৭ রান করে।
অন্যপ্রান্তে দারুণ খেলতে থাকা শারমিন হাফ সেঞ্চুরি ছুঁতে ছুতেও ৫৫ বলে ৪৪ রান করে আউট হন। এরপর ফারজানা হক আর নিগার সুলতানা মিলে বেশ ভালোভাবেই তেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন দলের রানের চাকা।
দুজন মিলে ৯৭ রানের জুটি গড়ার পর ৬৪ বলে ৪৬ রান করে আউট হন অধিনায়ক নিগার সুলতানা। এদিকে ফারজানা নিজের হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে ১১৫ বলে ৭১ রান করে সাজঘরে ফেরেন। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৭ উইকেটে ২৩৪ রান করে বাংলাদেশ।
২৩৫ রানের লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা দুর্দান্ত হয়েছিলো পাকিস্তানের। কোনো উইকেট না হারিয়েই পাকিস্তান তুলে ফেলে ৯১ রান। শেষমেশ ৬৭ বলে ৪৩ রান করা নাহিদা খানকে আউট করে পাকিস্তানের ওপেনিং জুটি ভাঙেন রুমানা আহমেদ।
এরপর বাংলাদেশকে ভয় ধরিয়েছেন আরেক ওপেনার সিদরা আমিন আর পাক অধিনায়ক বিসমাহ মারুফ। দুজন মিলে করেন ৬৪ রানের জুটি। দলীয় ১৫৫ রানের মাথায় ৪৮ বলে ৩১ রান করা বিসমাহ আউট হলেও ক্রিজের এক প্রান্তে বাংলাদেশের বোলারদের চোখ রাঙ্গানি দেয়ার কাজটা বেশ ভালোভাবেই করে যাচ্ছিলেন সিদরা আমিন।
তবে বিশমাহ আউট হওয়ার পর আর কাউকে যোগ্য সঙ্গী হিসেবে পাননি সিদরা। এর ভেতর বাংলাদেশের ফাহিমা খাতুনের এক ওভারে তিন উইকেট তুলে নেয়ার পরই ম্যাচ চলে আসে বাংলাদেশের দিকে। ১৫৫ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারানো পাকিস্তান চোখের পলকে দেখতে দেখতেই হয়ে যায় ৭ উইকেটে ১৮৮ রান। ১৮৩ থেকে ১৮৮, এই ৫ রানের রানের ব্যবধানেই তারা হারিয়ে ফেলে ৫ উইকেট।
তবে তখন বাংলাদেশের প্রথম জয়ের মাঝে বাঁধা হয়ে ক্রিজে দাঁড়িয়ে ছিলেন সেই সিদরা আমিন। অন্যদের আসা যাওয়ার মিছিলের মধ্যেই নিজের সেঞ্চুরি তুলে নেন এই পাক ওপেনার। শেষ পর্যন্ত ৮ চারে ১৪০ বলে ১০৪ রান করে সিদরা যখন রান আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন পাকিস্তানের জয়ের জন্য তখনও প্রয়োজন ছিলো ১৩ বলে ২০ রানের।
পরের ওই ১৩ বল থেকে পাকিস্তান তুলতে পারে মাত্র ১০ রান। নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে পাকিস্তানের স্কোর দাঁড়ায় ৯ উইকেটে ২২৫ রান। ৯ রানের ঐতিহাসিক জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলার বাঘিনীরা।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানকে ২৩৫ রানের লক্ষ্য দিলো টাইগ্রেসরা
৮ ওভারে ৩৮ রান দিয়ে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে জয় এনে দেয়ায় ম্যাচসেরার পুরষ্কার ওঠে ফাহিমা খাতুনের হাতে। এছাড়া ৭ ওভারে ২৯ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন রুমানা আহমেদ। জাহানারা আলম আর সালমা খাতুন নেন ১ টি করে উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৩৪/৭ (শামিমা ১৭, শারমিন ৪৪, ফারজানা ৭১, নিগার ৪৬, রুমানা ১৬, রিতু ১১, ফাহিমা ০, সালমা ১১*, নাহিদা ২*; ফাতিমা সানা ১০-০-৫৪-১, ডায়না ৫-১-৩২-০, নিদা ১০-০-৪৫-১, নাশরা ১০-০-৪১-৩, গুলাম ফাতিমা ৭-০-৩০-০, ওমাইমা ৮-১-৩১-১)।
পাকিস্তান: ৫০ ওভারে ২২৫/৯ (নাহিদা ৪৩, সিদরা আমিন ১০৪, বিসমাহ ৩১, ওমাইমা ১০, আলিয়া ০, ফাতিমা সানা ০, সিদরা নওয়াজ ১, ডায়না ১২, নাশরা ৯*, গুলাম ফাতিমা ৫*; জাহানারা ৪-০-২০-১, তৃষ্ণা ৪-০-১৯-০, সালমা ৯-০-২৯-১, নাহিদা ৯-০-৪৮-০, রুমানা ৭-০-২৯-২, রিতু মনি ৯-০-৪২-০, ফাহিমা ৮-০-৩৮-৩)।
Leave a Reply